TOP COMMENTERS

Search Any Post...

নামাজে হাত বাধা প্রশ্ন উত্তর পর্ব

নামাযে হাত বাঁধা ও নাভীর নিচে বাঁধা
মাওলানা মুহাম্মাদ যাকারিয়া আব্দুল্লাহ
প্রশ্ন : কিছুদিন আগে আমার এক বন্ধুর সাথে নামাযের নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা হচ্ছিল। তিনি বললেন, ‘নামাযে বুকের উপর হাত রাখা সুন্নাহ। হাদীস শরীফে এই নিয়মটিই আছে। অন্য কোনো নিয়ম নেই। সহীহ বুখারীতে সাহল ইবনে সাদ রা. থেকে বর্ণিত হাদীসে, সহীহ ইবনে খুযায়মায় ওয়াইল ইবনে হুজর রা. থেকে বর্ণিত হাদীসে এবং মুসনাদে আহমদে হুলব আতত্বয়ী রা. থেকে বর্ণিত হাদীসে বুকের উপর হাত বাঁধার কথা আছে। এছাড়া তাউস রাহ. থেকে একটি মুরসাল হাদীসে এবং হযরত আলী রা. থেকে সূরায়ে কাওসারের তাফসীরে নামাযে বুকের উপর হাত বাঁধার কথা বর্ণিত হয়েছে।
‘পক্ষান্তরে নাভীর নীচে হাত বাঁধার কোনো প্রমাণ সহীহ হাদীসে নেই। এ সম্পর্কে যত হাদীস ও আছার আছে সব জয়ীফ।’
আমার বন্ধুটি একজন আলেম। আমারও উলূমুল হাদীস বিষয়ে কিছু পড়াশোনা আছে। তার সাথে আলোচনার পর আমি বিষয়টির উপর কিছু পড়াশোনাও করেছি।
নামাযে হাত বাঁধার বিষয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ আলোচনা এবং উপরোক্ত বিষয়ে ইলমী সমাধান আপনাদের নিকট কামনা করছি। আল্লাহ তাআলা আপনাদের জাযায়ে খায়ের দান করুন।
রাইয়ান ইবনে লুৎফুর রহমান
পল্লবী, ঢাকা-১২১৬
উত্তর : নামাযে হাত বাঁধা সুন্নত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযে হাত বেঁধেছেন। তাঁর ডান হাত থাকত বাম হাতের কব্জির উপর। সাহাবায়ে কেরামকে এভাবেই নামায পড়ার আদেশ করা হত এবং তাঁরাও এভাবেই হাত বেঁধে নামায পড়তেন।
নামাযে হাত বাঁধা
হযরত ওয়াইল ইবনে হুজর রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকবীর দিয়ে দুই হাত তুললেন। রাবী বলেন, দুই কান বরাবর। এরপর পরিধানের চাদর গায়ে জড়িয়ে নিলেন, এরপর ডান হাত বাম হাতের উপর রাখলেন ...।
ﻋﻦ ﻭﺍﺋﻞ ﺑﻦ ﺣﺠﺮ : ﺃﻧﻪ ﺭﺃﻯ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺭﻓﻊ ﻳﺪﻳﻪ ﺣﻴﻦ ﺩﺧﻞ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻛﺒﺮ، ﻭﺻﻒ ﻫﻤﺎﻡ ﺣﻴﺎﻝ ﺃﺫﻳﻨﻪ، ﺛﻢ ﺍﻟﺘﺤﻒ ﺑﺜﻮﺑﻪ، ﺛﻢ ﻭﺿﻊ ﻳﺪﻩ ﺍﻟﻴﻤﻨﻰ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻴﺴﺮﻯ ...
-সহীহ মুসলিম ১/১৭৩
হযরত হুলব আতত্বয়ী রা. বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের ইমাম হতেন এবং তাঁর ডান হাত দিয়ে বাম হাত ধরতেন।
ﻛﺎﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﺆﻣﻨﺎ ﻓﻴﺄﺧﺬ ﺷﻤﺎﻟﻪ ﺑﻴﻤﻴﻨﻪ . ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ ﻭﻗﺎﻝ : ﺣﺪﻳﺚ ﺣﺴﻦ .
-জামে তিরমিযী ১/৩৪; ইবনে মাজাহ ৫৯
  হযরত সাহল ইবনে সাদ রা. বলেন, লোকদেরকে আদেশ করা হত, পুরুষ যেন নামাযে ডান হাত বাম বাহুর উপর রাখে।’-সহীহ বুখারী ১/১০৪
ﻛﺎﻥ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻳﺆﻣﺮﻭﻥ ﺃﻥ ﻳﻀﻊ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﺍﻟﻴﺪ ﺍﻟﻴﻤﻨﻰ ﻋﻠﻰ ﺫﺭﺍﻋﻪ ﺍﻟﻴﺴﺮﻯ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ . ﻗﺎﻝ ﺃﺑﻮ ﺣﺎﺗﻢ : ﻻ ﺃﻋﻠﻤﻪ ﺇﻻ ﻳﻨﻤﻰ ﺫﻟﻚ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ .
হযরত জাবির রা. বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন নামাযরত ব্যক্তির নিকট দিয়ে গমন করছিলেন, যিনি ডান হাতের উপর বাম হাত রেখে নামায পড়ছিলেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার হাত খুলে ডান হাত বাম হাতের উপর রাখলেন।-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১৫০৯০
ﻣﺮ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺑﺮﺟﻞ ﻭﻫﻮ ﻳﺼﻠﻲ ﻗﺪ ﻭﺿﻊ ﻳﺪﻩ ﺍﻟﻴﺴﺮﻯ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻴﻤﻨﻰ ﻓﺎﻧﺘﺰﻋﻬﺎ ﻭﻭﺿﻊ ﺍﻟﻴﻤﻨﻰ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻴﺴﺮﻯ . ﻗﺎﻝ ﺍﻟﻬﻴﺜﻤﻲ ﻓﻲ ﻣﺠﻤﻊ ﺍﻟﺰﻭﺍﺋﺪ
٢ / ٢۷٥ : ﺭﺟﺎﻟﻪ ﺭﺟﺎﻝ ﺍﻟﺼﺤﻴﺢ .
আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. বলেন, আমি আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি,
‘আমরা নবীগণ আদিষ্ট হয়েছি দ্রুত (সময় হওয়ামাত্র) ইফতার করতে, বিলম্বে (সময়ের শেষের দিকে) সাহরী খেতে এবং নামাযে ডান হাত বাম হাতের উপর রাখতে।’
ﺳﻤﻌﺖ ﻧﺒﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﻘﻮﻝ : ﺇﻧﺎ ﻣﻌﺎﺷﺮ ﺍﻷﻧﺒﻴﺎﺀ ﺃﻣﺮﻧﺎ ﺑﺘﻌﺠﻴﻞ ﻓﻄﺮﻧﺎ ﻭﺗﺄﺧﻴﺮ ﺳﺤﻮﺭﻧﺎ ﻭﺃﻥ ﻧﻀﻊ ﺃﻳﻤﺎﻧﻨﺎ ﻋﻠﻰ ﺷﻤﺎﺋﻠﻨﺎ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ . ﻗﺎﻝ ﺍﻟﻬﻴﺜﻤﻲ
ﻓﻲ ﻣﺠﻤﻊ ﺍﻟﺰﻭﺍﺋﺪ ١ / ٢۷٥ : ﺭﺟﺎﻟﻪ ﺭﺟﺎﻝ ﺍﻟﺼﺤﻴﺢ.
-সহীহ ইবনে হিববান ৩/১০১, হাদীস : ১৭৬৬; আলমুজামুল কাবীর ১১/১৫৯, হাদীস : ১১৪৮৫
হারিছ ইবনে গুতাইফ রা. বলেন,
‘আমি এটা ভুলিনি যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বাম হাতের উপর ডান হাত রাখতে দেখেছি, অর্থাৎ নামাযে।’
ﻣﻬﻤﺎ ﺭﺃﻳﺖ ﻧﺴﻴﺖ ﻟﻢ ﺃﻧﺲ ﺃﻧﻲ ﺭﺃﻳﺖ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻭﺿﻊ ﻳﺪﻩ ﺍﻟﻴﻤﻨﻰ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻴﺴﺮﻯ ﻳﻌﻨﻲ : ﻓﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ .
-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৩৯৫৬; মুসনাদে আহমদ ৪/১০৫, হাদীস : ১৬৯৬৭-৬৮, ২২৪৯৭
মোটকথা, নামাযে হাত বেঁধে দাঁড়ানো সুন্নাহ। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনেক সাহাবী তা বর্ণনা করেছেন। এ কারণে নামাযে হাত ছেড়ে দাঁড়ানো, যা মালেকী মাযহাবের কোনো কোনো ইমাম গ্রহণ করেছেন, মূল সুন্নাহ নয়।
মালেকী মাযহাবের প্রাচীন গ্রন্থ ‘‘আলমুদাওয়ানাতুল কুবরা’’য় আছে, আবদুর রহমান ইবনুল কাসিম রাহ. ইমাম মালিক রাহ. থেকে নামাযে ডান হাত বাম হাতের উপর রাখার বিষয়ে বর্ণনা করেছেন যে, ‘ফরয নামাযে এই নিয়ম আমার জানা নেই এবং তিনি তা অপছন্দ করতেন। তবে নফল নামাযে কিয়াম যখন দীর্ঘ হয় তখন হাত বাঁধতে বাঁধা নেই।’
ﻗﺎﻝ : ﻭﻗﺎﻝ ﻣﺎﻟﻚ ﻓﻲ ﻭﺿﻊ ﺍﻟﻴﻤﻨﻰ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻴﺴﺮﻯ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻗﺎﻝ : ﻻ ﺃﻋﺮﻑ ﺫﻟﻚ ﻓﻲ ﺍﻟﻔﺮﻳﻀﺔ ﻭﻛﺎﻥ ﻳﻜﺮﻫﻪ، ﻭﻟﻜﻦ ﻓﻲ ﺍﻟﻨﻮﺍﻓﻞ ﺇﺫﺍ ﻃﺎﻝ ﺍﻟﻘﻴﺎﻡ ﻓﻼ ﺑﺄﺱ ﺑﺬﻟﻚ ﻳﻌﻴﻦ ﺑﻪ ﻧﻔﺴﻪ .
কিন্তু এ রেওয়ায়েত উল্লেখ করার পর সুহনূন (গ্রন্থকার) বলেন,
‘আবদুল্লাহ ইবনে ওয়াহব রাহ. সুফিয়ান ছাওরী রাহ.-এর সূত্রে একাধিক সাহাবী থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তাঁরা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নামাযে ডান হাত বাম হাতের উপর রাখতে দেখেছেন।
ﻗﺎﻝ ﺳﺤﻨﻮﻥ ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻭﻫﺐ ﻋﻦ ﺳﻔﻴﺎﻥ ﺍﻟﺜﻮﺭﻱ ﻋﻦ ﻏﻴﺮ ﻭﺍﺣﺪ ﻣﻦ ﺃﺻﺤﺎﺏ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺃﻧﻬﻢ ﺭﺃﻭﺍ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻭﺍﺿﻌﺎ ﻳﺪﻩ ﺍﻟﻴﻤﻨﻰ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻴﺴﺮﻯ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ .
-আলমুদাওয়ানাহ ১/৭৬
ইমাম মালেক রাহ.-এর অন্য অনেক শাগরিদ তাঁর থেকে হাত বাঁধার নিয়ম বর্ণনা করেছেন। মালেকী মাযহাবের বিখ্যাত মনীষীদের অনেকেই তাঁর এই রেওয়ায়েতকেই বিশুদ্ধ ও অগ্রগণ্য বলে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।
ইমাম মালিক রাহ.-এর
‘আলমুয়াত্তা’য় এ নিয়মই বর্ণিত হয়েছে।
‘আততাজ ওয়াল ইকলীল লিমুখতাসারিল খালীল’ কিতাবে ইমাম মালেক রাহ. থেকে হাত বাঁধার নিয়ম বর্ণনা করার পর ইবনে রুশদ মালেকীর বক্তব্য উল্লেখ করা হয়েছে যে, ‘এটিই অগ্রগণ্য ও শক্তিশালী। কারণ প্রথম যুগে মানুষকে এরই আদেশ করা হত।’
ﺍﺑﻦ ﺭﺷﺪ : ﻭﻫﺬﺍ ﻫﻮ ﺍﻷﻇﻬﺮ، ﻷﻥ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻛﺎﻧﻮﺍ ﻳﺆﻣﺮﻭﻥ ﺑﻪ ﻓﻲ ﺍﻟﺰﻣﺎﻥ ﺍﻷﻭﻝ .
তদ্রূপ কাযী ইয়ায মালেকী রাহ. থেকে বর্ণনা করা হয়েছে যে, আমাদের শায়খগণ ডান হাতের পাতা বাম হাতের কব্জির উপর মুঠ করার নিয়মই গ্রহণ করেছেন।’
ﻋﻴﺎﺽ : ﺍﺧﺘﺎﺭ ﺷﻴﻮﺧﻨﺎ ﻗﺒﺾ ﻛﻒ ﺍﻟﻴﻤﻨﻰ ﻋﻠﻰ ﺭﺳﻎ ﺍﻟﻴﺴﺮﻯ .
-আততাজ ওয়াল ইকলীল, আবু আবদিল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনে ইউসুফ আলমাওওয়াক আলমালেকী (৮৯৭ হি.) মাওয়াহিবুল জালীলের সাথে মুদ্রিত ২/২৪০
ইমাম কুরতুবী মালেকী রাহ.ও (৬৭১ হি.) হাত বাঁধার রেওয়ায়েতকে অগ্রগণ্য সাব্যস্ত করে বলেন,
‘এটিই সঠিক। কারণ হযরত ওয়াইল রা. ও অন্যান্য সাহাবী বর্ণনা করেছেন যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ডান হাত বাম হাতের উপর রেখেছেন।’ -আলজামি লিআহকামিল কুরআনিল কারীম ২০/১৫০ এ প্রসঙ্গে মালেকী মাযহাবের বিখ্যাত মনীষী ইমাম ইবনে আবদুল বার রাহ. (৪৬৩ হি.) শক্তিশালী আলোচনা করেছেন। তিনি হাত বাঁধার নিয়মকে শুধু অগ্রাধিকারই দেননি; বরং এর বিপরীতে ইমাম মালেক রাহ. থেকে যা কিছু বর্ণনা করা হয় তা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় খন্ডনও করেছেন। তাঁর আলোচনার কিছু অংশ মূল পাঠসহ তুলে দেওয়া হল।
তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে (নামাযে ডান হাত বাম হাতের উপর রাখা) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ভিন্ন কিছু বর্ণিত হয়নি এবং কোনো সাহাবী এ নিয়মের বিরোধিতা করেছেন বলে আমাদের জানা নেই। শুধু আবদুল্লাহ ইবনুয যুবায়ের রা. সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়, তিনি নামাযে হাত ছেড়ে রাখতেন, তবে এর বিপরীত কথাও তাঁর থেকে বর্ণিত হয়েছে। ইতিপূর্বে আমরা তাঁর বক্তব্য উল্লেখ করেছি যে, ‘সুন্নাহ হচ্ছে ডান হাত বাম হাতের উপর রাখা।’
জুমহূর তাবেয়ীন ও মুসলিম উম্মাহর আহলুর রায় ও আহলুল আছর উভয় ঘরানার অধিকাংশ ফকীহ এই নিয়মই গ্রহণ করেছেন।’
ﻟﻢ ﺗﺨﺘﻠﻒ ﺍﻵﺛﺎﺭ ﻋﻦ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓﻲ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﺒﺎﺏ ﻭﻻ ﺃﻋﻠﻢ ﻋﻦ ﺃﺣﺪ ﻣﻦ ﺍﻟﺼﺤﺎﺑﺔ ﻓﻲ ﺫﻟﻚ ﺧﻼﻓﺎ ﺍﻻﺷﻲﺀ ﺭﻭﻱ ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﺍﻟﺰﺑﻴﺮ ﺃﻧﻪ ﻛﺎﻥ ﻳﺮﺳﻞ ﻳﺪﻳﻪ ﺇﺫﺍ ﺻﻠﻰ ﻭﻗﺪ ﺭﻭﻯ ﻋﻨﻪ ﺧﻼﻓﻪ ﻣﻤﺎ ﻗﺪﻣﻨﺎ ﺫﻛﺮﻩ ﻋﻨﻪ ﻭﺫﻟﻚ ﻗﻮﻟﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ‏( ﻛﺬﺍ ‏) ﻭﺿﻊ ﺍﻟﻴﻤﻴﻦ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺸﻤﺎﻝ ﻣﻦ ﺍﻟﺴﻨﺔ، ﻭﻋﻠﻰ ﻫﺬﺍ ﺟﻤﻬﻮﺭ ﺍﻟﺘﺎﺑﻌﻴﻦ ﻭﺃﻛﺜﺮ ﻓﻘﻬﺎﺀ ﺍﻟﻤﺴﻠﻤﻴﻦ ﻣﻦ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺮﺃﻱ ﻭﺍﻷﺛﺮ .
-আততামহীদ ২০/৭৪-৭৫
তিনি আরো বলেন, ‘ইবনুল কাসিম ছাড়া অন্যরা ইমাম মালেক রাহ. থেকে বর্ণনা করেছেন যে, ফরয-নফল কোনো নামাযেই হাত বাঁধতে বাধা নেই। আর এটিই তাঁরা মদীনাবাসী শাগরিদদের বর্ণনা।’
... ﻭﻗﺎﻝ ﻋﻨﻪ ‏( ﺃﻱ ﻋﻦ ﻣﺎﻟﻚ ‏) ﻏﻴﺮ ﺍﺑﻦ ﺍﻟﻘﺎﺳﻢ : ﻻ ﺑﺄﺱ ﺑﺬﻟﻚ ﻓﻲ ﺍﻟﻔﺮﻳﻀﺔ ﻭﺍﻟﻨﺎﻓﻠﺔ، ﻭﻫﻲ ﺭﻭﺍﻳﺔ ﺍﻟﻤﺪﻧﻴﻴﻦ ﻋﻨﻪ .
-প্রাগুক্ত
এরপর কোনো কোনো তাবেয়ী থেকে নামাযে হাত ছেড়ে রাখার যে বর্ণনা পাওয়া যায় সে সম্পর্কে দীর্ঘ আলোচনার পর তিনি বলেন, ‘এই হচ্ছে কতিপয় তাবেয়ীর (আমলের) কিছু বিবরণ। তবে তা (আলোচিত সুন্নাহর) খিলাফ ও বিরোধিতা নয়। কারণ তাদের কেউ (হাত বাঁধা) অপছন্দ করতেন এমনটা পাওয়া যায় না। আর পাওয়া গেলেও তা দলীল হিসেবে গ্রহণ করা যেত না। কারণ সুন্নাহর অনুসারীদের জন্য সুন্নাহই হচ্ছে দলীল। আর যারা এর বিরোধিতা করে তাদের বিরুদ্ধেও দলীল হচ্ছে সুন্নাহ, বিশেষত যে সুন্নাহয় কোনো সাহাবীর ভিন্নমত নেই।
ﻓﻬﺬﺍ ﻣﺎ ﺭﻭﻱ ﻋﻦ ﺑﻌﺾ ﺍﻟﺘﺎﺑﻌﻴﻦ ﻓﻲ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﺒﺎﺏ ﻭﻟﻴﺲ ﺑﺨﻼﻑ، ﻷﻧﻪ ﻻ ﻳﺜﺒﺖ ﻋﻦ ﻭﺍﺣﺪ ﻣﻨﻬﻢ ﻛﺮﺍﻫﻴﺔ، ﻭﻟﻮ ﺛﺒﺖ ﺫﻟﻚ ﻣﺎ ﻛﺎﻧﺖ ﻓﻴﻪ ﺣﺠﺔ، ﻷﻥ ﺍﻟﺤﺠﺔ ﻓﻲ ﺍﻟﺴﻨﺔ ﻟﻤﻦ ﺍﺗﺒﻌﻬﺎ، ﻭﻣﻦ ﺧﺎﻟﻔﻬﺎ ﻓﻬﻮ ﻣﺤﺠﻮﺝ ﺑﻬﺎ، ﻭﻻ ﺳﻴﻤﺎ ﺳﻨﺔ ﻟﻢ ﻳﺜﺒﺖ ﻋﻦ ﻭﺍﺣﺪ ﻣﻦ ﺍﻟﺼﺤﺎﺑﺔ ﺧﻼﻓﻬﺎ.
-প্রাগুক্ত ২০/৭৬
তিনি আরো বলেন, ‘(হাত বাধার ক্ষেত্রে) ফরয-নফলে পার্থক্য করার কোনো যুক্তি নেই, যদিও কেউ বলে থাকেন যে, হাত বাঁধার নিয়মটি নফল নামাযের ক্ষেত্রে, ফরযের ক্ষেত্রে নয়। কারণ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাধারণত নফল নামায ঘরে আদায় করতেন। সুতরাং এটা যদি তাঁর ঘরের নামাযের নিয়ম হত তাহলে তা বর্ণনা করতেন তাঁর স্ত্রীগণ। কিন্তু তাঁরা এ বিষয়ে কিছুই বর্ণনা করেননি। যাঁরা বর্ণনা করেছেন যে, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযে ডান হাত বাম হাতের উপর রাখতেন তাঁরা তাঁর নিকট রাত্রিযাপন করতেন না এবং তাঁর ঘরেও প্রবেশ করতেন না। তাঁরা তো তা-ই বর্ণনা করেছেন, যা তাঁকে করতে দেখেছেন তাঁর পিছনে ফরয নামায আদায়ের সময়।’
ﻭﻛﺬﻟﻚ ﻻ ﻭﺟﻪ ﻟﻠﺘﻔﺮﻗﺔ ﺑﻴﻦ ﺍﻟﻨﺎﻓﻠﺔ ﻭﺍﻟﻔﺮﻳﻀﺔ، ﻭﻟﻮ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﺋﻞ ﺇﻥ ﺫﻟﻚ ﻓﻲ ﺍﻟﻔﺮﻳﻀﺔ ﺩﻭﻥ ﺍﻟﻨﺎﻓﻠﺔ، ﻷﻥ ﺃﻛﺜﺮ ﻣﺎ ﻛﺎﻥ ﻳﺘﻨﻔﻞ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓﻲ ﺑﻴﺘﻪ ﻟﻴﻼ، ﻭﻟﻮ ﻓﻌﻞ ﺫﻟﻚ ﻓﻲ ﺑﻴﺘﻪ ﻟﻨﻘﻞ ﻋﻨﻪ ﺫﻟﻚ ﺃﺯﻭﺍﺟﻪ ﻭﻟﻢ ﻳﺄﺕ ﻋﻨﻬﻦ ﻓﻲ ﺫﻟﻚ ﺷﻲﺀ، ﻭﻣﻌﻠﻮﻡ ﺃﻥ ﺍﻟﺬﻳﻦ ﺭﻭﻭﺍ ﻋﻨﻪ ﺃﻧﻪ ﻛﺎﻥ ﻳﻀﻊ ﻳﻤﻴﻨﻪ ﻋﻠﻰ ﻳﺴﺎﺭﻩ ﻓﻲ ﺻﻼﺗﻪ ﻟﻢ ﻳﻜﻮﻧﻮﺍ ﻣﻤﻦ ﻳﺒﻴﺖ ﻋﻨﺪﻩ، ﻭﻻ ﻳﻠﺞ ﺑﻴﺘﻪ، ﻭﺇﻧﻤﺎ ﺣﻜﻮﺍ ﻋﻨﻪ ﻣﺎ ﺭﺃﻭﺍ ﻣﻨﻪ ﻓﻲ ﺻﻼﺗﻬﻢ ﺧﻠﻔﻪ ﻓﻲ ﺍﻟﻔﺮﺍﺋﺾ، ﻭﺍﻟﻠﻪ ﺃﻋﻠﻢ .
-প্রাগুক্ত ২০/৭৯
হাত কোথায় বাঁধা হবে
তো এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযে হাত বাঁধতেন এবং সাহাবায়ে কেরামও হাত বাঁধতেন। এখন প্রশ্ন হল, কোথায় তাঁরা হাত বাঁধতেন? মৌখিক বর্ণনায় হাত বাঁধার মূল প্রসঙ্গ যত পরিষ্কারভাবে এসেছে কোথায় বাঁধতেন তা সেভাবে আসেনি। কেন আসেনি? আসার প্রয়োজন হয়নি। কারণ সবাই হাত বাঁধছেন। কোথায় বাঁধছেন তা সবার সামনেই পরিষ্কার। কাজেই তা মুখে বর্ণনা করার প্রয়োজন হয়নি। তো যে সুন্নাহ কর্মে ও অনুসরণে ব্যাপকভাবে রয়েছে তা মৌখিক বর্ণনায় সেভাবে নেই। এ ধরনের ক্ষেত্রে পরের যুগের লোকদের জন্য সাহাবা-তাবেয়ীনের আমল ও ফতোয়া সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তাঁরা ঐ সময়ের কর্ম ও অনুশীলনের প্রত্যক্ষদর্শী।
নামাযে হাত বাঁধার সুন্নাহর উপর সাহাবা-তাবেয়ীন কীভাবে আমল করেছেন-এ বিষয়ে ইমাম তিরমিযী রাহ. (২৭৯ হি.) বলেন-
ﻭﺍﻟﻌﻤﻞ ﻋﻠﻰ ﻫﺬﺍ ﻋﻨﺪ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﻌﻠﻢ ﻣﻦ ﺃﺻﺤﺎﺏ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻭﺍﻟﺘﺎﺑﻌﻴﻦ ﻭﻣﻦ ﺑﻌﺪﻫﻢ، ﻳﺮﻭﻥ ﺃﻥ ﻳﻀﻊ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﻳﻤﻴﻨﻪ ﻋﻠﻰ ﺷﻤﺎﻟﻪ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ، ﻭﺭﺃﻯ ﺑﻌﻀﻬﻢ ﺃﻥ ﻳﻀﻌﻬﻤﺎ ﻓﻮﻕ ﺍﻟﺴﺮﺓ، ﻭﺭﺃﻯ ﺑﻌﻀﻬﻢ ﺃﻥ ﻳﻀﻌﻬﻤﺎ ﺗﺤﺖ ﺍﻟﺴﺮﺓ، ﻭﻛﻞ ﺫﻟﻚ ﻭﺍﺳﻊ ﻋﻨﺪﻫﻢ .
অর্থাৎ আহলে ইলম সাহাবা-তাবেয়ীন ও তাঁদের পরবর্তী মনীষীগণ এই হাদীসের উপর (ডান হাত দ্বারা বাম হাত ধরা) আমল করেছেন। তাঁদের সিদ্ধান্ত এই ছিল যে, নামাযে ডান হাত বাম হাতের উপর রাখতে হবে। তাঁদের কেউ নাভীর উপর হাত রাখার কথা বলতেন, আর কেউ নাভীর নিচে রাখাকে (অগ্রগণ্য) মনে করতেন। (তবে) দুটো নিয়মই তাঁদের কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল।-জামে তিরমিযী ১/৩৪
বস্ত্তত এটা হচ্ছে হাত বাঁধার হাদীসসমূহের ব্যাখ্যা ও প্রায়োগিক পদ্ধতি। সাহাবা-তাবেয়ীনের যমানা থেকে এ দুটি নিয়মই চলে আসছে। পরবর্তীতে জুমহূর ফকীহ ও মুজতাহিদ ইমামগণ এ দুই নিয়ম গ্রহণ করেছেন। এভাবে উম্মাহর তাওয়ারুছ ও ব্যাপক চর্চার মাধ্যমে নামাযে হাত বাঁধার যে নিয়ম প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে পৌঁছেছে তা উল্লেখিত হাদীসসমূহেরই ব্যবহারিক রূপ। এ কারণে পরবর্তী যুগে বিচ্ছিন্ন কোনো নিয়ম আবিষ্কার করে তাকে হাদীস শরীফের উপর আরোপ করা হাদীসের তাহরীফ ও অপব্যাখ্যা ছাড়া আর কিছুই নয়।
নাভীর নিচে হাত বাঁধা
উপরোক্ত দুই নিয়মের মাঝে নাভীর নিচে হাত বাঁধার নিয়মটি রেওয়ায়েতের বিচারে অগ্রগণ্য। ইমাম ইসহাক ইবনে রাহুয়াহ রাহ. (২৩৮ হি.) বলেছেন, ‘নাভীর নিচে হাত বাঁধা রেওয়ায়েতের বিচারে অধিক শক্তিশালী এবং ভক্তি ও বিনয়ের অধিক নিকটবর্তী।’
ﺗﺤﺖ ﺍﻟﺴﺮﺓ ﺃﻗﻮﻯ ﻓﻲ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﺗﺤﺖ ﺍﻟﺴﺮﺓ ﺃﻗﻮﻯ ﻓﻲ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﻭﺃﻗﺮﺏ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﺘﻮﺍﺿﻊ
 তাবেয়ী আবু মিজলায লাহিক ইবনে হুমাইদ রাহ. (মৃত্যু : ১০০ হি.-এর পর) নামাযে কোথায় হাত বাঁধবে-এ প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, ‘ডান হাতের পাতা বাম হাতের পাতার পিঠের উপর নাভীর নিচে রাখবে।’-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৩৯৬৩
এই রেওয়ায়েতের সনদ সহীহ।
সনদসহ রেওয়ায়েতটির পূর্ণ আরবী পাঠ এই -
ﺣﺪﺛﻨﺎ ﻳﺰﻳﺪ ﺑﻦ ﻫﺎﺭﻭﻥ ﻗﺎﻝ : ﺃﺧﺒﺮﻧﺎ ﺍﻟﺤﺠﺎﺝ ﺑﻦ ﺣﺴﺎﻥ ﻗﺎﻝ : ﺳﻤﻌﺖ ﺃﺑﺎ ﻣﺠﻠﺰ ـ ﺃﻭ ﺳﺄﻟﺘﻪ ـ ﻗﺎﻝ : ﻗﻠﺖ ﻛﻴﻒ ﺃﺻﻨﻊ؟ ﻗﺎﻝ : ﻳﻀﻊ ﺑﺎﻃﻦ ﻛﻒ ﻳﻤﻨﻴﻪ ﻋﻠﻰ ﻇﺎﻫﺮ ﻛﻒ ﺷﻤﺎﻟﻪ ﻭﻳﺠﻌﻠﻬﺎ ﺃﺳﻔﻞ ﻣﻦ ﺍﻟﺴﺮﺓ .
বিখ্যাত তাবেয়ী ইমাম ইবরাহীম নাখায়ী রাহ.ও (মৃত্যু : ৯৬ হি.) এই ফতোয়া দিয়েছেন। তিনি বলেন,
‘নামাযে ডান হাত বাম হাতের উপর নাভীর নিচে রাখবে।’-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৩৯৬০
এই রেওয়ায়েতের সনদ হাসান। সনদসহ রেওয়ায়েতটির পূর্ণ আরবী পাঠ এই-
ﺣﺪﺛﻨﺎ ﻭﻛﻴﻊ، ﻋﻦ ﺭﺑﻴﻊ، ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻣﻌﺸﺮ، ﻋﻦ ﺇﺑﺮﺍﻫﻴﻢ ﻗﺎﻝ : ﻳﻀﻊ ﻳﻤﻴﻨﻪ ﻋﻠﻰ ﺷﻤﺎﻟﻪ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﺗﺤﺖ ﺍﻟﺴﺮﺓ .
ইমাম মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান আশশাইবানী রাহ. (১৮৯ হি.) বর্ণনা করেছেন যে, ইমাম ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. নাভীর নিচে হাত বাঁধতেন। এরপর তিনি বলেন, ‘আমরা এই নিয়মই অনুসরণ করি এবং এটিই (ইমাম) আবু হানীফার সিদ্ধান্ত।’-কিতাবুল আছার, হাদীস : ১২১
সনদসহ রেওয়ায়েতটির আরবী পাঠ এই-
ﻗﺎﻝ ﻣﺤﻤﺪ : ﺃﺧﺒﺮﻧﺎ ﺍﻟﺮﺑﻴﻊ ﺑﻦ ﺻﺒﻴﺢ، ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻣﻌﺸﺮ، ﻋﻦ ﺇﺑﺮﺍﻫﻴﻢ : ﺃﻧﻪ ﻛﺎﻥ ﻳﻀﻊ ﻳﺪﻩ ﺍﻟﻴﻤﻨﻰ ﻋﻠﻰ ﻳﺪﻩ ﺍﻟﻴﺴﺮﻯ ﺗﺤﺖ ﺍﻟﺴﺮﺓ . ﻗﺎﻝ ﻣﺤﻤﺪ : ﻭﺑﻪ ﻧﺄﺧﺬ ﻭﻫﻮ ﻗﻮﻝ ﺃﺑﻲ ﺣﻨﻴﻔﺔ ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ . ‏( ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺼﻼﺓ، ﺑﺎﺏ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻗﺎﻋﺪﺍ ﻭﺍﻟﺘﻌﻤﺪ ﻋﻠﻰ ﺷﻲﺀ ﺃﻭ ﻳﺼﻠﻲ ﺇﻟﻰ ﺳﺘﺮﺓ)
প্রসঙ্গত আগেই বলা হয়েছে যে, সাহাবা-তাবেয়ীনের আমল হচ্ছে হাত বাঁধা সংক্রান্ত মারফূ হাদীসসমূহের ব্যবহারিক রূপ। এ কারণে মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান রাহ. ইমাম ইবরাহীম নাখায়ী রাহ-এর সূত্রে হাত বাঁধার মরফূ হাদীস বর্ণনা করার পর এই নিয়ম দ্বারা ব্যাখ্যা করেছেন।
রেওয়ায়েতটি এই-
ﺃﺧﺒﺮﻧﺎ ﺃﺑﻮ ﺣﻨﻴﻔﺔ، ﻋﻦ ﺣﻤﺎﺩ ﻋﻦ ﺇﺑﺮﺍﻫﻴﻢ ﺃﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻛﺎﻥ ﻳﻌﺘﻤﺪ ﺑﺈﺣﺪﻯ ﻳﺪﻳﻪ ﻋﻠﻰ ﺍﻷﺧﺮﻯ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ، ﻳﺘﻮﺍﺿﻊ ﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ . ﻗﺎﻝ ﻣﺤﻤﺪ : ﻭﻳﻀﻊ ﺑﻄﻦ ﻛﻔﻪ ﺍﻷﻳﻤﻦ ﻋﻠﻰ ﺭﺳﻐﻪ ﺍﻷﻳﺴﺮ، ﺗﺤﺖ ﺍﻟﺴﺮﺓ، ﻓﻴﻜﻮﻥ ﺍﻟﺮﺳﻎ ﻓﻲ ﻭﺳﻂ ﺍﻟﻜﻒ، ‏( ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻷﺛﺎﺭ، ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺼﻼﺓ، ﺑﺎﺏ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻗﺎﻋﺪﺍ ﻭﺍﻟﺘﻌﻤﺪ ﻋﻠﻰ ﺷﻲﺀ ﺃﻭ ﻳﺼﻠﻲ ﺇﻟﻰ ﺳﺘﺮﺓ )
ইমাম ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন, ‘আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযে এক হাতের উপর অন্য হাত বাঁধতেন। এভাবে তিনি আল্লাহর সামনে বিনীত হতেন।’
(ইমাম) মুহাম্মাদ বলেন, ‘ডান হাতের তালু বাম হাতের কব্জির উপর রাখবে, নাভীর নিচে; সুতরাং কব্জি থাকবে হাতের তালুর মাঝে।’-কিতাবুল আছার, হাদীস : ১২০
খাইরুল কুরূন ও পরবর্তী যুগের হাদীস ও ফিকহের বিখ্যাত ইমামগণও নাভীর নিচে হাত বাঁধার নিয়ম গ্রহণ করেছেন।
ইমাম ইবনে কুদামা হাম্বলী রাহ. (৬২০ হি.) বলেন, নামাযে কোথায় হাত বাঁধা হবে এ বিষয়ে বিভিন্ন বর্ণনা আছে। (ইমাম) আহমদ রাহ. থেকে বর্ণিত, দুই হাত নাভীর নিচে রাখবে। এটি (হযরত) আলী রা., আবু হুরায়রা রা., আবু মিজলায রাহ., ইবরাহীম নাখায়ী রাহ., (সুফিয়ান) ছাওরী রাহ., ইসহাক (ইবনে রাহুয়াহ) রাহ. থেকে বর্ণিত।-আলমুগনী ২/১৪১
উল্লেখ্য, ইবনে কুদামা হাম্বলী রাহ. ‘আলমুগনী’তে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহ. থেকে মোট তিনটি রেওয়ায়েত উল্লেখ করেছেন। তবে মূল মতন অর্থাৎ
‘মুখতাসারুল খিরাকী’তে শুধু নাভীর নিচে হাত বাঁধার কথাই বলা হয়েছে।
আরবী পাঠ- ﻭﻳﺠﻌﻞﻫﻢﺍ ﻭﻳﺠﻌﻠﻬﻤﺎ ﺗﺤﺖ ﺳﺮﺗﻪ
‘মুখতাসারে’র ভূমিকায় লেখক ইমাম আবুল কাসিম উমার ইবনুল হুসাইন আলখিরাকী (৩৩৪ হি.) বলেছেন, ‘আমি ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহ.-এর মাযহাব অনুসারে (শরীয়তের মাসাইল) এই কিতাবে সংকলন করেছি।’
ﺍﺧﺘﺼﺮﺕ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﻜﺘﺎﺏ ﻟﻴﻘﺮﺏ ﻋﻠﻰ ﻣﺘﻌﻠﻤﻪ ﻋﻠﻰ ﻣﺬﻫﺐ ﺃﺑﻲ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺃﺣﻤﺪ ﺑﻦ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﺣﻨﺒﻞ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ .
-আলমুগনী ১/৭-৮
শায়খ আবুল হুসাইন ইয়াহইয়া ইবনে আবুল খায়ের রাহ. (মৃত্যু ৫৫৮ হি.) বলেন, (ইমাম) আবু ইসহাক (আলমারওয়াযী) রাহ. বলেছেন,
‘এক হাত অন্য হাতের উপর নাভীর নিচে রাখবে।’-আলবায়ান ফী মাযাহিবিল ইমামিশ শাফেয়ী ২/১৭৫
উল্লেখ্য, ইমাম আবু ইসহাক আলমারওয়াযী রাহ. শাফেয়ী মাযহাবের একজন প্রসিদ্ধ মনীষী। ইমাম শাফেয়ী রাহ. নাভীর উপর (বুকের নিচে) হাত বাঁধার নিয়ম গ্রহণ করলেও আবু ইসহাক মারওয়াযী নাভীর নিচে হাত বাঁধার নিয়মকেই অগ্রগণ্য মনে করেছেন।
ইমাম নববী রাহ. (৬৭৬ হি.) বলেন, (ইমাম) আবু হানীফা, (সুফিয়ান) ছাওরী ও ইসহাক (ইবনে রাহুয়াহ) বলেন, ‘দুই হাত নাভীর নিচে রাখবে। আমাদের (শাফেয়ী মাযহাবের) মনীষীদের মধ্যে আবু ইসহাক আলমারওয়াযী রাহ.ও তা গ্রহণ করেছেন। আর ইবনুল মুনযির তা বর্ণনা করেছেন আবু হুরায়রা, (ইবরাহীম) নাখায়ী ও আবু মিজলায রাহ. থেকে।
তিনি আরো বলেন, ‘আলী ইবনে আবী তালিব রা. থেকে দুটি রেওয়ায়েত আছে : এক. নাভীর উপর হাত বাঁধা, দুই. নাভীর নিচে হাত বাঁধা।
-আলমাজমূ শরহুল মুহাযযাব ৪/৩৩০
উল্লেখ্য, জনৈক গবেষক একটি রেওয়ায়েতের ভিত্তিতে প্রমাণ করতে চেয়েছেন যে, ইমাম ইসহাক ইবনে রাহুয়াহ রাহ. নামাযে বুকের উপর হাত বাঁধার অনুসারী ছিলেন। কিন্তু তার এই প্রয়াস যথার্থ নয়। কারণ হাদীস ও ফিকহের বিখ্যাত মনীষীগণ ইমাম ইসহাক ইবনে রাহুয়াহ রাহ. সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি নাভীর নিচে হাত বাঁধার নিয়ম গ্রহণ করেছেন। ইবনুল মুনযির রাহ. (৩১৮ হি.) স্বয়ং ইসহাক ইবনে রাহুয়াহর দ্ব্যর্থহীন বক্তব্য উদ্ধৃত করেছেন যে, ‘নাভীর নিচে হাত বাঁধা রেওয়ায়েতের বিচারে শক্তিশালী এবং ভক্তি ও বিনয়ের অধিক নিকটবর্তী।’
সুতরাং এখানে সংশয়ের কোনো অবকাশ নেই। আর যে রেওয়ায়েতের ভিত্তিতে বলা হয়েছে, তিনি বুকের উপর হাত বাঁধতেন ঐ রেওয়ায়েতেও তা নিশ্চিতভাবে বলা হয়নি। বলা হয়েছে, তিনি বিতর নামাযে বুকের উপর হাত বাঁধতেন বা বুকের নিচে।
আরবী পাঠ-
ﻛﺎﻥ ﺇﺳﺤﺎﻕ ﻳﻮﺗﺮ ﺑﻨﺎ ... ﻭﻳﻀﻊ ﻳﺪﻳﻪ ﻋﻠﻰ ﺛﺪﻳﻴﻪ ﺃﻭ ﺗﺤﺖ ﺍﻟﺜﺪﻳﻴﻦ .
আমরা ইতিপূর্বে আলোচনা করেছি যে, নাভীর নিচে ও নাভীর উপরে (বুকের নিচে) দু’ জায়গায় হাত বাঁধার নিয়মই সাহাবা-তাবেয়ীনের যুগে ছিল। তাঁরা একটিকে অগ্রগণ্য মনে করলেও কেউ অন্যটিকে অনুসরণযোগ্য মনে করতেন। তো ইসহাক ইবনে রাহুয়াহ রাহ. যদি নাভীর নিচে হাত বাঁধাকে অগ্রগণ্য মনে করার পর কখনো কখনো নাভীর উপরে হাত বাঁধার নিয়ম অনুসরণ করে থাকেন তাতে আশ্চর্যের কী আছে। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই একটি অস্পষ্ট রেওয়ায়েতের ভিত্তিতে কোনো একটি বিচ্ছিন্ন মত কারো উপর আরোপ করার অবকাশ নেই। এটি বরং আরোপকারীর দলীল-প্রমাণের দৈন্য এবং শুযূয ও বিছিন্নতাকেই প্রকটভাবে প্রকাশিত করে দেয়।
মূল আলোচনায় ফিরে আসি। এ পর্যন্ত আমরা খাইরুল কুরূন ও পরবর্তী যুগের হাদীস ও ফিকহের বিখ্যাত ইমামগণের ফতোয়া ও আমল লক্ষ্য করেছি। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, সাহাবা-তাবেয়ীনের যমানায় নাভীর নিচে হাত বাঁধার নিয়ম ব্যাপকভাবে অনুসৃত হয়েছে, যা হাত বাঁধার মরফূ হাদীসমূহেরই ব্যাখ্যা ও ব্যবহারিক রূপ।
নাভীর নিচে হাত বাঁধা যেমন সাহাবা-তাবেয়ীনের আমল ও ফতোয়া দ্বারা প্রমাণিত তেমনি মারফূ রেওয়ায়েতের সূত্রেও আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত।
নাভীর নিচে হাত বাঁধার মারফূ রেওয়ায়েত
১. হযরত ওয়াইল ইবনে হুজর রা. থেকে বর্ণিত, ‘আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছি, তিনি নামাযে ডান হাত বাম হাতের উপর নাভীর নীচে রেখেছেন।
সনদসহ রেওয়ায়েতের আরবী পাঠ এই-
ﺣﺪﺛﻨﺎ ﻭﻛﻴﻊ، ﻋﻦ ﻣﻮﺳﻰ ﺑﻦ ﻋﻤﻴﺮ، ﻋﻦ ﻋﻠﻘﻤﺔ ﺑﻦ ﻭﺍﺋﻞ ﺑﻦ ﺣﺠﺮ، ﻋﻦ ﺃﺑﻴﻪ ﻗﺎﻝ : ﺭﺃﻳﺖ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﻀﻊ ﻳﻤﻴﻨﻪ ﻋﻠﻰ ﺷﻤﺎﻟﻪ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﺗﺤﺖ ﺍﻟﺴﺮﺓ .
-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৩৯৫১
এই বর্ণনার সনদ সহীহ। ইমাম কাসেম ইবনে কুতলূবুগা রাহ. (৮৭৯ হি.) বলেন- ﻭﻫﺬﺍ ﺇﺳﻨﺎﺩ ﺟﻲﺩ এটি একটি উত্তম সনদ।-আততা’রীফু ওয়াল ইখবার রিতাখরীজি আহাদীছিল ইখতিয়ার-হাশিয়া শায়খ মুহাম্মাদ আওয়ামা
উল্লেখ্য, মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবার একাধিক পান্ডুলিপিতে হাদীসটি এভাবেই অর্থাৎ ﺓﺡﺓ
ﺍﻟﺴﺮﺓ (নাভীর নিচে) কথাটাসহ আছে। এর মধ্যে ইমাম মুরতাযা আযাবীদী-এর পান্ডুলিপি ও ইমাম আবিদ আসসিন্দী রাহ.-এর পান্ডুলিপি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ইমাম কাসিম ইবনে কুতলূবুগা রাহ., আল্লামা আবদুল কাদির ইবনে আবু বকর আসসিদ্দীকি ও আল্লামা মুহাম্মাদ আকরাম সিন্ধীর পান্ডুলিপিতেও হাদীসটি এভাবে আছে। পক্ষান্তরে অন্য কিছু পান্ডুলিপিতে এই বর্ণনায়
ﺓﺡﺓ ﺍﻟﺴﺮﺓ (নাভীর নিচে) কথাটা নেই। এ কারণে ভারতবর্ষে মুদ্রিত মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবার পুরানো সংস্করণে এই হাদীসে
ﺓﺡﺓ ﺍﻟﺴﺮﺓ (নাভীর নিচে) অংশটি ছিল না। বর্তমানে মদীনা মুনাওয়ারার বিখ্যাত ফকীহ ও মুহাদ্দিস শায়খ মুহাম্মদ আওয়ামার তাহকীক-সম্পাদনায় মুসান্নাফের যে মুদ্রণ পাঠক-গবেষকদের কাছে পৌঁছেছে তাতে হাদীসটি ﺓﺡﺓ ﺍﻟﺴﺮﺓ (নাভীর নিচে) অংশসহ রয়েছে। কারণ শায়খের সামনে প্রথমোক্ত পান্ডুলিপি দুটিও ছিল। এ বিষয়ে
বিস্তারিত আলোচনার পর শায়খ বলেন-
ﻭﻣﻦ ﻧﻘﻞ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﻣﻦ ﺇﺣﺪﻯ ﺍﻟﻨﺴﺦ ﺍﻷﺭﺑﻊ ﺥ . ﻅ . ﻥ . ﺵ . ﺍﻟﺘﻲ ﻟﻴﺴﺖ ﻓﻴﻬﺎ ﻫﺬﻩ ﺍﻟﺠﻤﻠﺔ : ﻣﻌﺬﻭﺭ ﻓﻲ ﻋﺪﻡ ﺇﺛﺒﺎﺕ ﻫﺬﻩ ﺍﻟﺰﻳﺎﺩﺓ، ﻭﻟﻜﻨﻪ ﻟﻴﺲ ﻣﻌﺬﻭﺭﺍ ﻓﻲ ﻧﻔﻲ ﻭﺭﻭﺩﻫﺎ، ﻭﻣﻦ ﻧﻘﻠﻪ ﻋﻦ ﺇﺣﺪﻯ ﺍﻟﻨﺴﺨﺘﻴﻦ ﺍﻟﻠﺘﻴﻦ ﻓﻴﻬﻤﺎ ﻫﺬﻩ ﺍﻟﺰﻳﺎﺩﺓ ﻫﻮ ﻣﻌﺬﻭﺭ ﻓﻲ ﺇﺛﺒﺎﺗﻬﺎ، ﺑﻞ ﻭﺍﺟﺐ ﻋﻠﻴﻪ ﺫﻟﻚ ﻭﻻ ﻳﺠﻮﺯ ﻟﻬﺎ ﺣﺬﻓﻬﺎ ﻓﻌﻠﻰ ﻡ ﺍﻟﺘﻨﺎﺑﺰ ﻭﺍﻟﺘﻨﺎﺑﺬ؟
উৎসাহী আলিমগণ শায়খের পূর্ণ আলোচনা মুসান্নাফের টীকায় দেখে নিতে পারেন।
উল্লেখ্য, যারা মুআম্মাল ইবনে ইসমাইলের মুনকার রেওয়ায়েত অবলীলায় গ্রহণ করেন তাদের তো এই রেওয়ায়েত গ্রহণে দ্বিধা থাকার কথা নয়। কারণ এক. এই রেওয়ায়েতের সনদ ইবনে খুযায়মার ঐ রেওয়ায়েতের চেয়ে অনেক শক্তিশালী। দুই. ওয়াইল ইবনে হুজর রা. থেকে অন্য সূত্রে বর্ণিত কিছু রেওয়ায়েতেও এর বেশ সমর্থন পাওয়া যায়। ইমাম তবারানী রাহ. হুজর আবুল আম্বাসের সূত্রে ওয়াইল ইবনে হুজর রা.-এর এই বিবরণ উল্লেখ করেছেন। তাতে আছে, ‘তিনি তার ডান হাত বাম হাতের উপর রাখলেন এবং তা রাখলেন পেটের উপর।’
সনদসহ রেওয়ায়েতটির আরবী পাঠ এই-
ﺣﺪﺛﻨﺎ ﺃﺑﻮ ﻣﺴﻠﻢ ﺍﻟﻜﺸﻲ ﺛﻨﺎ ﺣﺠﺎﺝ ﺑﻦ ﻧﺼﻴﺮ ﺛﻨﺎ ﺷﻌﺒﺔ ﻋﻦ ﺳﻠﻤﺔ ﺑﻦ ﻛﻬﻴﻞ ﻗﺎﻝ : ﺳﻤﻌﺖ ﺣﺠﺮﺍ ﺃﺑﺎ ﺍﻟﻌﻨﺒﺲ ﻳﺤﺪﺙ ﻋﻦ ﻭﺍﺋﻞ ﺍﻟﺤﻀﺮﻣﻲ ﺃﻧﻪ ﺻﻠﻰ ﻣﻊ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ... ، ﺛﻢ ﻭﺿﻊ ﻳﺪﻩ ﺍﻟﻴﻤﻨﻰ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻴﺴﺮﻯ ﻭﺟﻌﻠﻬﺎ ﻋﻠﻰ ﺑﻄﻨﻪ .
-আলমুজামুল কাবীর ২২/৪৪, হাদীস : ১১০
তেমনি সুনানে দারেমী ও আলমু’জামুল কাবীর তবারানীতে আবদুল জাববার ইবনে ওয়াইলের সূত্রে ওয়াইল ইবনে হুজর রা.-এর যে বিবরণ বর্ণিত হয়েছে, তাতে আছে, ‘তিনি ডান হাত বাম হাতের উপর কব্জির কাছে রাখলেন।’ সনদসহ রেওয়ায়েতটির আরবী পাঠ এই-
ﻗﺎﻝ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﺍﻟﺪﺍﺭﻣﻲ ﻓﻲ ﺍﻟﺴﻨﻦ ‏( ﺑﺎﺏ ﻭﺿﻊ ﺍﻟﻴﻤﻴﻦ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺸﻤﺎﻝ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ ‏) : ﺃﺧﺒﺮﻧﺎ ﺃﺑﻮ ﻧﻌﻴﻢ، ﺛﻨﺎ ﺯﻫﻴﺮ، ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﺇﺳﺤﺎﻕ، ﻋﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺠﺒﺎﺭ ﺑﻦ ﻭﺍﺋﻞ، ﻋﻦ ﺃﺑﻴﻪ ﻗﺎﻝ : ﺭﺃﻳﺖ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﻀﻊ ﻳﺪﻩ ﺍﻟﻴﻤﻨﻰ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻴﺴﺮﻯ ﻗﺮﻳﺒﺎ ﻣﻦ ﺍﻟﺮﺳﻎ .
ﺍﻧﺘﻬﻰ
ﻭﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﻄﺒﺮﺍﻧﻲ ﺑﻄﺮﻳﻖ ﻋﺒﺪﺍﻥ ﺑﻦ ﺃﺣﻤﺪ، ﺛﻨﺎ ﻋﻤﺮﻭ ﺑﻦ ﻋﺜﻤﺎﻥ ﺍﻟﺤﻤﺼﻲ، ﺛﻨﺎ ﺇﺳﻤﺎﻋﻴﻞ ﺑﻦ ﻋﻴﺎﺵ، ﻋﻦ ﻳﻮﻧﺲ ﺑﻦ ﺃﺑﻲ ﺇﺳﺤﺎﻕ ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﺇﺳﺤﺎﻕ ﺑﻪ .
-সুনানে দারেমী ১/২২৮; আলমুজামুল কাবীর, তবারানী ২২/২৫, হাদীস : ৫২
এই রেওয়ায়েতগুলো সামনে রাখলে বোঝা যায়, আসিম ইবনে কুলাইবের সূত্রে ওয়াইল ইবনে হুজর রা.-এর যে বিবরণ যাইদা ইবনে কুদামা বর্ণনা করেছেন, যাতে ‘ডান হাত বাম হাতের পাতার পিঠ, কব্জি ও বাহুর উপর’ রাখার কথা আছে, তার অর্থ ‘বাহু বাহুর উপর’ রাখা নয়; বরং ডান হাতের পাতা এমনভাবে রাখা যে, তা বাম হাতের পাতা, কব্জি ও বাহুর কিছু অংশের উপর থাকে। এ সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব বুকের উপর হাত বাঁধার মতটি পর্যালোচনা করার সময় ইনশাআল্লাহ।
নাভীর নিচে হাত বাঁধার বিষয়ে জয়ীফ সনদে বর্ণিত কিছু রেওয়ায়েতও আছে। তবে রেওয়ায়েতগুলোর বিষয়বস্ত্ত উপরে বর্ণিত হাদীস, আছার ও আমলে মুতাওয়ারাছ দ্বারা সমর্থিত।
২. হযরত আলী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘সুন্নাহ হচ্ছে নামাযে হাতের পাতা হাতের পাতার উপর নাভীর নিচে রাখা।’-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৮৭৫; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৭৫৬; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৩৯৬৬
সনদসহ রেওয়ায়েতটির পূর্ণ আরবী পাঠ এই-
ﺣﺪﺛﻨﺎ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﻣﺤﺒﻮﺏ، ﺣﺪﺛﻨﺎ ﺣﻔﺺ ﺑﻦ ﻏﻴﺎﺙ، ﻋﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺑﻦ ﺇﺳﺤﺎﻕ، ﻋﻦ ﺯﻳﺎﺩ ﺑﻦ ﺯﻳﺪ، ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﺟﺤﻴﻔﺔ ﺃﻥ ﻋﻠﻴﺎ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻗﺎﻝ : ﺍﻟﺴﻨﺔ ﻭﺿﻊ ﺍﻟﻜﻒ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻜﻒ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﺗﺤﺖ ﺍﻟﺴﺮﺓ .
ﻗﺎﻝ ﺍﻟﻤﺰﻱ ﻓﻲ ﺗﺤﻔﺔ ﺍﻷﺷﺮﺍﻑ ٨ / ٤٥٨ ، ﻫﺬﺍ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﻓﻲ ﺭﻭﺍﻳﺔ ﺍﺑﻲ ﺳﻌﻴﺪ ﺑﻦ ﺍﻷﻋﺮﺍﺑﻲ، ﻭﺍﺑﻦ ﺩﺍﺳﺔ ﻭﻏﻴﺮ ﻭﺍﺣﺪ ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﺩﺍﻭﺩ، ﻭﻟﻢ ﻳﺬﻛﺮﻩ ﺃﺑﻮ ﺍﻟﻘﺎﺳﻢ .
৩. আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, ‘নামাযে হাতের পাতাসমূহ দ্বারা হাতের পাতাসমূহ নাভীর নীচে ধরা হবে।’
সনদসহ রেওয়ায়েতটির আরবী পাঠ এই-
ﺣﺪﺛﻨﺎ ﻣﺴﺪﺩ، ﺣﺪﺛﻨﺎ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻮﺍﺣﺪ ﺑﻦ ﺯﻳﺎﺩ، ﻋﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺑﻦ ﺇﺳﺤﺎﻕ ﺍﻟﻜﻮﻓﻲ، ﻋﻦ ﺳﻴﺎﺭ ﺃﺑﻲ ﺍﻟﺤﻜﻢ، ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻭﺍﺋﻞ ﻗﺎﻝ : ﻗﺎﻝ ﺃﺑﻮ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ : ﺃﺧﺬ ﺍﻷﻛﻒ ﻋﻠﻰ ﺍﻷﻛﻒ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﺗﺤﺖ ﺍﻟﺴﺮﺓ .
-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৭৫৮, তাহকীক : শায়খ মুহাম্মাদ আওয়ামাহ; তুহফাতুল আশরাফ, হাদীস : ১৩৪৯৪
এই দুই রেওয়ায়েতের সনদে আবদুর রহমান ইবনে ইসহাক নামক একজন রাবী আছেন। ইমাম তিরমিযী রাহ. তার সূত্রে বর্ণিত একটি হাদীসকে হাসান বলেছেন। দেখুন : জামে তিরমিযী, হাদীস : ৩৪৬২; আরো দেখুন : হাদীস ২৫২৭
আবদুর রহমান ইবনে ইসহাকের সূত্রে হাদীসটি (২৫২৬) বর্ণনা করার পর ইমাম তিরমিযী বলেন, কোনো কোনো মনীষী এই আবদুর রহমান ইবনে ইসহাকের স্মৃতিশক্তি সম্পর্কে সমালোচনা করেছেন। আরবী পাঠ-
ﺍ ﻫﺬﺍ ﺣﺪﻳﺚ ﻏﺮﻳﺐ ﻭﻗﺪ ﺗﻜﻠﻢ ﺑﻌﺾ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﻌﻠﻢ ﻓﻲ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﻫﺬﺍ ﻣﻦ ﻗﺒﻞ ﺣﻔﻈﻪ ﻭﻫﻮ ﻛﻮﻓﻲ، ﻭﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺑﻦ ﺇﺳﺤﺎﻕ ﺍﻟﻘﺮﺷﻲ ﻣﺪﻳﻨﻲ ﻭﻫﻮ ﺃﺛﺒﺖ ﻣﻦ ﻫﺬﺍ . ﺍﻧﺘﻬﻰ
উল্লেখ্য, শায়খ আলবানী রাহ.ও আবদুর রহমান ইবনে ইসহাকের সূত্রে বর্ণিত একটি হাদীসকে শাওয়াহেদের (অন্যান্য বর্ণনার সমর্থনের) কারণে সিলসিলাতুস সহীহায় উল্লেখ করেছেন। দেখুন : সিলসিলাতুস সহীহা হাদিস
৪. আনাস রা. থেকে বর্ণিত,
‘তিনটি বিষয় (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর) নবী-স্বভাবের অন্তর্ভুক্ত: ইফতারে বিলম্ব না করা, সাহরী শেষ সময়ে খাওয়া এবং নামাযে ডান হাত বাম হাতের উপর নাভীর নিচে রাখা।’
ﺛﻼﺙ ﻣﻦ ﺃﺧﻼﻕ ﺍﻟﻨﺒﻮﺓ : ﺗﻌﺠﻴﻞ ﺍﻷﻓﻈﺎﺭ، ﻭﺗﺄﺧﻴﺮ ﺍﻟﺴﺤﻮﺭ، ﻭﻭﺿﻊ ﺍﻟﻴﺪ ﺍﻟﻴﻤﻨﻰ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻴﺴﺮﻯ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﺗﺤﺖ ﺍﻟﺴﺮﺓ .
-আলমুহাল্লা ৩/৩০; আলজাওহারুন নাকী ২/৩১
উল্লেখ্য, ইবনে হাযম রাহ. (৪৫৬ হি.) তাঁর নামাযে হাত বাঁধার আলোচনায় নাভীর নিচে হাত বাঁধার একটি মারফূ হাদীস ও একটি আছর উল্লেখ করেছেন। তবে সেগুলোর সনদ উল্লেখ করেননি।
পক্ষান্তরে এ আলোচনায় বুকের উপর হাত বাঁধার একটি রেওয়ায়েতও উল্লেখ করেননি, না সনদসহ না সনদ ছাড়া। তদ্রূপ হাত বাঁধার নিয়ম উল্লেখ করতে গিয়ে বলেছেন, ‘মুস্তাহাব হল, নামাযী তার ডান হাত বাম হাতের কব্জির উপর রাখবে।’
ﻭﻳﺴﺘﺤﺐ ﺃﻥ ﻳﻀﻊ ﺍﻟﻤﺼﻠﻲ ﻳﺪﻩ ﺍﻟﻴﻤﻨﻰ ﻋﻠﻰ ﻛﻮﻉ ﻳﺪﻩ ﺍﻟﻴﺴﺮﻯ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ، ﻓﻲ ﻭﻗﻮﻓﻪ ﻛﻠﻪ ﻓﻴﻬﺎ .
-আলমুহাল্লা ৩/২৯
সারসংক্ষেপ : নামাযে হাত বাঁধা সুন্নাহ। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনেক সাহাবী তা বর্ণনা করেছেন। এই সুন্নাহর ব্যবহারিক রূপ খাইরুল কুরূনে কী ছিল তা সাহাবা-তাবেয়ীনের আমল ও ফতোয়া এবং সে যুগ থেকে চলে আসা
‘আমলে মুতাওয়ারাছ’ দ্বারা প্রমাণিত, যা ইবাদত-বন্দেগীর সঠিক ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান ও শক্তিশালী সূত্র। এ সূত্রে নামাযে হাত বাঁধার দু’টি নিয়ম পাওয়া যায় : নাভীর নিচে হাত বাঁধা ও নাভীর উপর (বুকের নীচে) হাত বাঁধা। দু'টো নিয়মই আহলে ইলম সাহাবা-তাবেয়ীনের কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল, যা ইমাম তিরমিযী রাহ. জামে তিরমিযীতে বর্ণনা করেছেন। তবে রেওয়ায়েতের বিচারে নাভীর নিচে হাত বাঁধার নিয়মটি অগ্রগণ্য। ইমাম ইসহাক ইবনে রাহুয়াহ রাহ. তা পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন।
খাইরুল কুরূন ও পরবর্তী যুগের হাদীস-ফিকহের বড় বড় ইমাম এই নিয়ম গ্রহণ করেছেন। এঁদের মধ্যে ইমাম ইবরাহীম নাখায়ী, ইমাম আবু হানীফা, ইমাম সুফিয়ান ছাওরী, ইমাম আবু ইউসুফ, ইমাম মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান, ইমাম ইসহাক ইবনে রাহুয়াহ, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল প্রমুখ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। উপরন্তু বেশ কিছু মরফূ হাদীসেও নাভীর নিচে হাত বাঁধার নিয়ম বর্ণিত হয়েছে।
সুতরাং এটি নামাযে হাত বাঁধার মাসনূন তরীকা। এ সম্পর্কে দ্বিধা ও সংশয়ের কোনো অবকাশ নেই। 
(চলবে ইনশাআল্লাহ)
আগামী সংখ্যায় পড়ুন : বুকের উপর হাত বাঁধা : বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা।
ঈমান-আকাইদ নামায-সালাত
তাহারাত রমযান প্রসঙ্গ
হজ্জ্ব যাকাত
মুয়ামালাত-লেনদেন
তাসাওউফ-আত্মশুদ্ধি
ইসলামী অর্থনীতি
দাওয়াত ও তাবলীগ
শেয়ার ব্যবসা শবে বরাত
শবে মিরাজ ঈদ
নারী অধিকার বিদআতনামাযে হাত বাঁধা ও নাভীর নিচে বাঁধা
মাওলানা মুহাম্মাদ যাকারিয়া আব্দুল্লাহ
প্রশ্ন : কিছুদিন আগে আমার এক বন্ধুর সাথে নামাযের নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা হচ্ছিল। তিনি বললেন, ‘নামাযে বুকের উপর হাত রাখা সুন্নাহ। হাদীস শরীফে এই নিয়মটিই আছে। অন্য কোনো নিয়ম নেই। সহীহ বুখারীতে সাহল ইবনে সাদ রা. থেকে বর্ণিত হাদীসে, সহীহ ইবনে খুযায়মায় ওয়াইল ইবনে হুজর রা. থেকে বর্ণিত হাদীসে এবং মুসনাদে আহমদে হুলব আতত্বয়ী রা. থেকে বর্ণিত হাদীসে বুকের উপর হাত বাঁধার কথা আছে। এছাড়া তাউস রাহ. থেকে একটি মুরসাল হাদীসে এবং হযরত আলী রা. থেকে সূরায়ে কাওসারের তাফসীরে নামাযে বুকের উপর হাত বাঁধার কথা বর্ণিত হয়েছে।
‘পক্ষান্তরে নাভীর নীচে হাত বাঁধার কোনো প্রমাণ সহীহ হাদীসে নেই। এ সম্পর্কে যত হাদীস ও আছার আছে সব জয়ীফ।’
আমার বন্ধুটি একজন আলেম। আমারও উলূমুল হাদীস বিষয়ে কিছু পড়াশোনা আছে। তার সাথে আলোচনার পর আমি বিষয়টির উপর কিছু পড়াশোনাও করেছি।
নামাযে হাত বাঁধার বিষয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ আলোচনা এবং উপরোক্ত বিষয়ে ইলমী সমাধান আপনাদের নিকট কামনা করছি। আল্লাহ তাআলা আপনাদের জাযায়ে খায়ের দান করুন।
রাইয়ান ইবনে লুৎফুর রহমান
পল্লবী, ঢাকা-১২১৬
উত্তর : নামাযে হাত বাঁধা সুন্নত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযে হাত বেঁধেছেন। তাঁর ডান হাত থাকত বাম হাতের কব্জির উপর। সাহাবায়ে কেরামকে এভাবেই নামায পড়ার আদেশ করা হত এবং তাঁরাও এভাবেই হাত বেঁধে নামায পড়তেন।
নামাযে হাত বাঁধা
হযরত ওয়াইল ইবনে হুজর রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকবীর দিয়ে দুই হাত তুললেন। রাবী বলেন, দুই কান বরাবর। এরপর পরিধানের চাদর গায়ে জড়িয়ে নিলেন, এরপর ডান হাত বাম হাতের উপর রাখলেন ...।
ﻋﻦ ﻭﺍﺋﻞ ﺑﻦ ﺣﺠﺮ : ﺃﻧﻪ ﺭﺃﻯ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺭﻓﻊ ﻳﺪﻳﻪ ﺣﻴﻦ ﺩﺧﻞ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻛﺒﺮ، ﻭﺻﻒ ﻫﻤﺎﻡ ﺣﻴﺎﻝ ﺃﺫﻳﻨﻪ، ﺛﻢ ﺍﻟﺘﺤﻒ ﺑﺜﻮﺑﻪ، ﺛﻢ ﻭﺿﻊ ﻳﺪﻩ ﺍﻟﻴﻤﻨﻰ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻴﺴﺮﻯ ...
-সহীহ মুসলিম ১/১৭৩
হযরত হুলব আতত্বয়ী রা. বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের ইমাম হতেন এবং তাঁর ডান হাত দিয়ে বাম হাত ধরতেন।
ﻛﺎﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﺆﻣﻨﺎ ﻓﻴﺄﺧﺬ ﺷﻤﺎﻟﻪ ﺑﻴﻤﻴﻨﻪ . ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ ﻭﻗﺎﻝ : ﺣﺪﻳﺚ ﺣﺴﻦ .
-জামে তিরমিযী ১/৩৪; ইবনে মাজাহ ৫৯
  হযরত সাহল ইবনে সাদ রা. বলেন, লোকদেরকে আদেশ করা হত, পুরুষ যেন নামাযে ডান হাত বাম বাহুর উপর রাখে।’-সহীহ বুখারী ১/১০৪
ﻛﺎﻥ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻳﺆﻣﺮﻭﻥ ﺃﻥ ﻳﻀﻊ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﺍﻟﻴﺪ ﺍﻟﻴﻤﻨﻰ ﻋﻠﻰ ﺫﺭﺍﻋﻪ ﺍﻟﻴﺴﺮﻯ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ . ﻗﺎﻝ ﺃﺑﻮ ﺣﺎﺗﻢ : ﻻ ﺃﻋﻠﻤﻪ ﺇﻻ ﻳﻨﻤﻰ ﺫﻟﻚ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ .
হযরত জাবির রা. বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন নামাযরত ব্যক্তির নিকট দিয়ে গমন করছিলেন, যিনি ডান হাতের উপর বাম হাত রেখে নামায পড়ছিলেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার হাত খুলে ডান হাত বাম হাতের উপর রাখলেন।-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১৫০৯০
ﻣﺮ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺑﺮﺟﻞ ﻭﻫﻮ ﻳﺼﻠﻲ ﻗﺪ ﻭﺿﻊ ﻳﺪﻩ ﺍﻟﻴﺴﺮﻯ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻴﻤﻨﻰ ﻓﺎﻧﺘﺰﻋﻬﺎ ﻭﻭﺿﻊ ﺍﻟﻴﻤﻨﻰ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻴﺴﺮﻯ . ﻗﺎﻝ ﺍﻟﻬﻴﺜﻤﻲ ﻓﻲ ﻣﺠﻤﻊ ﺍﻟﺰﻭﺍﺋﺪ
٢ / ٢۷٥ : ﺭﺟﺎﻟﻪ ﺭﺟﺎﻝ ﺍﻟﺼﺤﻴﺢ .
আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. বলেন, আমি আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি,
‘আমরা নবীগণ আদিষ্ট হয়েছি দ্রুত (সময় হওয়ামাত্র) ইফতার করতে, বিলম্বে (সময়ের শেষের দিকে) সাহরী খেতে এবং নামাযে ডান হাত বাম হাতের উপর রাখতে।’
ﺳﻤﻌﺖ ﻧﺒﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﻘﻮﻝ : ﺇﻧﺎ ﻣﻌﺎﺷﺮ ﺍﻷﻧﺒﻴﺎﺀ ﺃﻣﺮﻧﺎ ﺑﺘﻌﺠﻴﻞ ﻓﻄﺮﻧﺎ ﻭﺗﺄﺧﻴﺮ ﺳﺤﻮﺭﻧﺎ ﻭﺃﻥ ﻧﻀﻊ ﺃﻳﻤﺎﻧﻨﺎ ﻋﻠﻰ ﺷﻤﺎﺋﻠﻨﺎ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ . ﻗﺎﻝ ﺍﻟﻬﻴﺜﻤﻲ
ﻓﻲ ﻣﺠﻤﻊ ﺍﻟﺰﻭﺍﺋﺪ ١ / ٢۷٥ : ﺭﺟﺎﻟﻪ ﺭﺟﺎﻝ ﺍﻟﺼﺤﻴﺢ.
-সহীহ ইবনে হিববান ৩/১০১, হাদীস : ১৭৬৬; আলমুজামুল কাবীর ১১/১৫৯, হাদীস : ১১৪৮৫
হারিছ ইবনে গুতাইফ রা. বলেন,
‘আমি এটা ভুলিনি যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বাম হাতের উপর ডান হাত রাখতে দেখেছি, অর্থাৎ নামাযে।’
ﻣﻬﻤﺎ ﺭﺃﻳﺖ ﻧﺴﻴﺖ ﻟﻢ ﺃﻧﺲ ﺃﻧﻲ ﺭﺃﻳﺖ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻭﺿﻊ ﻳﺪﻩ ﺍﻟﻴﻤﻨﻰ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻴﺴﺮﻯ ﻳﻌﻨﻲ : ﻓﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ .
-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৩৯৫৬; মুসনাদে আহমদ ৪/১০৫, হাদীস : ১৬৯৬৭-৬৮, ২২৪৯৭
মোটকথা, নামাযে হাত বেঁধে দাঁড়ানো সুন্নাহ। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনেক সাহাবী তা বর্ণনা করেছেন। এ কারণে নামাযে হাত ছেড়ে দাঁড়ানো, যা মালেকী মাযহাবের কোনো কোনো ইমাম গ্রহণ করেছেন, মূল সুন্নাহ নয়।
মালেকী মাযহাবের প্রাচীন গ্রন্থ ‘‘আলমুদাওয়ানাতুল কুবরা’’য় আছে, আবদুর রহমান ইবনুল কাসিম রাহ. ইমাম মালিক রাহ. থেকে নামাযে ডান হাত বাম হাতের উপর রাখার বিষয়ে বর্ণনা করেছেন যে, ‘ফরয নামাযে এই নিয়ম আমার জানা নেই এবং তিনি তা অপছন্দ করতেন। তবে নফল নামাযে কিয়াম যখন দীর্ঘ হয় তখন হাত বাঁধতে বাঁধা নেই।’
ﻗﺎﻝ : ﻭﻗﺎﻝ ﻣﺎﻟﻚ ﻓﻲ ﻭﺿﻊ ﺍﻟﻴﻤﻨﻰ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻴﺴﺮﻯ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻗﺎﻝ : ﻻ ﺃﻋﺮﻑ ﺫﻟﻚ ﻓﻲ ﺍﻟﻔﺮﻳﻀﺔ ﻭﻛﺎﻥ ﻳﻜﺮﻫﻪ، ﻭﻟﻜﻦ ﻓﻲ ﺍﻟﻨﻮﺍﻓﻞ ﺇﺫﺍ ﻃﺎﻝ ﺍﻟﻘﻴﺎﻡ ﻓﻼ ﺑﺄﺱ ﺑﺬﻟﻚ ﻳﻌﻴﻦ ﺑﻪ ﻧﻔﺴﻪ .
কিন্তু এ রেওয়ায়েত উল্লেখ করার পর সুহনূন (গ্রন্থকার) বলেন,
‘আবদুল্লাহ ইবনে ওয়াহব রাহ. সুফিয়ান ছাওরী রাহ.-এর সূত্রে একাধিক সাহাবী থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তাঁরা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নামাযে ডান হাত বাম হাতের উপর রাখতে দেখেছেন।
ﻗﺎﻝ ﺳﺤﻨﻮﻥ ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻭﻫﺐ ﻋﻦ ﺳﻔﻴﺎﻥ ﺍﻟﺜﻮﺭﻱ ﻋﻦ ﻏﻴﺮ ﻭﺍﺣﺪ ﻣﻦ ﺃﺻﺤﺎﺏ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺃﻧﻬﻢ ﺭﺃﻭﺍ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻭﺍﺿﻌﺎ ﻳﺪﻩ ﺍﻟﻴﻤﻨﻰ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻴﺴﺮﻯ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ .
-আলমুদাওয়ানাহ ১/৭৬
ইমাম মালেক রাহ.-এর অন্য অনেক শাগরিদ তাঁর থেকে হাত বাঁধার নিয়ম বর্ণনা করেছেন। মালেকী মাযহাবের বিখ্যাত মনীষীদের অনেকেই তাঁর এই রেওয়ায়েতকেই বিশুদ্ধ ও অগ্রগণ্য বলে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।
ইমাম মালিক রাহ.-এর
‘আলমুয়াত্তা’য় এ নিয়মই বর্ণিত হয়েছে।
‘আততাজ ওয়াল ইকলীল লিমুখতাসারিল খালীল’ কিতাবে ইমাম মালেক রাহ. থেকে হাত বাঁধার নিয়ম বর্ণনা করার পর ইবনে রুশদ মালেকীর বক্তব্য উল্লেখ করা হয়েছে যে, ‘এটিই অগ্রগণ্য ও শক্তিশালী। কারণ প্রথম যুগে মানুষকে এরই আদেশ করা হত।’
ﺍﺑﻦ ﺭﺷﺪ : ﻭﻫﺬﺍ ﻫﻮ ﺍﻷﻇﻬﺮ، ﻷﻥ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻛﺎﻧﻮﺍ ﻳﺆﻣﺮﻭﻥ ﺑﻪ ﻓﻲ ﺍﻟﺰﻣﺎﻥ ﺍﻷﻭﻝ .
তদ্রূপ কাযী ইয়ায মালেকী রাহ. থেকে বর্ণনা করা হয়েছে যে, আমাদের শায়খগণ ডান হাতের পাতা বাম হাতের কব্জির উপর মুঠ করার নিয়মই গ্রহণ করেছেন।’
ﻋﻴﺎﺽ : ﺍﺧﺘﺎﺭ ﺷﻴﻮﺧﻨﺎ ﻗﺒﺾ ﻛﻒ ﺍﻟﻴﻤﻨﻰ ﻋﻠﻰ ﺭﺳﻎ ﺍﻟﻴﺴﺮﻯ .
-আততাজ ওয়াল ইকলীল, আবু আবদিল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনে ইউসুফ আলমাওওয়াক আলমালেকী (৮৯৭ হি.) মাওয়াহিবুল জালীলের সাথে মুদ্রিত ২/২৪০
ইমাম কুরতুবী মালেকী রাহ.ও (৬৭১ হি.) হাত বাঁধার রেওয়ায়েতকে অগ্রগণ্য সাব্যস্ত করে বলেন,
‘এটিই সঠিক। কারণ হযরত ওয়াইল রা. ও অন্যান্য সাহাবী বর্ণনা করেছেন যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ডান হাত বাম হাতের উপর রেখেছেন।’ -আলজামি লিআহকামিল কুরআনিল কারীম ২০/১৫০ এ প্রসঙ্গে মালেকী মাযহাবের বিখ্যাত মনীষী ইমাম ইবনে আবদুল বার রাহ. (৪৬৩ হি.) শক্তিশালী আলোচনা করেছেন। তিনি হাত বাঁধার নিয়মকে শুধু অগ্রাধিকারই দেননি; বরং এর বিপরীতে ইমাম মালেক রাহ. থেকে যা কিছু বর্ণনা করা হয় তা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় খন্ডনও করেছেন। তাঁর আলোচনার কিছু অংশ মূল পাঠসহ তুলে দেওয়া হল।
তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে (নামাযে ডান হাত বাম হাতের উপর রাখা) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ভিন্ন কিছু বর্ণিত হয়নি এবং কোনো সাহাবী এ নিয়মের বিরোধিতা করেছেন বলে আমাদের জানা নেই। শুধু আবদুল্লাহ ইবনুয যুবায়ের রা. সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়, তিনি নামাযে হাত ছেড়ে রাখতেন, তবে এর বিপরীত কথাও তাঁর থেকে বর্ণিত হয়েছে। ইতিপূর্বে আমরা তাঁর বক্তব্য উল্লেখ করেছি যে, ‘সুন্নাহ হচ্ছে ডান হাত বাম হাতের উপর রাখা।’
জুমহূর তাবেয়ীন ও মুসলিম উম্মাহর আহলুর রায় ও আহলুল আছর উভয় ঘরানার অধিকাংশ ফকীহ এই নিয়মই গ্রহণ করেছেন।’
ﻟﻢ ﺗﺨﺘﻠﻒ ﺍﻵﺛﺎﺭ ﻋﻦ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓﻲ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﺒﺎﺏ ﻭﻻ ﺃﻋﻠﻢ ﻋﻦ ﺃﺣﺪ ﻣﻦ ﺍﻟﺼﺤﺎﺑﺔ ﻓﻲ ﺫﻟﻚ ﺧﻼﻓﺎ ﺍﻻﺷﻲﺀ ﺭﻭﻱ ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﺍﻟﺰﺑﻴﺮ ﺃﻧﻪ ﻛﺎﻥ ﻳﺮﺳﻞ ﻳﺪﻳﻪ ﺇﺫﺍ ﺻﻠﻰ ﻭﻗﺪ ﺭﻭﻯ ﻋﻨﻪ ﺧﻼﻓﻪ ﻣﻤﺎ ﻗﺪﻣﻨﺎ ﺫﻛﺮﻩ ﻋﻨﻪ ﻭﺫﻟﻚ ﻗﻮﻟﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ‏( ﻛﺬﺍ ‏) ﻭﺿﻊ ﺍﻟﻴﻤﻴﻦ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺸﻤﺎﻝ ﻣﻦ ﺍﻟﺴﻨﺔ، ﻭﻋﻠﻰ ﻫﺬﺍ ﺟﻤﻬﻮﺭ ﺍﻟﺘﺎﺑﻌﻴﻦ ﻭﺃﻛﺜﺮ ﻓﻘﻬﺎﺀ ﺍﻟﻤﺴﻠﻤﻴﻦ ﻣﻦ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺮﺃﻱ ﻭﺍﻷﺛﺮ .
-আততামহীদ ২০/৭৪-৭৫
তিনি আরো বলেন, ‘ইবনুল কাসিম ছাড়া অন্যরা ইমাম মালেক রাহ. থেকে বর্ণনা করেছেন যে, ফরয-নফল কোনো নামাযেই হাত বাঁধতে বাধা নেই। আর এটিই তাঁরা মদীনাবাসী শাগরিদদের বর্ণনা।’
... ﻭﻗﺎﻝ ﻋﻨﻪ ‏( ﺃﻱ ﻋﻦ ﻣﺎﻟﻚ ‏) ﻏﻴﺮ ﺍﺑﻦ ﺍﻟﻘﺎﺳﻢ : ﻻ ﺑﺄﺱ ﺑﺬﻟﻚ ﻓﻲ ﺍﻟﻔﺮﻳﻀﺔ ﻭﺍﻟﻨﺎﻓﻠﺔ، ﻭﻫﻲ ﺭﻭﺍﻳﺔ ﺍﻟﻤﺪﻧﻴﻴﻦ ﻋﻨﻪ .
-প্রাগুক্ত
এরপর কোনো কোনো তাবেয়ী থেকে নামাযে হাত ছেড়ে রাখার যে বর্ণনা পাওয়া যায় সে সম্পর্কে দীর্ঘ আলোচনার পর তিনি বলেন, ‘এই হচ্ছে কতিপয় তাবেয়ীর (আমলের) কিছু বিবরণ। তবে তা (আলোচিত সুন্নাহর) খিলাফ ও বিরোধিতা নয়। কারণ তাদের কেউ (হাত বাঁধা) অপছন্দ করতেন এমনটা পাওয়া যায় না। আর পাওয়া গেলেও তা দলীল হিসেবে গ্রহণ করা যেত না। কারণ সুন্নাহর অনুসারীদের জন্য সুন্নাহই হচ্ছে দলীল। আর যারা এর বিরোধিতা করে তাদের বিরুদ্ধেও দলীল হচ্ছে সুন্নাহ, বিশেষত যে সুন্নাহয় কোনো সাহাবীর ভিন্নমত নেই।
ﻓﻬﺬﺍ ﻣﺎ ﺭﻭﻱ ﻋﻦ ﺑﻌﺾ ﺍﻟﺘﺎﺑﻌﻴﻦ ﻓﻲ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﺒﺎﺏ ﻭﻟﻴﺲ ﺑﺨﻼﻑ، ﻷﻧﻪ ﻻ ﻳﺜﺒﺖ ﻋﻦ ﻭﺍﺣﺪ ﻣﻨﻬﻢ ﻛﺮﺍﻫﻴﺔ، ﻭﻟﻮ ﺛﺒﺖ ﺫﻟﻚ ﻣﺎ ﻛﺎﻧﺖ ﻓﻴﻪ ﺣﺠﺔ، ﻷﻥ ﺍﻟﺤﺠﺔ ﻓﻲ ﺍﻟﺴﻨﺔ ﻟﻤﻦ ﺍﺗﺒﻌﻬﺎ، ﻭﻣﻦ ﺧﺎﻟﻔﻬﺎ ﻓﻬﻮ ﻣﺤﺠﻮﺝ ﺑﻬﺎ، ﻭﻻ ﺳﻴﻤﺎ ﺳﻨﺔ ﻟﻢ ﻳﺜﺒﺖ ﻋﻦ ﻭﺍﺣﺪ ﻣﻦ ﺍﻟﺼﺤﺎﺑﺔ ﺧﻼﻓﻬﺎ.
-প্রাগুক্ত ২০/৭৬
তিনি আরো বলেন, ‘(হাত বাধার ক্ষেত্রে) ফরয-নফলে পার্থক্য করার কোনো যুক্তি নেই, যদিও কেউ বলে থাকেন যে, হাত বাঁধার নিয়মটি নফল নামাযের ক্ষেত্রে, ফরযের ক্ষেত্রে নয়। কারণ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাধারণত নফল নামায ঘরে আদায় করতেন। সুতরাং এটা যদি তাঁর ঘরের নামাযের নিয়ম হত তাহলে তা বর্ণনা করতেন তাঁর স্ত্রীগণ। কিন্তু তাঁরা এ বিষয়ে কিছুই বর্ণনা করেননি। যাঁরা বর্ণনা করেছেন যে, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযে ডান হাত বাম হাতের উপর রাখতেন তাঁরা তাঁর নিকট রাত্রিযাপন করতেন না এবং তাঁর ঘরেও প্রবেশ করতেন না। তাঁরা তো তা-ই বর্ণনা করেছেন, যা তাঁকে করতে দেখেছেন তাঁর পিছনে ফরয নামায আদায়ের সময়।’
ﻭﻛﺬﻟﻚ ﻻ ﻭﺟﻪ ﻟﻠﺘﻔﺮﻗﺔ ﺑﻴﻦ ﺍﻟﻨﺎﻓﻠﺔ ﻭﺍﻟﻔﺮﻳﻀﺔ، ﻭﻟﻮ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﺋﻞ ﺇﻥ ﺫﻟﻚ ﻓﻲ ﺍﻟﻔﺮﻳﻀﺔ ﺩﻭﻥ ﺍﻟﻨﺎﻓﻠﺔ، ﻷﻥ ﺃﻛﺜﺮ ﻣﺎ ﻛﺎﻥ ﻳﺘﻨﻔﻞ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓﻲ ﺑﻴﺘﻪ ﻟﻴﻼ، ﻭﻟﻮ ﻓﻌﻞ ﺫﻟﻚ ﻓﻲ ﺑﻴﺘﻪ ﻟﻨﻘﻞ ﻋﻨﻪ ﺫﻟﻚ ﺃﺯﻭﺍﺟﻪ ﻭﻟﻢ ﻳﺄﺕ ﻋﻨﻬﻦ ﻓﻲ ﺫﻟﻚ ﺷﻲﺀ، ﻭﻣﻌﻠﻮﻡ ﺃﻥ ﺍﻟﺬﻳﻦ ﺭﻭﻭﺍ ﻋﻨﻪ ﺃﻧﻪ ﻛﺎﻥ ﻳﻀﻊ ﻳﻤﻴﻨﻪ ﻋﻠﻰ ﻳﺴﺎﺭﻩ ﻓﻲ ﺻﻼﺗﻪ ﻟﻢ ﻳﻜﻮﻧﻮﺍ ﻣﻤﻦ ﻳﺒﻴﺖ ﻋﻨﺪﻩ، ﻭﻻ ﻳﻠﺞ ﺑﻴﺘﻪ، ﻭﺇﻧﻤﺎ ﺣﻜﻮﺍ ﻋﻨﻪ ﻣﺎ ﺭﺃﻭﺍ ﻣﻨﻪ ﻓﻲ ﺻﻼﺗﻬﻢ ﺧﻠﻔﻪ ﻓﻲ ﺍﻟﻔﺮﺍﺋﺾ، ﻭﺍﻟﻠﻪ ﺃﻋﻠﻢ .
-প্রাগুক্ত ২০/৭৯
হাত কোথায় বাঁধা হবে
তো এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযে হাত বাঁধতেন এবং সাহাবায়ে কেরামও হাত বাঁধতেন। এখন প্রশ্ন হল, কোথায় তাঁরা হাত বাঁধতেন? মৌখিক বর্ণনায় হাত বাঁধার মূল প্রসঙ্গ যত পরিষ্কারভাবে এসেছে কোথায় বাঁধতেন তা সেভাবে আসেনি। কেন আসেনি? আসার প্রয়োজন হয়নি। কারণ সবাই হাত বাঁধছেন। কোথায় বাঁধছেন তা সবার সামনেই পরিষ্কার। কাজেই তা মুখে বর্ণনা করার প্রয়োজন হয়নি। তো যে সুন্নাহ কর্মে ও অনুসরণে ব্যাপকভাবে রয়েছে তা মৌখিক বর্ণনায় সেভাবে নেই। এ ধরনের ক্ষেত্রে পরের যুগের লোকদের জন্য সাহাবা-তাবেয়ীনের আমল ও ফতোয়া সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তাঁরা ঐ সময়ের কর্ম ও অনুশীলনের প্রত্যক্ষদর্শী।
নামাযে হাত বাঁধার সুন্নাহর উপর সাহাবা-তাবেয়ীন কীভাবে আমল করেছেন-এ বিষয়ে ইমাম তিরমিযী রাহ. (২৭৯ হি.) বলেন-
ﻭﺍﻟﻌﻤﻞ ﻋﻠﻰ ﻫﺬﺍ ﻋﻨﺪ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﻌﻠﻢ ﻣﻦ ﺃﺻﺤﺎﺏ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻭﺍﻟﺘﺎﺑﻌﻴﻦ ﻭﻣﻦ ﺑﻌﺪﻫﻢ، ﻳﺮﻭﻥ ﺃﻥ ﻳﻀﻊ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﻳﻤﻴﻨﻪ ﻋﻠﻰ ﺷﻤﺎﻟﻪ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ، ﻭﺭﺃﻯ ﺑﻌﻀﻬﻢ ﺃﻥ ﻳﻀﻌﻬﻤﺎ ﻓﻮﻕ ﺍﻟﺴﺮﺓ، ﻭﺭﺃﻯ ﺑﻌﻀﻬﻢ ﺃﻥ ﻳﻀﻌﻬﻤﺎ ﺗﺤﺖ ﺍﻟﺴﺮﺓ، ﻭﻛﻞ ﺫﻟﻚ ﻭﺍﺳﻊ ﻋﻨﺪﻫﻢ .
অর্থাৎ আহলে ইলম সাহাবা-তাবেয়ীন ও তাঁদের পরবর্তী মনীষীগণ এই হাদীসের উপর (ডান হাত দ্বারা বাম হাত ধরা) আমল করেছেন। তাঁদের সিদ্ধান্ত এই ছিল যে, নামাযে ডান হাত বাম হাতের উপর রাখতে হবে। তাঁদের কেউ নাভীর উপর হাত রাখার কথা বলতেন, আর কেউ নাভীর নিচে রাখাকে (অগ্রগণ্য) মনে করতেন। (তবে) দুটো নিয়মই তাঁদের কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল।-জামে তিরমিযী ১/৩৪
বস্ত্তত এটা হচ্ছে হাত বাঁধার হাদীসসমূহের ব্যাখ্যা ও প্রায়োগিক পদ্ধতি। সাহাবা-তাবেয়ীনের যমানা থেকে এ দুটি নিয়মই চলে আসছে। পরবর্তীতে জুমহূর ফকীহ ও মুজতাহিদ ইমামগণ এ দুই নিয়ম গ্রহণ করেছেন। এভাবে উম্মাহর তাওয়ারুছ ও ব্যাপক চর্চার মাধ্যমে নামাযে হাত বাঁধার যে নিয়ম প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে পৌঁছেছে তা উল্লেখিত হাদীসসমূহেরই ব্যবহারিক রূপ। এ কারণে পরবর্তী যুগে বিচ্ছিন্ন কোনো নিয়ম আবিষ্কার করে তাকে হাদীস শরীফের উপর আরোপ করা হাদীসের তাহরীফ ও অপব্যাখ্যা ছাড়া আর কিছুই নয়।
নাভীর নিচে হাত বাঁধা
উপরোক্ত দুই নিয়মের মাঝে নাভীর নিচে হাত বাঁধার নিয়মটি রেওয়ায়েতের বিচারে অগ্রগণ্য। ইমাম ইসহাক ইবনে রাহুয়াহ রাহ. (২৩৮ হি.) বলেছেন, ‘নাভীর নিচে হাত বাঁধা রেওয়ায়েতের বিচারে অধিক শক্তিশালী এবং ভক্তি ও বিনয়ের অধিক নিকটবর্তী।’
ﺗﺤﺖ ﺍﻟﺴﺮﺓ ﺃﻗﻮﻯ ﻓﻲ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﺗﺤﺖ ﺍﻟﺴﺮﺓ ﺃﻗﻮﻯ ﻓﻲ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﻭﺃﻗﺮﺏ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﺘﻮﺍﺿﻊ
 তাবেয়ী আবু মিজলায লাহিক ইবনে হুমাইদ রাহ. (মৃত্যু : ১০০ হি.-এর পর) নামাযে কোথায় হাত বাঁধবে-এ প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, ‘ডান হাতের পাতা বাম হাতের পাতার পিঠের উপর নাভীর নিচে রাখবে।’-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৩৯৬৩
এই রেওয়ায়েতের সনদ সহীহ।
সনদসহ রেওয়ায়েতটির পূর্ণ আরবী পাঠ এই -
ﺣﺪﺛﻨﺎ ﻳﺰﻳﺪ ﺑﻦ ﻫﺎﺭﻭﻥ ﻗﺎﻝ : ﺃﺧﺒﺮﻧﺎ ﺍﻟﺤﺠﺎﺝ ﺑﻦ ﺣﺴﺎﻥ ﻗﺎﻝ : ﺳﻤﻌﺖ ﺃﺑﺎ ﻣﺠﻠﺰ ـ ﺃﻭ ﺳﺄﻟﺘﻪ ـ ﻗﺎﻝ : ﻗﻠﺖ ﻛﻴﻒ ﺃﺻﻨﻊ؟ ﻗﺎﻝ : ﻳﻀﻊ ﺑﺎﻃﻦ ﻛﻒ ﻳﻤﻨﻴﻪ ﻋﻠﻰ ﻇﺎﻫﺮ ﻛﻒ ﺷﻤﺎﻟﻪ ﻭﻳﺠﻌﻠﻬﺎ ﺃﺳﻔﻞ ﻣﻦ ﺍﻟﺴﺮﺓ .
বিখ্যাত তাবেয়ী ইমাম ইবরাহীম নাখায়ী রাহ.ও (মৃত্যু : ৯৬ হি.) এই ফতোয়া দিয়েছেন। তিনি বলেন,
‘নামাযে ডান হাত বাম হাতের উপর নাভীর নিচে রাখবে।’-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৩৯৬০
এই রেওয়ায়েতের সনদ হাসান। সনদসহ রেওয়ায়েতটির পূর্ণ আরবী পাঠ এই-
ﺣﺪﺛﻨﺎ ﻭﻛﻴﻊ، ﻋﻦ ﺭﺑﻴﻊ، ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻣﻌﺸﺮ، ﻋﻦ ﺇﺑﺮﺍﻫﻴﻢ ﻗﺎﻝ : ﻳﻀﻊ ﻳﻤﻴﻨﻪ ﻋﻠﻰ ﺷﻤﺎﻟﻪ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﺗﺤﺖ ﺍﻟﺴﺮﺓ .
ইমাম মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান আশশাইবানী রাহ. (১৮৯ হি.) বর্ণনা করেছেন যে, ইমাম ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. নাভীর নিচে হাত বাঁধতেন। এরপর তিনি বলেন, ‘আমরা এই নিয়মই অনুসরণ করি এবং এটিই (ইমাম) আবু হানীফার সিদ্ধান্ত।’-কিতাবুল আছার, হাদীস : ১২১
সনদসহ রেওয়ায়েতটির আরবী পাঠ এই-
ﻗﺎﻝ ﻣﺤﻤﺪ : ﺃﺧﺒﺮﻧﺎ ﺍﻟﺮﺑﻴﻊ ﺑﻦ ﺻﺒﻴﺢ، ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻣﻌﺸﺮ، ﻋﻦ ﺇﺑﺮﺍﻫﻴﻢ : ﺃﻧﻪ ﻛﺎﻥ ﻳﻀﻊ ﻳﺪﻩ ﺍﻟﻴﻤﻨﻰ ﻋﻠﻰ ﻳﺪﻩ ﺍﻟﻴﺴﺮﻯ ﺗﺤﺖ ﺍﻟﺴﺮﺓ . ﻗﺎﻝ ﻣﺤﻤﺪ : ﻭﺑﻪ ﻧﺄﺧﺬ ﻭﻫﻮ ﻗﻮﻝ ﺃﺑﻲ ﺣﻨﻴﻔﺔ ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ . ‏( ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺼﻼﺓ، ﺑﺎﺏ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻗﺎﻋﺪﺍ ﻭﺍﻟﺘﻌﻤﺪ ﻋﻠﻰ ﺷﻲﺀ ﺃﻭ ﻳﺼﻠﻲ ﺇﻟﻰ ﺳﺘﺮﺓ)
প্রসঙ্গত আগেই বলা হয়েছে যে, সাহাবা-তাবেয়ীনের আমল হচ্ছে হাত বাঁধা সংক্রান্ত মারফূ হাদীসসমূহের ব্যবহারিক রূপ। এ কারণে মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান রাহ. ইমাম ইবরাহীম নাখায়ী রাহ-এর সূত্রে হাত বাঁধার মরফূ হাদীস বর্ণনা করার পর এই নিয়ম দ্বারা ব্যাখ্যা করেছেন।
রেওয়ায়েতটি এই-
ﺃﺧﺒﺮﻧﺎ ﺃﺑﻮ ﺣﻨﻴﻔﺔ، ﻋﻦ ﺣﻤﺎﺩ ﻋﻦ ﺇﺑﺮﺍﻫﻴﻢ ﺃﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻛﺎﻥ ﻳﻌﺘﻤﺪ ﺑﺈﺣﺪﻯ ﻳﺪﻳﻪ ﻋﻠﻰ ﺍﻷﺧﺮﻯ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ، ﻳﺘﻮﺍﺿﻊ ﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ . ﻗﺎﻝ ﻣﺤﻤﺪ : ﻭﻳﻀﻊ ﺑﻄﻦ ﻛﻔﻪ ﺍﻷﻳﻤﻦ ﻋﻠﻰ ﺭﺳﻐﻪ ﺍﻷﻳﺴﺮ، ﺗﺤﺖ ﺍﻟﺴﺮﺓ، ﻓﻴﻜﻮﻥ ﺍﻟﺮﺳﻎ ﻓﻲ ﻭﺳﻂ ﺍﻟﻜﻒ، ‏( ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻷﺛﺎﺭ، ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺼﻼﺓ، ﺑﺎﺏ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻗﺎﻋﺪﺍ ﻭﺍﻟﺘﻌﻤﺪ ﻋﻠﻰ ﺷﻲﺀ ﺃﻭ ﻳﺼﻠﻲ ﺇﻟﻰ ﺳﺘﺮﺓ )
ইমাম ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন, ‘আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযে এক হাতের উপর অন্য হাত বাঁধতেন। এভাবে তিনি আল্লাহর সামনে বিনীত হতেন।’
(ইমাম) মুহাম্মাদ বলেন, ‘ডান হাতের তালু বাম হাতের কব্জির উপর রাখবে, নাভীর নিচে; সুতরাং কব্জি থাকবে হাতের তালুর মাঝে।’-কিতাবুল আছার, হাদীস : ১২০
খাইরুল কুরূন ও পরবর্তী যুগের হাদীস ও ফিকহের বিখ্যাত ইমামগণও নাভীর নিচে হাত বাঁধার নিয়ম গ্রহণ করেছেন।
ইমাম ইবনে কুদামা হাম্বলী রাহ. (৬২০ হি.) বলেন, নামাযে কোথায় হাত বাঁধা হবে এ বিষয়ে বিভিন্ন বর্ণনা আছে। (ইমাম) আহমদ রাহ. থেকে বর্ণিত, দুই হাত নাভীর নিচে রাখবে। এটি (হযরত) আলী রা., আবু হুরায়রা রা., আবু মিজলায রাহ., ইবরাহীম নাখায়ী রাহ., (সুফিয়ান) ছাওরী রাহ., ইসহাক (ইবনে রাহুয়াহ) রাহ. থেকে বর্ণিত।-আলমুগনী ২/১৪১
উল্লেখ্য, ইবনে কুদামা হাম্বলী রাহ. ‘আলমুগনী’তে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহ. থেকে মোট তিনটি রেওয়ায়েত উল্লেখ করেছেন। তবে মূল মতন অর্থাৎ
‘মুখতাসারুল খিরাকী’তে শুধু নাভীর নিচে হাত বাঁধার কথাই বলা হয়েছে।
আরবী পাঠ- ﻭﻳﺠﻌﻞﻫﻢﺍ ﻭﻳﺠﻌﻠﻬﻤﺎ ﺗﺤﺖ ﺳﺮﺗﻪ
‘মুখতাসারে’র ভূমিকায় লেখক ইমাম আবুল কাসিম উমার ইবনুল হুসাইন আলখিরাকী (৩৩৪ হি.) বলেছেন, ‘আমি ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহ.-এর মাযহাব অনুসারে (শরীয়তের মাসাইল) এই কিতাবে সংকলন করেছি।’
ﺍﺧﺘﺼﺮﺕ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﻜﺘﺎﺏ ﻟﻴﻘﺮﺏ ﻋﻠﻰ ﻣﺘﻌﻠﻤﻪ ﻋﻠﻰ ﻣﺬﻫﺐ ﺃﺑﻲ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺃﺣﻤﺪ ﺑﻦ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﺣﻨﺒﻞ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ .
-আলমুগনী ১/৭-৮
শায়খ আবুল হুসাইন ইয়াহইয়া ইবনে আবুল খায়ের রাহ. (মৃত্যু ৫৫৮ হি.) বলেন, (ইমাম) আবু ইসহাক (আলমারওয়াযী) রাহ. বলেছেন,
‘এক হাত অন্য হাতের উপর নাভীর নিচে রাখবে।’-আলবায়ান ফী মাযাহিবিল ইমামিশ শাফেয়ী ২/১৭৫
উল্লেখ্য, ইমাম আবু ইসহাক আলমারওয়াযী রাহ. শাফেয়ী মাযহাবের একজন প্রসিদ্ধ মনীষী। ইমাম শাফেয়ী রাহ. নাভীর উপর (বুকের নিচে) হাত বাঁধার নিয়ম গ্রহণ করলেও আবু ইসহাক মারওয়াযী নাভীর নিচে হাত বাঁধার নিয়মকেই অগ্রগণ্য মনে করেছেন।
ইমাম নববী রাহ. (৬৭৬ হি.) বলেন, (ইমাম) আবু হানীফা, (সুফিয়ান) ছাওরী ও ইসহাক (ইবনে রাহুয়াহ) বলেন, ‘দুই হাত নাভীর নিচে রাখবে। আমাদের (শাফেয়ী মাযহাবের) মনীষীদের মধ্যে আবু ইসহাক আলমারওয়াযী রাহ.ও তা গ্রহণ করেছেন। আর ইবনুল মুনযির তা বর্ণনা করেছেন আবু হুরায়রা, (ইবরাহীম) নাখায়ী ও আবু মিজলায রাহ. থেকে।
তিনি আরো বলেন, ‘আলী ইবনে আবী তালিব রা. থেকে দুটি রেওয়ায়েত আছে : এক. নাভীর উপর হাত বাঁধা, দুই. নাভীর নিচে হাত বাঁধা।
-আলমাজমূ শরহুল মুহাযযাব ৪/৩৩০
উল্লেখ্য, জনৈক গবেষক একটি রেওয়ায়েতের ভিত্তিতে প্রমাণ করতে চেয়েছেন যে, ইমাম ইসহাক ইবনে রাহুয়াহ রাহ. নামাযে বুকের উপর হাত বাঁধার অনুসারী ছিলেন। কিন্তু তার এই প্রয়াস যথার্থ নয়। কারণ হাদীস ও ফিকহের বিখ্যাত মনীষীগণ ইমাম ইসহাক ইবনে রাহুয়াহ রাহ. সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি নাভীর নিচে হাত বাঁধার নিয়ম গ্রহণ করেছেন। ইবনুল মুনযির রাহ. (৩১৮ হি.) স্বয়ং ইসহাক ইবনে রাহুয়াহর দ্ব্যর্থহীন বক্তব্য উদ্ধৃত করেছেন যে, ‘নাভীর নিচে হাত বাঁধা রেওয়ায়েতের বিচারে শক্তিশালী এবং ভক্তি ও বিনয়ের অধিক নিকটবর্তী।’
সুতরাং এখানে সংশয়ের কোনো অবকাশ নেই। আর যে রেওয়ায়েতের ভিত্তিতে বলা হয়েছে, তিনি বুকের উপর হাত বাঁধতেন ঐ রেওয়ায়েতেও তা নিশ্চিতভাবে বলা হয়নি। বলা হয়েছে, তিনি বিতর নামাযে বুকের উপর হাত বাঁধতেন বা বুকের নিচে।
আরবী পাঠ-
ﻛﺎﻥ ﺇﺳﺤﺎﻕ ﻳﻮﺗﺮ ﺑﻨﺎ ... ﻭﻳﻀﻊ ﻳﺪﻳﻪ ﻋﻠﻰ ﺛﺪﻳﻴﻪ ﺃﻭ ﺗﺤﺖ ﺍﻟﺜﺪﻳﻴﻦ .
আমরা ইতিপূর্বে আলোচনা করেছি যে, নাভীর নিচে ও নাভীর উপরে (বুকের নিচে) দু’ জায়গায় হাত বাঁধার নিয়মই সাহাবা-তাবেয়ীনের যুগে ছিল। তাঁরা একটিকে অগ্রগণ্য মনে করলেও কেউ অন্যটিকে অনুসরণযোগ্য মনে করতেন। তো ইসহাক ইবনে রাহুয়াহ রাহ. যদি নাভীর নিচে হাত বাঁধাকে অগ্রগণ্য মনে করার পর কখনো কখনো নাভীর উপরে হাত বাঁধার নিয়ম অনুসরণ করে থাকেন তাতে আশ্চর্যের কী আছে। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই একটি অস্পষ্ট রেওয়ায়েতের ভিত্তিতে কোনো একটি বিচ্ছিন্ন মত কারো উপর আরোপ করার অবকাশ নেই। এটি বরং আরোপকারীর দলীল-প্রমাণের দৈন্য এবং শুযূয ও বিছিন্নতাকেই প্রকটভাবে প্রকাশিত করে দেয়।
মূল আলোচনায় ফিরে আসি। এ পর্যন্ত আমরা খাইরুল কুরূন ও পরবর্তী যুগের হাদীস ও ফিকহের বিখ্যাত ইমামগণের ফতোয়া ও আমল লক্ষ্য করেছি। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, সাহাবা-তাবেয়ীনের যমানায় নাভীর নিচে হাত বাঁধার নিয়ম ব্যাপকভাবে অনুসৃত হয়েছে, যা হাত বাঁধার মরফূ হাদীসমূহেরই ব্যাখ্যা ও ব্যবহারিক রূপ।
নাভীর নিচে হাত বাঁধা যেমন সাহাবা-তাবেয়ীনের আমল ও ফতোয়া দ্বারা প্রমাণিত তেমনি মারফূ রেওয়ায়েতের সূত্রেও আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত।
নাভীর নিচে হাত বাঁধার মারফূ রেওয়ায়েত
১. হযরত ওয়াইল ইবনে হুজর রা. থেকে বর্ণিত, ‘আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছি, তিনি নামাযে ডান হাত বাম হাতের উপর নাভীর নীচে রেখেছেন।
সনদসহ রেওয়ায়েতের আরবী পাঠ এই-
ﺣﺪﺛﻨﺎ ﻭﻛﻴﻊ، ﻋﻦ ﻣﻮﺳﻰ ﺑﻦ ﻋﻤﻴﺮ، ﻋﻦ ﻋﻠﻘﻤﺔ ﺑﻦ ﻭﺍﺋﻞ ﺑﻦ ﺣﺠﺮ، ﻋﻦ ﺃﺑﻴﻪ ﻗﺎﻝ : ﺭﺃﻳﺖ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﻀﻊ ﻳﻤﻴﻨﻪ ﻋﻠﻰ ﺷﻤﺎﻟﻪ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﺗﺤﺖ ﺍﻟﺴﺮﺓ .
-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৩৯৫১
এই বর্ণনার সনদ সহীহ। ইমাম কাসেম ইবনে কুতলূবুগা রাহ. (৮৭৯ হি.) বলেন- ﻭﻫﺬﺍ ﺇﺳﻨﺎﺩ ﺟﻲﺩ এটি একটি উত্তম সনদ।-আততা’রীফু ওয়াল ইখবার রিতাখরীজি আহাদীছিল ইখতিয়ার-হাশিয়া শায়খ মুহাম্মাদ আওয়ামা
উল্লেখ্য, মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবার একাধিক পান্ডুলিপিতে হাদীসটি এভাবেই অর্থাৎ ﺓﺡﺓ
ﺍﻟﺴﺮﺓ (নাভীর নিচে) কথাটাসহ আছে। এর মধ্যে ইমাম মুরতাযা আযাবীদী-এর পান্ডুলিপি ও ইমাম আবিদ আসসিন্দী রাহ.-এর পান্ডুলিপি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ইমাম কাসিম ইবনে কুতলূবুগা রাহ., আল্লামা আবদুল কাদির ইবনে আবু বকর আসসিদ্দীকি ও আল্লামা মুহাম্মাদ আকরাম সিন্ধীর পান্ডুলিপিতেও হাদীসটি এভাবে আছে। পক্ষান্তরে অন্য কিছু পান্ডুলিপিতে এই বর্ণনায়
ﺓﺡﺓ ﺍﻟﺴﺮﺓ (নাভীর নিচে) কথাটা নেই। এ কারণে ভারতবর্ষে মুদ্রিত মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবার পুরানো সংস্করণে এই হাদীসে
ﺓﺡﺓ ﺍﻟﺴﺮﺓ (নাভীর নিচে) অংশটি ছিল না। বর্তমানে মদীনা মুনাওয়ারার বিখ্যাত ফকীহ ও মুহাদ্দিস শায়খ মুহাম্মদ আওয়ামার তাহকীক-সম্পাদনায় মুসান্নাফের যে মুদ্রণ পাঠক-গবেষকদের কাছে পৌঁছেছে তাতে হাদীসটি ﺓﺡﺓ ﺍﻟﺴﺮﺓ (নাভীর নিচে) অংশসহ রয়েছে। কারণ শায়খের সামনে প্রথমোক্ত পান্ডুলিপি দুটিও ছিল। এ বিষয়ে
বিস্তারিত আলোচনার পর শায়খ বলেন-
ﻭﻣﻦ ﻧﻘﻞ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﻣﻦ ﺇﺣﺪﻯ ﺍﻟﻨﺴﺦ ﺍﻷﺭﺑﻊ ﺥ . ﻅ . ﻥ . ﺵ . ﺍﻟﺘﻲ ﻟﻴﺴﺖ ﻓﻴﻬﺎ ﻫﺬﻩ ﺍﻟﺠﻤﻠﺔ : ﻣﻌﺬﻭﺭ ﻓﻲ ﻋﺪﻡ ﺇﺛﺒﺎﺕ ﻫﺬﻩ ﺍﻟﺰﻳﺎﺩﺓ، ﻭﻟﻜﻨﻪ ﻟﻴﺲ ﻣﻌﺬﻭﺭﺍ ﻓﻲ ﻧﻔﻲ ﻭﺭﻭﺩﻫﺎ، ﻭﻣﻦ ﻧﻘﻠﻪ ﻋﻦ ﺇﺣﺪﻯ ﺍﻟﻨﺴﺨﺘﻴﻦ ﺍﻟﻠﺘﻴﻦ ﻓﻴﻬﻤﺎ ﻫﺬﻩ ﺍﻟﺰﻳﺎﺩﺓ ﻫﻮ ﻣﻌﺬﻭﺭ ﻓﻲ ﺇﺛﺒﺎﺗﻬﺎ، ﺑﻞ ﻭﺍﺟﺐ ﻋﻠﻴﻪ ﺫﻟﻚ ﻭﻻ ﻳﺠﻮﺯ ﻟﻬﺎ ﺣﺬﻓﻬﺎ ﻓﻌﻠﻰ ﻡ ﺍﻟﺘﻨﺎﺑﺰ ﻭﺍﻟﺘﻨﺎﺑﺬ؟
উৎসাহী আলিমগণ শায়খের পূর্ণ আলোচনা মুসান্নাফের টীকায় দেখে নিতে পারেন।
উল্লেখ্য, যারা মুআম্মাল ইবনে ইসমাইলের মুনকার রেওয়ায়েত অবলীলায় গ্রহণ করেন তাদের তো এই রেওয়ায়েত গ্রহণে দ্বিধা থাকার কথা নয়। কারণ এক. এই রেওয়ায়েতের সনদ ইবনে খুযায়মার ঐ রেওয়ায়েতের চেয়ে অনেক শক্তিশালী। দুই. ওয়াইল ইবনে হুজর রা. থেকে অন্য সূত্রে বর্ণিত কিছু রেওয়ায়েতেও এর বেশ সমর্থন পাওয়া যায়। ইমাম তবারানী রাহ. হুজর আবুল আম্বাসের সূত্রে ওয়াইল ইবনে হুজর রা.-এর এই বিবরণ উল্লেখ করেছেন। তাতে আছে, ‘তিনি তার ডান হাত বাম হাতের উপর রাখলেন এবং তা রাখলেন পেটের উপর।’
সনদসহ রেওয়ায়েতটির আরবী পাঠ এই-
ﺣﺪﺛﻨﺎ ﺃﺑﻮ ﻣﺴﻠﻢ ﺍﻟﻜﺸﻲ ﺛﻨﺎ ﺣﺠﺎﺝ ﺑﻦ ﻧﺼﻴﺮ ﺛﻨﺎ ﺷﻌﺒﺔ ﻋﻦ ﺳﻠﻤﺔ ﺑﻦ ﻛﻬﻴﻞ ﻗﺎﻝ : ﺳﻤﻌﺖ ﺣﺠﺮﺍ ﺃﺑﺎ ﺍﻟﻌﻨﺒﺲ ﻳﺤﺪﺙ ﻋﻦ ﻭﺍﺋﻞ ﺍﻟﺤﻀﺮﻣﻲ ﺃﻧﻪ ﺻﻠﻰ ﻣﻊ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ... ، ﺛﻢ ﻭﺿﻊ ﻳﺪﻩ ﺍﻟﻴﻤﻨﻰ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻴﺴﺮﻯ ﻭﺟﻌﻠﻬﺎ ﻋﻠﻰ ﺑﻄﻨﻪ .
-আলমুজামুল কাবীর ২২/৪৪, হাদীস : ১১০
তেমনি সুনানে দারেমী ও আলমু’জামুল কাবীর তবারানীতে আবদুল জাববার ইবনে ওয়াইলের সূত্রে ওয়াইল ইবনে হুজর রা.-এর যে বিবরণ বর্ণিত হয়েছে, তাতে আছে, ‘তিনি ডান হাত বাম হাতের উপর কব্জির কাছে রাখলেন।’ সনদসহ রেওয়ায়েতটির আরবী পাঠ এই-
ﻗﺎﻝ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﺍﻟﺪﺍﺭﻣﻲ ﻓﻲ ﺍﻟﺴﻨﻦ ‏( ﺑﺎﺏ ﻭﺿﻊ ﺍﻟﻴﻤﻴﻦ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺸﻤﺎﻝ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ ‏) : ﺃﺧﺒﺮﻧﺎ ﺃﺑﻮ ﻧﻌﻴﻢ، ﺛﻨﺎ ﺯﻫﻴﺮ، ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﺇﺳﺤﺎﻕ، ﻋﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺠﺒﺎﺭ ﺑﻦ ﻭﺍﺋﻞ، ﻋﻦ ﺃﺑﻴﻪ ﻗﺎﻝ : ﺭﺃﻳﺖ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﻀﻊ ﻳﺪﻩ ﺍﻟﻴﻤﻨﻰ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻴﺴﺮﻯ ﻗﺮﻳﺒﺎ ﻣﻦ ﺍﻟﺮﺳﻎ .
ﺍﻧﺘﻬﻰ
ﻭﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﻄﺒﺮﺍﻧﻲ ﺑﻄﺮﻳﻖ ﻋﺒﺪﺍﻥ ﺑﻦ ﺃﺣﻤﺪ، ﺛﻨﺎ ﻋﻤﺮﻭ ﺑﻦ ﻋﺜﻤﺎﻥ ﺍﻟﺤﻤﺼﻲ، ﺛﻨﺎ ﺇﺳﻤﺎﻋﻴﻞ ﺑﻦ ﻋﻴﺎﺵ، ﻋﻦ ﻳﻮﻧﺲ ﺑﻦ ﺃﺑﻲ ﺇﺳﺤﺎﻕ ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﺇﺳﺤﺎﻕ ﺑﻪ .
-সুনানে দারেমী ১/২২৮; আলমুজামুল কাবীর, তবারানী ২২/২৫, হাদীস : ৫২
এই রেওয়ায়েতগুলো সামনে রাখলে বোঝা যায়, আসিম ইবনে কুলাইবের সূত্রে ওয়াইল ইবনে হুজর রা.-এর যে বিবরণ যাইদা ইবনে কুদামা বর্ণনা করেছেন, যাতে ‘ডান হাত বাম হাতের পাতার পিঠ, কব্জি ও বাহুর উপর’ রাখার কথা আছে, তার অর্থ ‘বাহু বাহুর উপর’ রাখা নয়; বরং ডান হাতের পাতা এমনভাবে রাখা যে, তা বাম হাতের পাতা, কব্জি ও বাহুর কিছু অংশের উপর থাকে। এ সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব বুকের উপর হাত বাঁধার মতটি পর্যালোচনা করার সময় ইনশাআল্লাহ।
নাভীর নিচে হাত বাঁধার বিষয়ে জয়ীফ সনদে বর্ণিত কিছু রেওয়ায়েতও আছে। তবে রেওয়ায়েতগুলোর বিষয়বস্ত্ত উপরে বর্ণিত হাদীস, আছার ও আমলে মুতাওয়ারাছ দ্বারা সমর্থিত।
২. হযরত আলী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘সুন্নাহ হচ্ছে নামাযে হাতের পাতা হাতের পাতার উপর নাভীর নিচে রাখা।’-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৮৭৫; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৭৫৬; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৩৯৬৬
সনদসহ রেওয়ায়েতটির পূর্ণ আরবী পাঠ এই-
ﺣﺪﺛﻨﺎ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﻣﺤﺒﻮﺏ، ﺣﺪﺛﻨﺎ ﺣﻔﺺ ﺑﻦ ﻏﻴﺎﺙ، ﻋﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺑﻦ ﺇﺳﺤﺎﻕ، ﻋﻦ ﺯﻳﺎﺩ ﺑﻦ ﺯﻳﺪ، ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﺟﺤﻴﻔﺔ ﺃﻥ ﻋﻠﻴﺎ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻗﺎﻝ : ﺍﻟﺴﻨﺔ ﻭﺿﻊ ﺍﻟﻜﻒ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻜﻒ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﺗﺤﺖ ﺍﻟﺴﺮﺓ .
ﻗﺎﻝ ﺍﻟﻤﺰﻱ ﻓﻲ ﺗﺤﻔﺔ ﺍﻷﺷﺮﺍﻑ ٨ / ٤٥٨ ، ﻫﺬﺍ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﻓﻲ ﺭﻭﺍﻳﺔ ﺍﺑﻲ ﺳﻌﻴﺪ ﺑﻦ ﺍﻷﻋﺮﺍﺑﻲ، ﻭﺍﺑﻦ ﺩﺍﺳﺔ ﻭﻏﻴﺮ ﻭﺍﺣﺪ ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﺩﺍﻭﺩ، ﻭﻟﻢ ﻳﺬﻛﺮﻩ ﺃﺑﻮ ﺍﻟﻘﺎﺳﻢ .
৩. আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, ‘নামাযে হাতের পাতাসমূহ দ্বারা হাতের পাতাসমূহ নাভীর নীচে ধরা হবে।’
সনদসহ রেওয়ায়েতটির আরবী পাঠ এই-
ﺣﺪﺛﻨﺎ ﻣﺴﺪﺩ، ﺣﺪﺛﻨﺎ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻮﺍﺣﺪ ﺑﻦ ﺯﻳﺎﺩ، ﻋﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺑﻦ ﺇﺳﺤﺎﻕ ﺍﻟﻜﻮﻓﻲ، ﻋﻦ ﺳﻴﺎﺭ ﺃﺑﻲ ﺍﻟﺤﻜﻢ، ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻭﺍﺋﻞ ﻗﺎﻝ : ﻗﺎﻝ ﺃﺑﻮ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ : ﺃﺧﺬ ﺍﻷﻛﻒ ﻋﻠﻰ ﺍﻷﻛﻒ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﺗﺤﺖ ﺍﻟﺴﺮﺓ .
-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৭৫৮, তাহকীক : শায়খ মুহাম্মাদ আওয়ামাহ; তুহফাতুল আশরাফ, হাদীস : ১৩৪৯৪
এই দুই রেওয়ায়েতের সনদে আবদুর রহমান ইবনে ইসহাক নামক একজন রাবী আছেন। ইমাম তিরমিযী রাহ. তার সূত্রে বর্ণিত একটি হাদীসকে হাসান বলেছেন। দেখুন : জামে তিরমিযী, হাদীস : ৩৪৬২; আরো দেখুন : হাদীস ২৫২৭
আবদুর রহমান ইবনে ইসহাকের সূত্রে হাদীসটি (২৫২৬) বর্ণনা করার পর ইমাম তিরমিযী বলেন, কোনো কোনো মনীষী এই আবদুর রহমান ইবনে ইসহাকের স্মৃতিশক্তি সম্পর্কে সমালোচনা করেছেন। আরবী পাঠ-
ﺍ ﻫﺬﺍ ﺣﺪﻳﺚ ﻏﺮﻳﺐ ﻭﻗﺪ ﺗﻜﻠﻢ ﺑﻌﺾ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﻌﻠﻢ ﻓﻲ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﻫﺬﺍ ﻣﻦ ﻗﺒﻞ ﺣﻔﻈﻪ ﻭﻫﻮ ﻛﻮﻓﻲ، ﻭﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺑﻦ ﺇﺳﺤﺎﻕ ﺍﻟﻘﺮﺷﻲ ﻣﺪﻳﻨﻲ ﻭﻫﻮ ﺃﺛﺒﺖ ﻣﻦ ﻫﺬﺍ . ﺍﻧﺘﻬﻰ
উল্লেখ্য, শায়খ আলবানী রাহ.ও আবদুর রহমান ইবনে ইসহাকের সূত্রে বর্ণিত একটি হাদীসকে শাওয়াহেদের (অন্যান্য বর্ণনার সমর্থনের) কারণে সিলসিলাতুস সহীহায় উল্লেখ করেছেন। দেখুন : সিলসিলাতুস সহীহা হাদিস
৪. আনাস রা. থেকে বর্ণিত,
‘তিনটি বিষয় (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর) নবী-স্বভাবের অন্তর্ভুক্ত: ইফতারে বিলম্ব না করা, সাহরী শেষ সময়ে খাওয়া এবং নামাযে ডান হাত বাম হাতের উপর নাভীর নিচে রাখা।’
ﺛﻼﺙ ﻣﻦ ﺃﺧﻼﻕ ﺍﻟﻨﺒﻮﺓ : ﺗﻌﺠﻴﻞ ﺍﻷﻓﻈﺎﺭ، ﻭﺗﺄﺧﻴﺮ ﺍﻟﺴﺤﻮﺭ، ﻭﻭﺿﻊ ﺍﻟﻴﺪ ﺍﻟﻴﻤﻨﻰ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻴﺴﺮﻯ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﺗﺤﺖ ﺍﻟﺴﺮﺓ .
-আলমুহাল্লা ৩/৩০; আলজাওহারুন নাকী ২/৩১
উল্লেখ্য, ইবনে হাযম রাহ. (৪৫৬ হি.) তাঁর নামাযে হাত বাঁধার আলোচনায় নাভীর নিচে হাত বাঁধার একটি মারফূ হাদীস ও একটি আছর উল্লেখ করেছেন। তবে সেগুলোর সনদ উল্লেখ করেননি।
পক্ষান্তরে এ আলোচনায় বুকের উপর হাত বাঁধার একটি রেওয়ায়েতও উল্লেখ করেননি, না সনদসহ না সনদ ছাড়া। তদ্রূপ হাত বাঁধার নিয়ম উল্লেখ করতে গিয়ে বলেছেন, ‘মুস্তাহাব হল, নামাযী তার ডান হাত বাম হাতের কব্জির উপর রাখবে।’
ﻭﻳﺴﺘﺤﺐ ﺃﻥ ﻳﻀﻊ ﺍﻟﻤﺼﻠﻲ ﻳﺪﻩ ﺍﻟﻴﻤﻨﻰ ﻋﻠﻰ ﻛﻮﻉ ﻳﺪﻩ ﺍﻟﻴﺴﺮﻯ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ، ﻓﻲ ﻭﻗﻮﻓﻪ ﻛﻠﻪ ﻓﻴﻬﺎ .
-আলমুহাল্লা ৩/২৯
সারসংক্ষেপ : নামাযে হাত বাঁধা সুন্নাহ। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনেক সাহাবী তা বর্ণনা করেছেন। এই সুন্নাহর ব্যবহারিক রূপ খাইরুল কুরূনে কী ছিল তা সাহাবা-তাবেয়ীনের আমল ও ফতোয়া এবং সে যুগ থেকে চলে আসা
‘আমলে মুতাওয়ারাছ’ দ্বারা প্রমাণিত, যা ইবাদত-বন্দেগীর সঠিক ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান ও শক্তিশালী সূত্র। এ সূত্রে নামাযে হাত বাঁধার দু’টি নিয়ম পাওয়া যায় : নাভীর নিচে হাত বাঁধা ও নাভীর উপর (বুকের নীচে) হাত বাঁধা। দু'টো নিয়মই আহলে ইলম সাহাবা-তাবেয়ীনের কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল, যা ইমাম তিরমিযী রাহ. জামে তিরমিযীতে বর্ণনা করেছেন। তবে রেওয়ায়েতের বিচারে নাভীর নিচে হাত বাঁধার নিয়মটি অগ্রগণ্য। ইমাম ইসহাক ইবনে রাহুয়াহ রাহ. তা পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন।
খাইরুল কুরূন ও পরবর্তী যুগের হাদীস-ফিকহের বড় বড় ইমাম এই নিয়ম গ্রহণ করেছেন। এঁদের মধ্যে ইমাম ইবরাহীম নাখায়ী, ইমাম আবু হানীফা, ইমাম সুফিয়ান ছাওরী, ইমাম আবু ইউসুফ, ইমাম মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান, ইমাম ইসহাক ইবনে রাহুয়াহ, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল প্রমুখ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। উপরন্তু বেশ কিছু মরফূ হাদীসেও নাভীর নিচে হাত বাঁধার নিয়ম বর্ণিত হয়েছে।
সুতরাং এটি নামাযে হাত বাঁধার মাসনূন তরীকা। এ সম্পর্কে দ্বিধা ও সংশয়ের কোনো অবকাশ নেই। 
(চলবে ইনশাআল্লাহ)
আগামী সংখ্যায় পড়ুন : বুকের উপর হাত বাঁধা : বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা।
ঈমান-আকাইদ নামায-সালাত
তাহারাত রমযান প্রসঙ্গ
হজ্জ্ব যাকাত
মুয়ামালাত-লেনদেন
তাসাওউফ-আত্মশুদ্ধি
ইসলামী অর্থনীতি
দাওয়াত ও তাবলীগ
শেয়ার ব্যবসা শবে বরাত
শবে মিরাজ ঈদ
নারী অধিকার বিদআত
সীরাত সিয়াম সফরনামা
সীরাত সিয়াম সফরনামা

0 Response to "নামাজে হাত বাধা প্রশ্ন উত্তর পর্ব"

Post a Comment

Search This Blog

Bd ILTC. Powered by Blogger.

Blog Archive