TOP COMMENTERS

Search Any Post...

বুকে হাত বাধার দলিল

বুকের উপর হাত বাঁধা : বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা
মাওলানা মুহাম্মাদ যাকারিয়া আব্দুল্লাহ
‘‘নামাযে হাত বাঁধা ও নাভীর নিচে হাত বাঁধা’’ শীর্ষক লেখায় বলা হয়েছে যে, সাহাবা-তাবেয়ীনের যুগ থেকে হাত বাঁধার দুটো নিয়ম চলে আসছে : বুকের নীচে হাত বাঁধা ও নাভীর নীচে হাত বাঁধা। মুসলিম উম্মাহর বিখ্যাত মুজতাহিদ ইমামগণও এ দুটো নিয়ম গ্রহণ করেছেন।
নিকট অতীতে হাত বাঁধার নতুন কিছু নিয়ম আবিষ্কৃত হয়েছে, যা সাহাবা-তাবেয়ীনের যুগে ছিল না এবং কুরআন-সুন্নাহর প্রাজ্ঞ মনীষী ও মুজতাহিদগণের সিদ্ধান্তেও তা পাওয়া যায় না। বলাবাহুল্য, এসব নিয়ম ‘শুযুয’ ও বিচ্ছিন্নতা বলে গণ্য, যা দ্বীন ও শরীয়তের বিষয়ে সম্পূর্ণ বর্জনীয়।
কিন্তু দুঃখজনক বাস্তবতা এই যে, সম্প্রতি এইসব বিচ্যুতি ও বিচ্ছিন্নতাকেই ‘সুন্নাহ’ বলে আখ্যায়িত করা হচ্ছে এবং চরম দায়িত্বহীনতার সাথে সাধারণ মানুষের মাঝেও তা প্রচার করা হচ্ছে।
আমরা মনে করি, সাধারণ মুসলমানদেরকে দলীল-প্রমাণের শাস্ত্রীয় জটিলতার মুখোমুখি করা অনুচিত, কিন্তু এ সকল অনাচারের প্রতিরোধ ও আম মানুষকে বিভ্রান্তি থেকে রক্ষার জন্য এখন কিছু বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনার বিকল্প নেই। যথাসম্ভব সহজ ভাষায় আমরা তা উপস্থাপনের চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে হেদায়েতের উপর থাকার তাওফীক দান করুন। আমীন।
নামাযে হাত বাঁধার ক্ষেত্রে যেসব শুযুয ও বিচ্ছিন্নতা দেখা যায় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সম্পর্কে আলোচনা করা হল।
শুযুয ১ : বুকের উপরের অংশে থুতনীর নিচে হাত রাখা
সমসাময়িক গায়রে মুকাল্লিদ আলিমরাও এই নিয়মকে খন্ডন করেছেন। শায়খ বকর বিন আবদুল্লাহ আবু যায়েদ ‘‘লা জাদীদা ফী আহকামিস সালাহ’’ পুস্তিকায় আরো কিছু নতুন নিয়মের সাথে এ নিয়মটিকেও খন্ডন করেছেন। ভূমিকায় তিনি লেখেন, ‘আমরা দেখেছি, কিছু লোক কোনো শায ও বিচ্ছিন্ন মত গ্রহণ করে তার প্রচারে কিংবা কোনো দুর্বল রুখসত ও অবকাশ গ্রহণ করে তার প্রতিষ্ঠায় সর্বশক্তি নিয়োজিত করে। এদের খন্ডনের জন্য মনীষী আলিমদের এই নীতিই যথেষ্ট যে, ‘ইলমের ক্ষেত্রে কোনো বিচ্ছিন্ন মত এবং (বিধানের ক্ষেত্রে) কোনো অপ্রমাণিত অবকাশ সম্পূর্ণ বর্জনীয়।
‘কিন্তু সম্প্রতি যে দলটির উদ্ভব ঘটেছে, তাদের মধ্যে দেখতে পাচ্ছি, মুসলমানদের প্রতিদিনের ইবাদত-বন্দেগীর ওয়াজিব-মুস্তাহাব বিষয়ে, যে ইবাদত-বন্দেগী ইসলামের মহান নিদর্শন ও প্রতীকও বটে, এমন সব ধারণার
বিস্তার ঘটছে যেগুলোর সাথে কোনো যুগে আলিমসমাজের কোনো পরিচিতি ছিল না। অতিনমনীয় ভাষায় বললে, এসব ধারণার কোনো কোনোটির সূত্র হচ্ছে বহুকাল আগের বর্জিত কিছু মত।
‘আর কোনো ধারণা পরিত্যক্ত হওয়ার জন্য তো এ-ই যথেষ্ট যে, তা সকল আলিমের মতামত থেকে বিচ্ছিন্ন।
‘ইসলামের দ্বিতীয় রোকন নামাযের ক্ষেত্রেও এমন নতুন কিছু কাজ ও অবস্থা আবিষ্কার করা হয়েছে, যার কোনোটা নামাযীকে একটা অস্বাভাবিক রূপ দান করে, অথচ আল্লাহ তাআলা তাঁর রাসূল সম্পর্কে বলেছেন-
ﻭﻣﺎ ﺍﻧﺎ ﻣﻦ ﺍﻟﻤﺘﻜﻠﻔﻴﻦ
 ‘... এবং আমি ভনিতাকারীদের
অন্তর্ভুক্ত নই।’-সূরা সোয়াদ (৩৮) : ৮৬
‘আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
ﺑﻌﺜﺖ ﺑﺎﻟﺤﻨﻴﻔﻴﺔ ﺍﻟﺴﻤﺤﺔ
 ‘তেমনি তা নামাযীর মাঝে একটা উদ্যত ভঙ্গি সৃষ্টি করে, অথচ নামায হচ্ছে আপন রব ও মাবুদের সামনে বান্দার বিনয় ও অক্ষমতার অবস্থা!
‘কোনো কোনো ধারণার অর্থ দাঁড়ায়, ইসলামের প্রথম যুগ থেকে আজ পর্যন্ত গোটা মুসলিম উম্মাহ ছিল সুন্নাহ বর্জনকারী ও সুন্নাহ থেকে বিচ্যুত। অন্যভাষায়, তারা ছিল সম্মিলিতভাবে পাপী ও অপরাধী।
‘তো এই সকল ভ্রান্তির কারণ কী?
‘অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা হচ্ছে সুন্নাহ বোঝার ক্ষেত্রে অতিশয়তা, আর কখনো (আরবী) ভাষার বাকরীতি ও হাদীস-ফিকহের মূলনীতি সম্পর্কে উদাসীনতা।
‘এই সকল বিভ্রান্তি হচ্ছে দলীলের বিষয়ে মূলনীতি বর্জনের এবং নামাযের স্বাভাবিক অবস্থা ও ফিকহ-খিলাফিয়াতের কিতাব থেকে বিমুখতার কুফল। অথচ ঐ সকল কিতাবে আহকাম ও বিধানের তত্ত্ব, কারণ ও বিশেষজ্ঞদের মতভিন্নতার আলোচনা থাকে। ...’-লা জাদীদা ফী আহকামিস সালাহ পৃ. ৩-৪
বুকের উপরের অংশে গলদেশে হাত বাঁধার ‘দলীল’ সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘এটা কুরআন মজীদের আয়াত-
ﻓﺼﻞ ﻟﺮﺑﻚ ﻭﺍﻧﺤﺮ
-এর তাফসীরে আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. থেকে বর্ণনা করা হয়। বায়হাকী তা বর্ণনা করেছেন (২/৩১) এবং তার সূত্রে তাফসীরের বিভিন্ন কিতাবে তা বর্ণিত হয়েছে। যেমন দেখুন : আদ্দুররুল মানছূর ৮/৬৫০-৬৫১
‘এই রেওয়ায়েত সহীহ নয়। কারণ এর সনদে রওহ ইবনুল মুসাইয়াব আলকালবী নামক একজন রাবী আছেন। তার সম্পর্কে দেখুন : আলমাজরূহীন ১/২৯৯
সূরায়ে কাওসারের ঐ আয়াতের তাফসীর সম্পর্কে সঠিক কথা এই যে, তার অর্থও তা-ই যা নিম্নোক্ত আয়াতে বলা হয়েছে-
ﻗﻞ ﺍﻥ ﺻﻼﺗﻰ ﻭﻧﺴﻜﻰ ﻭﻣﺤﻴﺎﻯ ﻭﻣﻤﺎﺗﻰ ﻟﻠﻪ ﺭﺏ ﺍﻟﻌﺎﻟﻤﻴﻦ
 (বল, আমার নামায, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মরণ আল্লাহর জন্য, যিনি রাববুল আলামীন।’
অর্থাৎ ঐ আয়াতে ﻭﺍﻧﺤﺮ অর্থ কুরবানী, গলদেশে হাত রাখা নয়।)
‘ইবনে জারীর এই তাফসীরকেই সঠিক বলেছেন এবং ইবনে কাছীর তা সমর্থন করেছেন। তাঁর
মন্তব্য-এটি অতি উত্তম (ব্যাখ্যা)।’-লা জাদীদা ফী আহকামিস সালাহ, বকর আবু যায়েদা পৃ. ৯
উপরে যে রেওয়ায়েতের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে তার পূর্ণ আরবী পাঠ সনদসহ তুলে দেওয়া হল-
ﺃﺧﺒﺮﻧﺎ ﺃﺑﻮ ﺯﻛﺮﻳﺎ ﺑﻦ ﺃﺑﻲ ﺍﺳﺤﺎﻕ، ﺃﻧﺒﺄ ﺍﻟﺤﺴﻦ ﺑﻦ ﻳﻌﻘﻮﺏ ﺑﻦ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ، ﺍﻧﺒﺄ ﻳﺤﻲ ﺑﻦ ﺃﺑﻲ ﻃﺎﻟﺐ، ﺍﻧﺒﺄ ﺯﻳﺪ ﺑﻦ ﺍﻟﺤﺒﺎﺏ، ﺛﻨﺎ
ﺭﻭﺡ ﺑﻦ ﺍﻟﻤﺴﻴﺐ، ﻗﺎﻝ : ﺣﺪﺛﻨﻲ ﻋﻤﺮﻭ ﺑﻦ ﻣﺎﻟﻚ ﺍﻟﻨﻜﺮﻱ ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﺍﻟﺠﻮﺯﺍﺀ ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻤﺎ ﻓﻲ ﻗﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﺰ ﻭﺟﻞ " ﻓﺼﻞ ﻟﺮﺑﻚ ﻭﺍﻧﺤﺮ " ﻗﺎﻝ : ﻭﺿﻊ ﺍﻟﻴﻤﻴﻦ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺸﻤﺎﻝ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻋﻨﺪ ﺍﻟﻨﺤﺮ .
-সুনানে বায়হাকী ২/৩০-৩১
রওহ ইবনুল মুসাইয়্যাব সম্পর্কে ইবনে হিববান রাহ. (৩৫৪ হি.) বলেন, ‘সে ছিকা রাবীদের সূত্রে মওযু রেওয়ায়েত বর্ণনা করে। তার থেকে বর্ণনা করা বৈধ নয়।’
ﻳﺮﻭﻱ ﺍﻟﻤﻮﺿﻮﻋﺎﺕ ﻋﻦ ﺍﻟﺜﻘﺎﺕ ﻻ ﺗﺤﻞ ﺍﻟﺮﻭﺍﻳﺔ ﻋﻨﻪ
-কিতাবুল মাজরূহীন
ইবনে আদী বলেন, ‘সে ছাবিত ও ইয়াযীদ আররাকাশী থেকে এমন সব রেওয়ায়েত বর্ণনা করে, যা মাহফুয নয় (সঠিক নয়)।’
ﻳﺮﻭﻱ ﻋﻦ ﺛﺎﺑﺖ ﻭﻳﺰﻳﺪ ﺍﻟﺮﻗﺎﺷﻲ ﺃﺣﺎﺩﻳﺚ ﻏﻴﺮ ﻣﺤﻔﻮﻇﺔ
-আলকামিল ফী জুয়াফাইর রিজাল ৩/১৪৩
আরো দেখুন : মীযানুল ইতিদাল ২/৫৭; লিসানুল মীযান ২/৪৬৮
সারকথা : এই রেওয়ায়েত নির্ভরযোগ্য নয়। আর এর দ্বারা উপরোক্ত আয়াতের তাফসীর করা তো কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আয়াতের সঠিক তাফসীর তা-ই যা ইবনে জারীর তাবারী রাহ. গ্রহণ করেছেন এবং ইবনে কাছীর যাকে ‘অতি উত্তম’ বলেছেন।
শুযুয ২ : নামাযে যিরার উপর যিরা রাখা
আরবীতে হাতের আঙুলের মাথা থেকেই কনুই পর্যন্ত অংশকে
‘যিরা’ বলে। সম্প্রতি কিছু মানুষ যিরার উপর যিরা রাখাকে সুন্নাহ মনে করেন এবং ডান হাতের পাতা বাম হাতের পাতা, কব্জি ও যিরার উপর না রেখে ডান হাতের যিরা বাম হাতের যিরার উপর রাখেন। হাত বাঁধার ক্ষেত্রে এটাও একটা বিভ্রান্তি ও বিচ্ছিন্নতা। কোনো সহীহ হাদীসে যিরার উপর যিরা রাখার কথা নেই, সাহাবা-তাবেয়ীনের যুগেও এর কোনো অস্তিত্ব ছিল না এবং কোনো মুজতাহিদ ইমাম এই নিয়মের কথা বলেননি। যারা একে সুন্নাহ মনে করেন তারা এ বিষয় কোনো সহীহ-সরীহ নস (বিশুদ্ধ ও দ্ব্যর্থহীন বক্তব্য) উপস্থাপন করতে পারেননি। তাদের সবচেয়ে শক্তিশালী দলীল হচ্ছে, দুটো সহীহ হাদীসের ভুল ব্যাখ্যা।
নীচে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হল।
প্রথম হাদীস : সাহল ইবনে সাদ রা. থেকে বর্ণিত, ‘লোকদেরকে আদেশ করা হত, পুরুষ যেন তার
ডান হাত বাম যিরার উপর রাখে।’
হাদীসটির আরবী পাঠ এই-
ﻛﺎﻥ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻳﺆﻣﺮﻭﻥ ﺃﻥ ﻳﻀﻊ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﺍﻟﻴﺪ ﺍﻟﻴﻤﻨﻰ ﻋﻠﻰ ﺫﺭﺍﻋﻪ ﺍﻟﻴﺴﺮﻯ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ . ﻗﺎﻝ ﺃﺑﻮ ﺣﺎﺯﻡ : ﻻ ﺃﻋﻠﻤﻪ ﺇﻻ ﻳﻨﻤﻰ ﺫﻟﻚ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ .
-মুয়াত্তা মালিক পৃ. ৫৫ ; সহীহ বুখারী ১/১০৪
এই হাদীসে যিরার উপর যিরা রাখার কথা নেই। বাম যিরার উপর ডান হাত রাখার কথা আছে।
দ্বিতীয় হাদীস : ওয়াইল ইবনে হুজর রা. থেকে বর্ণিত হাদীসের একটি পাঠ। তাতে আছে,
‘(আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর ডান হাত বাম হাতের পাতা, কব্জি ও যিরার উপর রাখলেন।’
রেওয়ায়েতটির আরবী পাঠ এই-
ﺛﻢ ﻭﺿﻊ ﻳﺪﻩ ﺍﻟﻴﻤﻨﻰ ﻋﻠﻰ ﻇﻬﺮ ﻛﻔﻪ ﺍﻟﻴﺴﺮﻯ ﻭﺍﻟﺮﺳﻎ ﻭﺍﻟﺴﺎﻋﺪ
-মুসনাদে আহমদ ৩১/১৬০, হাদীস : ১৮৮৭০; সুনানে আবু দাউদ ১/৪৮৩, হাদীস : ৭২৭
এই বর্ণনাতেও বলা হয়নি ডান যিরা রেখেছেন। বলা হয়েছে, ডান হাত রেখেছেন।
এই দুই হাদীসে ডান হাত অর্থ ডান হাতের যিরা-এর কোনো প্রমাণ নেই; বরং এই ব্যাখ্যা করা হলে তা হবে এই দুই হাদীসের শায ও বিচ্ছিন্ন ব্যাখ্যা। কারণ হাদীস ও ফিকহের নির্ভরযোগ্য কোনো ইমাম ও ভাষ্যকার এই ব্যাখ্যা করেননি।
উল্লেখিত পাঠটি কি ওয়াইল ইবনে হুজর রা.-এর হাদীসের মূল পাঠ
ওয়াইল ইবনে হুজর রা. আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছনে নামায পড়েছেন এবং যেভাবে তাঁকে নামায পড়তে দেখেছেন তা বর্ণনা করেছেন। তাঁর এই বিবরণ বেশ কয়েকজন রাবীর সূত্রে পাওয়া যায়। যেমন : ১. আলকামা ইবনে ওয়াইল ২. আবদুল জাববার ইবনে ওয়াইল। (এরা দু’জন ওয়াইল ইবনে হুজর রা.-এর পুত্র। আবদুল জাববার ইবনে ওয়াইল তার বড় ভাই আলকামা ইবনে ওয়াইল রাহ. থেকেই পিতার বিবরণ গ্রহণ করেছেন। দেখুন : সহীহ মুসলিম ফাতহুল মুলহিম ২/৩৯) ৩. হুজর ইবনুল আম্বাস, ৪. কুলাইব ইবনে শিহাব, প্রমুখ। শেষোক্ত কুলাইব ইবনে শিহাব রাহ.-এর বর্ণনাই আমাদের আলোচ্য বিষয়।
কুলাইব ইবনে শিহাব থেকে বর্ণনা করেছেন তার পুত্র আসিম ইবনে কুলাইব রাহ.। আসিম ইবনে কুলাইব রাহ. থেকে অনেক রাবী এই হাদীস বর্ণনা করেছেন। যেমন
শো’বা ইবনুল হাজ্জাজ
বিশর ইনুল মুফাদ্দাল
কায়স ইবনুর রাবী
আবদুল ওয়াহিদ ইবনে যিয়াদ
খালিদ ইবনু আবদিল্লাহ
আবু ইসহাক
আবুল আহওয়াস
আবদুল্লাহ ইবনে ইদরীস
মুসা ইবনে আবী আয়েশা
আবু আওয়ানা ও
যাইদা ইবনে কুদামা প্রমুখ।
শেষোক্ত রাবী যাইদা ইবনে কুদামা-এর বর্ণনার পাঠ সকলের চেয়ে আলাদা। এ কারণে তার পাঠকে আসিম ইবনে কুলাইবের বর্ণনার মূল পাঠ সাব্যস্ত করা যুক্তিসঙ্গত নয়।
এই সকল বর্ণনা সামনে রাখলে প্রতীয়মান হয়য, ওয়াইল ইবনে হুজর রা.-এর হাদীস থেকে যিরার উপর যিরার নিয়ম গ্রহণ করার অবকাশ নেই।
কারণ :
এক. আগেই বলা হয়েছে, আসিম ইবনে কুলাইব থেকে অন্যান্য ছিকা রাবী উপরোক্ত শব্দে বর্ণনা করেননি। যাইদার রেওয়ায়েতের পাঠ তাদের সবার রেওয়ায়েতের পাঠ থেকে আলাদা। সুতরাং যাইদার বর্ণনার উপর ভিত্তি করে একথা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না যে, এটিই আসিম ইবনে কুলাইবের পাঠ। অর্থাৎ আসিম ইবনে কুলাইব হুবহু এই শব্দে বর্ণনা করেছেন।
দুই. আলোচিত হাদীসের মূল রাবী হযরত ওয়াইল ইবনে হুজর রা.। আসিম ইবনে কুলাইবের সূত্র ছাড়া আরো বেশ কিছু সূত্রে তাঁর বিবরণ উল্লেখিত হয়েছে। সেসব রেওয়ায়েতের পাঠও যাইদার পাঠের চেয়ে আলাদা। সুতরাং তাঁর পাঠটিকেই ওয়াইল ইবনে হুজর রা.-এর বিবরণের মূল পাঠ সাব্যস্ত করা যুক্তিসঙ্গত নয়।
তিন. যাইদার পাঠটিও স্পষ্টভাবে ‘যিরার উপর যিরার’ নিয়ম নির্দেশ করে না; বরং সামান্য চিন্তা করলেই বোঝা যায়, এই পাঠের অর্থও তা-ই যা এ হাদীসের অন্য সকল পাঠ থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। অর্থাৎ এখানে পূর্ণ ‘সায়িদ’ (যিরা) উদ্দেশ্য নয়। সায়িদের কিছু অংশ উদ্দেশ্য, যা কব্জি সংলগ্ন।
চার. আসিম ইবনে কুলাইবের বিবরণ বহু সনদে বর্ণিত হয়েছে। এসব বিবরণের মৌলিক পাঠ দু’ ধরনের : ডান হাত দ্বারা বাম হাত ধরা এবং ডান হাত বাম হাতের উপর রাখা। যেসব রেওয়ায়েতে
ﺃﺧﺬ বা ﺇﻣﺴﺎﻙ (ধরা) শব্দ আছে সেখানে হাত দ্বারা যে হাতের পাতা উদ্দেশ্য তা তো বলাই বাহুল্য। আর যেসব রেওয়ায়েতে
ﻭﺿﻊ (রাখা) শব্দ আছে সেখানে কনুই পর্যন্ত হাত বোঝানো হয়েছে-এই দাবি যুক্তিসঙ্গত নয়। কারণ এর অর্থ হবে আসিম ইবনে কুলাইব রাহ. ওয়াইল ইবনে হুজরের যে বিবরণ উল্লেখ করেছেন, পরবর্তী রাবীদের বর্ণনায় শব্দগত পার্থক্যের কারণে একে দুই বিবরণ ধরে নেওয়া হয়েছে : একটি হল, ডান হাতের পাতা দ্বারা বাম হাত ধরা। আরেকটি ডান যিরা বাম যিরার উপর বিছিয়ে রাখা!
এক্ষেত্রে সঠিক ও যুক্তিসঙ্গত চিন্তা হচ্ছে, যেসব বর্ণনায় ‘ডান হাত রাখা’ আছে তারও অর্থ ডান হাতের পাতা রাখা, কনুই পর্যন্ত রাখা নয়।
পাঁচ. এটা আরো শক্তিশালী হয় যখন দেখা যায়, এ হাদীসের অসংখ্য বর্ণনার মাঝে একটি সহীহ রেওয়ায়েতেও ‘ডান হাতের যিরা’ বাম হাতের উপর রেখেছেন এমন কথা পাওয়া যায় না।
সুতরাং যিরার উপর যিরা একটা আরোপিত ব্যাখ্যা, হাদীস শরীফের সাথে যার কোনো সম্পর্ক নেই। এ কারণেই হাদীস ও ফিকহের কোনো নির্ভরযোগ্য ইমাম থেকে হাদীসের এই ব্যাখ্যা এবং হাত বাঁধার এই নিয়ম বর্ণনা করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। সুতরাং দ্ব্যর্থহীনভাবে বলা যায়, উপরোক্ত নিয়মটি যেমন হাত বাঁধার বিচ্ছিন্ন ও নবউদ্ভাবিত একটি নিয়ম তেমনি এই নিয়ম দ্বারা হাদীস শরীফের ব্যাখ্যাও একটি শায ও বিচ্ছিন্ন ব্যাখ্যা।
ফকীহ ও মুহাদ্দিসগণ কী ব্যাখ্যা করেছেন
যাইদা ইবনে কুদামার এই পাঠ হাদীস ও ফিকহের প্রাচীন গ্রন্থসমূহে উদ্ধৃত হয়েছে। বিখ্যাত ফকীহ ও মুহাদ্দিসগণ তার অর্থ করেছেন ডান হাতের পাতা বাম হাতের পাতার পিঠ, কব্জি ও বাহুর কিছু অংশের উপর রাখা।
ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক ইবনে খুযায়মা রাহ. (৩১১ হি.) সহীহ ইবনে খুযায়মায় হাদীসের এই পাঠ বর্ণনা করেছেন। কিন্তু ‘যিরার উপর যিরা’র অর্থ গ্রহণ করেননি। তিনি এই হাদীসের উপর শিরোনাম দিয়েছেন-
ﺑﺎﺏ ﻭﺿﻊ ﺑﻄﻦ ﺍﻟﻜﻒ ﺍﻟﻴﻤﻨﻰ ﻋﻠﻰ ﻛﻒ ﺍﻟﻴﺴﺮﻯ ﻭﺍﻟﺮﺳﻎ ﻭﺍﻟﺴﺎﻋﺪ ﺟﻤﻴﻌﺎ .
অর্থাৎ ডান হাতের পাতা বাম হাতের পাতার পিঠ, কব্জি ও বাহুর উপর রাখা। (দেখুন : সহীহ ইবনে খুযায়মা ১/২৭২, বাব : ৯০)
বিখ্যাত ফকীহ ও মুহাদ্দিসগণ বলেছেন, নামাযে হাত এমনভাবে রাখা উচিত, যাতে ডান হাতের পাতা বাম হাতের পাতার কিছু অংশ, কব্জি ও বাহুর কিছু অংশের উপর থাকে। তাঁরা ওয়াইল ইবনে হুজর রা.-এর হাদীসের এই পাঠ এবং হযরত সাহল ইবনে সাদ রা.-এর হাদীসকে দলীল হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
ইবনে কুদামা হাম্বলী রাহ. (৬২০ হি.) বলেন, (নামাযে) ডান হাত বাম হাতের কব্জি ও তৎসংলগ্ন অংশের উপর রাখা মুস্তাহাব। কারণ হযরত ওয়াইল ইবনে হুজর রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নামাযের বিবরণ দিয়েছেন এবং সে বিবরণে বলেছেন, ‘অতপর তিনি তাঁর ডান হাত রাখলেন তার বাম হাতের পাতার পিঠ, কব্জি ও বাহুর উপর।’
ﻭﻳﺴﺘﺤﺐ ﺃﻥ ﻳﻀﻌﻬﻤﺎ ﻋﻠﻰ ﻛﻮﻋﻪ ﻭﻣﺎ ﻳﻘﺎﺭﺑﻪ ﻟﻤﺎ ﺭﻭﻯ ﻭﺍﺋﻞ ﺑﻦ ﺣﺠﺮ ﺃﻧﻪ ﻭﺻﻒ ﺻﻼﺓ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻭﻗﺎﻝ ﻓﻲ ﻭﺻﻔﻪ : ﺛﻢ ﻭﺿﻊ ﻳﺪﻩ ﺍﻟﻴﻤﻨﻰ ﻋﻠﻰ ﻇﻬﺮ ﻛﻔﻪ ﺍﻟﻴﺴﺮﻯ ﻭﺍﻟﺮﺳﻎ ﻭﺍﻟﺴﺎﻋﺪ .
-আলমুগনী ২/১৪১
একই কথা বলেছেন আল্লামা ইবনে কুদামা মাকদেসী রাহ. (৬৮২ হি.)। তাঁর বক্তব্যের আরবী পাঠ এই-
ﻭﻳﻀﻌﻬﻤﺎ ‏( ﻛﺬﺍ ‏) ﻋﻠﻰ ﻛﻮﻋﻪ ﺃﻭ ﻗﺮﻳﺒﺎ ﻣﻨﻪ ﻟﻤﺎ ﺭﻭﻯ ﻭﺍﺋﻞ ﺑﻦ ﺣﺠﺮ ﺃﻧﻪ ﻭﺻﻒ ﺻﻼﺓ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻭﻗﺎﻝ ﻓﻲ ﻭﺻﻔﻪ : ﺛﻢ ﻭﺿﻊ ﻳﺪﻩ ﺍﻟﻴﻤﻨﻰ ﻋﻠﻰ ﻇﻬﺮ ﻛﻔﻪ ﺍﻟﻴﺴﺮﻯ ﻭﺍﻟﺮﺳﻎ ﻭﺍﻟﺴﺎﻋﺪ .
-আশশারহুল কাবীর (আলমুগনীর সাথে মুদ্রিত) ১/৫৪৯
ইমাম নববী রাহ. (৬৭৬ হি.) ‘‘শরহুল মুহাযযাব’’ গ্রন্থে (৪/৩২৭) শাফেয়ী মাযহাবের মনীষীদের সিদ্ধান্ত উল্লেখ করেছেন যে,
‘সুন্নাহ হচ্ছে, তাকবীরে (তাহরীমার) পর দুই হাত নামিয়ে ডান হাত বাম হাতের উপর রাখবে এবং ডান হাতের পাতা দ্বারা বাম হাতের পাতার গোড়া এবং কব্জি ও বাহুর কিছু অংশ ধরবে। কাফফাল বলেছেন, ডান হাতের আঙ্গুল আড়াআড়িভাবে কব্জির উপর রাখা বা বাহুর উপর ছড়িয়ে দেওয়া দুটোরই অবকাশ আছে।
এরপর বলেন, (পৃ. ৩২৯) আমাদের মনীষীগণ সাহল ইবনে সাদ রা.-এর হাদীস দ্বারা এ নিয়ম প্রমাণ করেছেন। তেমনি ওয়াইল ইবনে হুজর রা. থেকেও বর্ণিত হয়েছে যে, ‘অতপর (আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর ডান হাত রাখলেন বাম হাতের পাতার পিঠ, কব্জি ও বাহুর উপর।’
ﻭﺍﺣﺘﺞ ﺃﺻﺤﺎﺑﻨﺎ ﺃﺻﺤﺎﺏ ﺑﺤﺪﻳﺚ ﺃﺑﻲ ﺣﺎﺯﻡ ﻋﻦ ﺳﻬﻞ ﺑﻦ ﺳﻌﺪ ﻗﺎﻝ : ﻛﺎﻥ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻳﺆﻣﺮﻭﻥ ﺃﻥ ﻳﻀﻊ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﻳﺪﻩ ﺍﻟﻴﻤﻨﻰ ﻋﻠﻰ ﺫﺭﺍﻋﻪ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ، ﻗﺎﻝ ﺃﺑﻮ ﺣﺎﺯﻡ : ﻻ ﺃﻋﻠﻤﻪ ﺇﻻ ﻳﻨﻤﻰ ﺫﻟﻚ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ، ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ﻭﻫﺬﻩ ﺍﻟﻌﺒﺎﺭﺓ ﺻﺮﻳﺤﺔ ﻓﻲ ﺍﻟﺮﻓﻊ ﺇﻟﻰ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ، ﻭﻋﻦ ﻭﺍﺋﻞ ﺑﻦ ﺣﺠﺮ ﺃﻧﻪ ﺭﺃﻯ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺭﻓﻊ ﻳﺪﻳﻪ ﺣﻴﻦ ﺩﺧﻞ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ، ﺛﻢ ﺍﻟﺘﺤﻒ ﺑﺜﻮﺑﻪ، ﺛﻢ ﻭﺿﻊ ﻳﺪﻩ ﺍﻟﻴﻤﻨﻰ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻴﺴﺮﻯ، ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ ﺑﻬﺬﺍ ﺍﻟﻠﻔﻆ، ﻭﻋﻦ ﻭﺍﺋﻞ ﺑﻦ ﺣﺠﺮ ﺍﻳﻀﺎ ﻗﺎﻝ : ﻗﻠﺖ ﻻﻧﻈﺮ ﺇﻟﻰ ﺻﻼﺓ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻛﻴﻒ ﻳﺼﻠﻲ ﻓﻘﺎﻡ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓﺎﺳﺘﻘﺒﻞ ﺍﻟﻘﺒﻠﺔ ﻓﻜﺒﺮ ﻓﺮﻓﻊ ﻳﺪﻩ ﺣﺘﻰ ﺣﺎﺫﻯ ﺃﺫﻧﻴﻪ، ﺛﻢ ﻭﺿﻊ ﻳﺪﻩ ﺍﻟﻴﻤﻨﻰ ﻋﻠﻰ ﻇﻬﺮ ﻛﻔﻪ ﺍﻟﻴﺴﺮﻯ ﻭﺍﻟﺮﺳﻎ ﻭﺍﻟﺴﺎﻋﺪ، ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺑﻮ ﺩﺍﻭﺩ ﺑﺈﺳﻨﺎﺩ ﺻﺤﻴﺢ ... .
ইমাম আবুল ওয়ালিদ আলবাজী রাহ. (৪৯৪ হি.) হযরত সাহল ইবনে সাদ রা.-এর হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেছেন, এ হাদীসের অর্থ হচ্ছে, ডান হাত কব্জির উপর রাখবে। কারণ ডান হাত বাম হাতের পাতার উপর রাখা যাবে না। তা রাখতে হবে বাম হাতের গোড়া ও কব্জির উপর। আর তার উপর ভর দেওয়া যাবে না। আরবী পাঠ এই-
ﻗﻮﻟﻪ ﺃﻥ ﻳﻀﻊ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﻳﺪﻩ ﺍﻟﻴﻤﻨﻰ ﻋﻠﻰ ﺫﺭﺍﻋﻪ ﺍﻟﻴﺴﺮﻯ، ﻳﺮﻳﺪ ﺃﻥ ﻳﻀﻌﻬﺎ ﻋﻠﻰ ﺭﺳﻐﻪ، ﻷﻥ ﻳﺪﻩ ﺍﻟﻴﻤﻨﻰ ﻻ ﻳﻀﻌﻬﺎ ﻋﻠﻰ ﻛﻒ ﻳﺪﻩ ﺍﻟﻴﺴﺮﻯ، ﻭﺇﻧﻤﺎ ﻳﻘﺘﺼﺮ ﺑﻬﺎ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻤﻌﺼﻢ ﻭﺍﻟﻜﻮﻉ ﻣﻦ ﻳﺪﻩ ﺍﻟﻴﺴﺮﻯ، ﻭﻻ ﻳﻌﺘﻤﺪ ﻋﻠﻴﻬﺎ .
-আলমুনতাকা শারহুল মুয়াত্তা ২/১৬৪
ইমাম আবুল আববাস আহমদ ইবনে উমার আলকুরতুবী রাহ. সহীহ মুসলিমে বর্ণিত ওয়াইল ইবনে হুজর রা.-এর হাদীসের আলোচনায় বলেন, ইবনুল মাজিশূন ইমাম মালিক রাহ. থেকে বর্ণনা করেছেন যে, (নামাযী) ডান হাত দ্বারা তার বাম হাতের গোড়া ও কব্জি পেঁচিয়ে ধরবে। উপরের হাদীসটি তার দলীল। ...
আরবী পাঠ -
ﻗﻮﻟﻪ : ﺛﻢ ﻭﺿﻊ ﻳﺪﻩ ﺍﻟﻴﻤﻨﻰ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻴﺴﺮﻯ ﺍﺧﺘﻠﻒ ﻓﻴﻪ ﻋﻠﻰ ﺛﻼﺛﺔ ﺃﻗﻮﺍﻝ : ﻓﺮﻭﻯ ﻣﻄﺮﻑ ﻭﺍﺑﻦ ﺍﻟﻤﺎﺟﺸﻮﻥ ﻋﻦ ﻣﺎﻟﻚ ﺃﻧﻪ ﻗﺎﻝ : ﻳﻘﺒﺾ ﺑﺎﻟﻴﻤﻨﻰ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻤﻌﺼﻢ ﻭﺍﻟﻜﻮﻉ ﻣﻦ ﻳﺪﻩ ﺍﻟﻴﺴﺮﻯ ﺗﺤﺖ ﺻﺪﺭﻩ، ﺗﻤﺴﻜﺎ ﺑﻬﺬﺍ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ، ﻭﺭﻭﻯ ﺍﺑﻦ ﺍﻟﻘﺎﺳﻢ : ﺃﻧﻪ ﻳﺴﺪﻟﻬﻤﺎ ﻭﻛﺮﻩ ﻟﻪ ﻣﺎ ﺗﻘﺪﻡ، ﻭﺭﺃﻯ ﺃﻧﻪ ﻣﻦ ﺍﻻﻋﺘﻤﺎﺩ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻴﺪ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﺍﻟﻤﻨﻬﻲ ﻋﻨﻪ ﻓﻲ ﻛﺘﺎﺏ ﺃﺑﻲ ﺩﺍﻭﺩ، ﻭﺭﻭﻯ ﺃﺷﻬﺐ ﺍﻟﺘﺨﻴﻴﺮ ﻓﻴﻬﻤﺎ ﻭﺍﻻﺑﺎﺣﺔ .
-আলমুফহিম লিমা আশকালা মিন তালখীসি কিতাবি মুসলিম ২/২১
ইবনে তাইমিয়া রাহ. ও ইবনে হাযম রাহ.
আল্লামা ইবনে তাইমিয়া রাহ. নামাযে হাত বাঁধার নিয়ম সম্পর্কে বলেন, ‘তাকবীর সমাপ্ত হওয়ার পর দুই হাত ছেড়ে দিবে এবং ডান হাত বাম হাতের কব্জির উপর এমনভাবে রাখবে যে, ডান হাত দ্বারা কব্জির গোড়ার হাড় পেঁচিয়ে ধরবে কিংবা ডান হাত কব্জির উপর এমনভাবে বিছিয়ে দিবে যে, হাতের আঙ্গুলিসমূহ যিরার দিকে (ছড়ানো) থাকে। ডান হাত যদি কব্জির ওপরের দিকে (যিরার উপর) কিংবা কব্জির নিচে বাম পাতার উপর রাখে তবে সেটাও জায়েয।’
এরপর তিনি হযরত ওয়াইল ইবনে হুজর রা.-এর হাদীস, যাইদা ইবনে কুদামার বর্ণনা, সাহল ইবনে সাদ রা.-এর হাদীস ও হুলব রা.-এর হাদীসকে দলীল হিসেবে উদ্ধৃত করেছেন।
আলোচনার আরবী পাঠ এই-
ﻳﻌﻨﻲ : ﺇﺫﺍ ﺍﻧﻘﻀﻰ ﺍﻟﺘﻜﺒﻴﺮ ﻓﺈﻧﻪ ﻳﺮﺳﻞ ﻳﺪﻳﻪ ﻭﻳﻀﻊ ﻳﺪﻩ ﺍﻟﻴﻤﻨﻰ ﻓﻮﻕ ﺍﻟﻴﺴﺮﻯ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻜﻮﻉ، ﺑﺄﻥ ﻳﻘﺒﺾ ﺍﻟﻜﻮﻉ ﺑﺎﻟﻴﻤﻨﻰ، ﺃﻭ ﻳﺒﺴﻂ ﺍﻟﻴﻤﻨﻰ ﻋﻠﻴﻪ، ﻭﻳﻮﺟﻪ ﺃﺻﺎﺑﻌﻪ ﺇﻟﻰ ﻧﺎﺣﻴﺔ ﺍﻟﺬﺭﺍﻉ، ﻭﻟﻮ ﺟﻌﻞ ﺍﻟﻴﻤﻨﻰ ﻓﻮﻕ ﺍﻟﻜﻮﻉ ﺃﻭ ﺗﺤﺘﻪ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻜﻒ ﺍﻟﻴﺴﺮﻯ، ﺟﺎﺯ ﻟﻤﺎ ﺭﻭﻯ ﻭﺍﺋﻞ ﺑﻦ ﺣﺠﺮ ﺃﻧﻪ ﺭﺃﻯ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺣﻴﻦ ﺩﺧﻞ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ، ﺛﻢ ﺍﻟﺘﺤﻒ ﺑﺜﻮﺑﻪ ﺛﻢ ﻭﺿﻊ ﻳﺪﻩ ﺍﻟﻴﻤﻨﻰ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻴﺴﺮﻯ، ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ، ﻭﻓﻲ ﺭﻭﺍﻳﺔ ﻷﺣﻤﺪ ﻭﺃﺑﻲ ﺩﺍﻭﺩ : ﻭﺿﻊ ﻳﺪﻩ ﺍﻟﻴﻤﻨﻰ ﻋﻠﻰ ﻇﻬﺮ ﻛﻔﻪ ﺍﻟﻴﺴﺮﻯ ﻭﺍﻟﺮﺳﻎ ﻭﺍﻟﺴﺎﻋﺪ، ﻭﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﺣﺎﺯﻡ ﻋﻦ ﺳﻬﻞ ﺑﻦ ﺳﻌﺪ ﻗﺎﻝ : ﻛﺎﻥ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻳﺆﻣﺮﻭﻥ ﺃﻥ ﻳﻀﻊ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﺍﻟﻴﺪ ﺍﻟﻴﻤﻨﻰ ﻋﻠﻰ ﺫﺭﺍﻋﻪ ﺍﻟﻴﺴﺮﻯ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ، ﻗﺎﻝ ﺃﺑﻮ ﺣﺎﺯﻡ : ﻭﻻ ﺃﻋﻠﻤﻪ ﺇﻻ ﻳﻨﻤﻰ ﺫﻟﻚ ﺇﻟﻰ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ . ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺣﻤﺪ ﻭﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ.
ﻭﻋﻦ ﻗﺒﻴﺼﺔ ﺑﻦ ﻫﻠﺐ ﻋﻦ ﺃﺑﻴﻪ ﻗﺎﻝ : ﻛﺎﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﺆﻣﻨﺎ ﻓﻴﺄﺧﺬ ﺷﻤﺎﻟﻪ ﺑﻴﻤﻴﻨﻪ، ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺣﻤﺪ ﻭﺃﺑﻮ ﺩﺍﻭﺩ ﻭﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﻪ ﻭﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ ﻭﻗﺎﻝ : ﺣﺪﻳﺚ ﺣﺴﻦ، ﻭﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﻌﻤﻞ ﻋﻨﺪ ‏( ﺃﻛﺜﺮ ‏) ﺃﻫﻞ ﺍﻟﻌﻠﻢ ﻣﻦ ﺃﺻﺤﺎﺏ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﻭﺍﻟﺘﺎﺑﻌﻴﻦ ...
-শরহুল উমদা পৃ. ৬৫-৬৬
আল্লামা ইবনে হাযম রাহ. (৪৫৬ হি.) ‘‘আলমুহাল্লা’’ গ্রন্থে (৩/২৯-৩০) নামাযে হাত বাঁধার বিষয়ে বলেছেন, ‘মুস্তাহাব এই যে, নামাযী কিয়ামের হালতে তার ডান হাত বাম হাতের পাতার গোড়া য় রাখবে।’
এরপর তিনি সাহল ইবনে সাদ রা.-এর হাদীসসহ আরো কয়েকটি হাদীস বর্ণনা করেছেন।
আলোচনার শেষে বলেন, ‘আবু মিজলায, ইবরাহীম নাখায়ী, সায়ীদ ইবনে জুবাইর, আমর ইবনে মায়মূন, মুহাম্মাদ ইবনে সিরীন, আয়্যুব ছাখতিয়ানী ও হাম্মাদ ইবনে সালামা থেকেও আমরা বর্ণনা পেয়েছি যে, তাঁরাও (নামাযে) এভাবে করতেন (হাত বাঁধতেন)।
আর এটি আবু হানীফা, শাফেয়ী, আহমদ ও দাউদ-এর সিদ্ধান্ত। আরবী পাঠ এই-
ﻣﺴﺄﻟﺔ : ﻭﻳﺴﺘﺤﺐ ﺃﻥ ﻳﻀﻊ ﺍﻟﻤﺼﻠﻲ ﻳﺪﻩ ﺍﻟﻴﻤﻨﻰ ﻋﻠﻰ ﻛﻮﻉ ﻳﺪﻩ ﺍﻟﻴﺴﺮﻯ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻓﻲ ﻭﻗﻮﻓﻪ ﻛﻠﻪ ﻓﻴﻬﺎ ... ﻭﻣﻦ ﻃﺮﻳﻖ ﻣﺎﻟﻚ ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﺣﺎﺯﻡ ﻋﻦ ﺳﻬﻞ ﺑﻦ ﺳﻌﺪ ﻗﺎﻝ : ﻛﺎﻥ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻳﺆﻣﺮﻭﻥ ﺃﻥ ﻳﻀﻊ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﺍﻟﻴﺪ ﺍﻟﻴﻤﻨﻰ ﻋﻠﻰ ﺫﺭﺍﻋﻪ ﺍﻟﻴﺴﺮﻯ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ ... ﻭﺭﻭﻳﻨﺎ ﻓﻌﻞ ﺫﻟﻚ ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻣﺠﻠﺰ، ﻭﺇﺑﺮﺍﻫﻴﻢ ﺍﻟﻨﺨﻌﻲ، ﻭﺳﻌﻴﺪ ﺑﻦ ﺟﺒﻴﺮ، ﻭﻋﻤﺮﻭ ﺑﻦ ﻣﻴﻤﻮﻥ، ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﺳﻴﺮﻳﻦ، ﻭﺃﻳﻮﺏ ﺍﻟﺴﺨﺘﻴﺎﻧﻲ، ﻭﺣﻤﺎﺩ ﺑﻦ ﺳﻠﻤﺔ : ﺃﻧﻬﻢ ﻛﺎﻧﻮﺍ ﻳﻔﻌﻠﻮﻥ ﺫﻟﻚ، ﻭﻫﻮ ﻗﻮﻝ ﺃﺑﻲ ﺣﻨﻴﻔﺔ، ﻭﺍﻟﺸﺎﻓﻌﻲ، ﻭﺃﺣﻤﺪ، ﻭﺩﺍﻭﺩ .
আল্লামা শাওকানী রাহ.ও (১২৫৫ হি.) ওয়াইল ইবনে হুজর রা.-এর হাদীসের এই ব্যাখ্যাই গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেন, ‘হাদীসের অর্থ এই যে, ডান হাত বাম হাতের পাতা, কব্জি ও বাহুর উপর রাখবে। তবারানীর রেওয়ায়েতে আছে, (আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নামাযে তাঁর ডান হাত রাখলেন বাম হাতের পিঠের উপর কব্জির কাছে। (ইমাম) শাফেয়ী রাহ.-এর শাগরিদরা বলেছেন, ডান হাতের পাতা দ্বারা বাম হাতের পাতার গোড়া, কব্জি ও বাহুর কিছু অংশ পেঁচিয়ে ধরবে। হাদীসটি হাতের পাতা হাতের পাতার উপর রাখার বৈধতা প্রমাণ করে। এটিই অধিকাংশ মনীষীর গৃহীত নিয়ম। ...’ এরপর তিনি নামাযে হাত ছেড়ে রাখার প্রসঙ্গ আলোচনা করেন।
তার আলোচনার আরবী পাঠ এই-
ﻭﺍﻟﻤﺮﺍﺩ ﺃﻧﻪ ﻭﺿﻊ ﻳﺪﻩ ﺍﻟﻴﻤﻨﻰ ﻋﻠﻰ ﻛﻒ ﻳﺪﻩ ﺍﻟﻴﺴﺮﻯ ﻭﺭﺳﻐﻬﺎ ﻭﺳﺎﻋﺪﻫﺎ . ﻭﻟﻔﻆ ﺍﻟﻄﺒﺮﺍﻧﻲ : ﻭﺿﻊ ﻳﺪﻩ ﺍﻟﻴﻤﻨﻰ ﻋﻠﻰ ﻇﻬﺮ ﺍﻟﻴﺴﺮﻯ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻗﺮﻳﺒﺎ ﻣﻦ ﺍﻟﺮﺳﻎ، ﻗﺎﻝ ﺃﺻﺤﺎﺏ ﺍﻟﺸﺎﻓﻌﻲ : ﻳﻘﺒﺾ ﺑﻜﻔﻪ ﺍﻟﻴﻤﻨﻰ ﻛﻮﻉ ﺍﻟﻴﺴﺮﻯ ﻭﺑﻌﺾ ﺭﺳﻐﻬﺎ ﻭﺳﺎﻋﺪﻫﺎ .
ﻭﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﻳﺪﻝ ﻋﻠﻰ ﻣﺸﺮﻭﻋﻴﺔ ﻭﺿﻊ ﺍﻟﻜﻒ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻜﻒ، ﻭﺇﻟﻴﻪ ﺫﻫﺐ ﺍﻟﺠﻤﻬﻮﺭ ...
-নায়লুল আওতার ২/১৮১
এরপর হযরত সাহল ইবনে সাদ রা. থেকে বর্ণিত হাদীস সম্পর্কে বলেন, ‘যিরার কোন অংশে ডান হাত রাখা হবে তা এ হাদীসে অস্পষ্ট। তবে আহমদ ও আবু দাউদের রেওয়ায়েতে (যাইদা ইবনে কুদামার সূত্রে ওয়াইল ইবনে হুজর রা.-এর হাদীস) যা ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে তা পরিষ্কারভাবে পাওয়া যায়।
ﻗﻮﻟﻪ ﻋﻠﻰ ﺫﺭﺍﻋﻪ ﺍﻟﻴﺴﺮﻯ ﺃﺑﻬﻢ ﻫﻨﺎ ﻣﻮﺿﻌﻪ ﻣﻦ ﺍﻟﺬﺭﺍﻉ، ﻭﻗﺪ ﺑﻴﻨﺘﻪ ﺭﻭﺍﻳﺔ ﺃﺣﻤﺪ ﻭﺃﺑﻲ ﺩﺍﻭﺩ ﻓﻲ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﺍﻟﺬﻱ ﻗﺒﻠﻪ
-প্রাগুক্ত ২/১৮৯
সুতরাং শাওকানী রাহ.-এর মতেও সাহল ইবনে সাদ রা.-এর হাদীসের অর্থ হাতের পাতা হাতের পাতার উপর রাখা , তবে এমনভাবে, যেন তা যিরার কিছু অংশের উপর থাকে।
সারকথা
নামাযে ‘যিরার উপর যিরা’ রাখা সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়। সাহাবা-তাবেয়ীনের যুগ থেকে পরবর্তী শত শত বছর এই নিয়মের কোথাও কোনো অস্তিত্ব ছিল না। নিকট অতীতে আবিষ্কৃত এই নিয়ম প্রমাণের জন্য হযরত সাহল ইবনে সাদ রা. ও হযরত ওয়াইল ইবনে হুজর রা. থেকে বর্ণিত দুটি হাদীসের যে ব্যাখ্যা করা হয় তা ভুল ব্যাখ্যা। হাদীস ও ফিকহের নির্ভরযোগ্য কোনো ইমাম এই ব্যাখ্যা করেননি। বস্ত্তত এই ভুল ব্যাখ্যাই হচ্ছে উপরোক্ত শায ও বিচ্ছিন্ন নিয়মটির প্রধান সূত্র।
শুযুয-৩ : বুকের উপর হাত বাঁধাকে সুন্নাহ ও একমাত্র সুন্নাহ মনে করা।
ইতিপূর্বে বলা হয়েছে যে, সাহাবা-তাবেয়ীন থেকে বুকের উপর হাত বাঁধার নিয়ম পাওয়া যায় না। কোনো সহীহ মরফূ হাদীসেও এই নিয়ত বর্ণিত হয়নি। মুসলিমউম্মাহর কোনো মুজতাহিদ ইমাম থেকেও নিখুঁত ও অগ্রগণ্য বর্ণনায় এই নিয়ম পাওয়া যায় না। কিছু শায ও মুনকার রেওয়ায়েত পাওয়া যায়, যেগুলো হাদীস হিসেবে প্রমাণিত নয়। তেমনি কোনো কোনো মুজতাহিদ ইমাম থেকে পরবর্তীদের অসতর্ক কিছু বর্ণনা পাওয়া যায়, যেগুলো ঐ ইমামের বিশিষ্ট শাগরিদ ও মনীষীদের বর্ণনার বিরোধী।
এ ধরনের একটি মতকে সুন্নাহ ও একমাত্র সুন্নাহ মনে করা যে মারাত্মক বিভ্রান্তি তাতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।
রেওয়ায়েতসমূহের পর্যালোচনা
বুকের উপর হাত বাঁধা প্রমাণ করতে গিয়ে যেসব রেওয়ায়েতের সহযোগিতা নেওয়া হয় এখানে সেগুলো সম্পর্কে আলোচনা করছি।
মুয়াম্মাল ইবনে ইসমাইলের রেওয়ায়েত
তাঁর বিবরণ অনুযায়ী সুফিয়ান ছাওরী রাহ., আসেম ইবনে কুলাইব থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি ওয়াইল ইবনে হুজর রা. থেকে বর্ণনা করেছেন, ‘আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে নামায পড়লাম ... তিনি তাঁর ডান হাত বাম হাতের উপর বুকের উপর রাখলেন।
সনদসহ রেওয়ায়েতটির আরবী পাঠ এই-
ﺃﺧﺒﺮﻧﺎ ﺃﺑﻮ ﻃﺎﻫﺮ، ﻧﺎ ﺃﺑﻮ ﺑﻜﺮ، ﻧﺎ ﺃﺑﻮ ﻣﻮﺳﻰ، ﻧﺎ ﻣﺆﻣﻞ، ﻧﺎ ﺳﻔﻴﺎﻥ، ﻋﻦ ﻋﺎﺻﻢ ﺑﻦ ﻛﻠﻴﺐ، ﻋﻦ ﺃﺑﻴﻪ، ﻋﻦ ﻭﺍﺋﻞ ﺑﻦ ﺣﺠﺮ ﻗﺎﻝ : ﺻﻠﻴﺖ ﻣﻊ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ، ﻭﻭﺿﻊ ﻳﺪﻩ ﺍﻟﻴﻤﻨﻰ ﻋﻠﻰ ﻳﺪﻩ ﺍﻟﻴﺴﺮﻯ ﻋﻠﻰ ﺻﺪﺭﻩ.
-সহীহ ইবনে খুযায়মা ১/২৭২, হাদীস : ৪৭৯
মুয়াম্মাল ইবনে ইসমাইলের পূর্ণ বিবরণ সঠিক নয়। হাদীস শাস্ত্রের নীতি অনুসারে এ বর্ণনায় ﻋﻠﻰ ﺻﺪﺭﻩ ‘বুকের উপর’ কথাটা ‘মুনকার’। অর্থাৎ সুফিয়ান ছাওরী রাহ.-এর বর্ণনায় তা ছিল না। মুয়াম্মাল ইবনে ইসমাইল ভুলক্রমে তা বাড়িয়ে দিয়েছেন।
কারণ সুফিয়ান ছাওরী রাহ. থেকে এই হাদীস মুহাম্মাদ ইবনে ইউসুফ ফিরয়াবী ও আবদুল্লাহ ইবনুল ওয়ালীদ রাহ.ও বর্ণনা করেছেন।
তাঁরা দু’জনই ছিকা ও শক্তিশালী রাবী। তাঁদের রেওয়ায়েতে ﻋﻠﻰ ﺻﺪﺭﻩ ‘বুকের উপর’ কথাটা নেই। দেখুন : মুসনাদে আহমদ ৪/৩১৮; আলমুজামুল কাবীর তবারানী ২২/৩৩
রেওয়ায়েত দুটির সনদসহ আরবী পাঠ নিম্নরূপ :
ﻗﺎﻝ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﺃﺣﻤﺪ : ﺣﺪﺛﻨﺎ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﺍﻟﻮﻟﻴﺪ، ﺣﺪﺛﻨﻲ ﺳﻔﻴﺎﻥ، ﻋﻦ ﻋﺎﺻﻢ ﺑﻦ ﻛﻠﻴﺐ ﻋﻦ ﺃﺑﻴﻪ ﻋﻦ ﻭﺍﺋﻞ ﺑﻦ ﺣﺠﺮ ﻗﺎﻝ : ... ﻭﺭﺃﻳﺘﻪ ﻣﻤﺴﻜﺎ ﺑﻴﻤﻴﻨﻪ ﻋﻠﻰ ﺷﻤﺎﻟﻪ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ ...
ﻭﻗﺎﻝ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﺍﻟﻄﺒﺮﺍﻧﻲ : ﺣﺪﺛﻨﺎ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﺳﻌﻴﺪ ﺑﻦ ﺃﺑﻲ ﻣﺮﻳﻢ ﺛﻨﺎ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﻳﻮﺳﻒ ﺍﻟﻔﺮﻳﺎﺑﻲ ﺛﻨﺎ ﺳﻔﻴﺎﻥ ﻋﻦ ﻋﺎﺻﻢ ﺑﻦ ﻛﻠﻴﺐ ﻋﻦ ﺃﺑﻴﻪ ﻋﻦ ﻭﺍﺋﻞ ﺑﻦ ﺣﺠﺮ ﻗﺎﻝ : ﺭﺃﻳﺖ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﻀﻊ ﻳﺪﻩ ﺍﻟﻴﻤﻨﻰ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻴﺴﺮﻯ ﻭﺇﺫﺍ ﺟﻠﺲ ﺍﻓﺘﺮﺵ ﺭﺟﻠﻪ ﺍﻟﻴﺴﺮﻯ ...
ﻗﺎﻝ ﺍﻟﺮﺍﻗﻢ : ﻭﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﻳﻮﺳﻒ ﺍﻟﻔﺮﻳﺎﺑﻲ ﺫﻛﺮﻩ ﺍﻟﻤﺰﻱ ﻓﻲ ﺍﻟﺮﻭﺍﺓ ﻋﻦ ﺍﻟﺜﻮﺭﻱ ﻭﺍﺑﻦ ﻋﻴﻴﻨﺔ ﻛﻠﻬﻴﻤﺎ ﺇﻻ ﺃﻧﻪ ﻳﺴﺘﻈﻬﺮ ﺑﺮﻭﺍﻳﺔ ﺍﻟﺪﺍﺭﻗﻄﻨﻲ ﺃﻧﻪ ﺍﻟﺜﻮﺭﻱ . ﻓﻔﻲ ﺇﺗﺤﺎﻑ ﺍﻟﻤﻬﺮﺓ 13/662 ﺗﺤﺖ ﺣﺪﻳﺚ : ﺳﻤﻌﺖ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺇﺫﺍ ﻗﺎﻝ ﻏﻴﺮ ﺍﻟﻤﻐﻀﻮﺏ ﻋﻠﻴﻬﻢ ﻭﻻ ﺍﻟﻀﺎﻟﻴﻦ ﻗﺎﻝ ﺁﻣﻴﻦ، ﻳﻤﺪ ﺑﻬﺎ ﺻﻮﺗﻪ : ﻗﻂ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ ... ﻭﻋﻦ ﻳﺤﻲ ﺑﻦ ﺻﺎﻋﺪ، ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﺯﻧﺠﻮﻳﺔ، ﻋﻦ ﺍﻟﻔﺮﻳﺎﺑﻲ، ﻋﻦ ﺍﻟﺜﻮﺭﻱ، ﻋﻦ ﺳﻠﻤﺔ، ﻧﺤﻮﻩ . ﺃﻱ ﻋﻦ ﺣﺠﺮ ﺃﺑﻲ ﺍﻟﻌﻨﺒﺲ ﻋﻦ ﻭﺍﺋﻞ ﺑﻦ ﺣﺠﺮ .
ﻭﻗﺪ ﺫﻛﺮﻫﻤﺎ ﺻﺎﺣﺐ ﺃﻧﻴﺲ ﺍﻟﺴﺎﺭﻱ 10/335 ﻓﻲ ﺍﻟﺮﻭﺍﺓ ﻋﻦ ﺍﻟﺜﻮﺭﻱ . ﺭﻗﻢ ﺍﻟﺤﺎﺷﻴﺔ : ‏( 1 )
এটা শুধু পাওয়া যায় মুয়াম্মাল ইবনে ইসমাইল রাহ.-এর বর্ণনায়, যাঁর সম্পর্কে জারহ-তাদীলের ইমামদের সিদ্ধান্ত এই যে, তিনি সাধারণভাবে বিশ্বস্ত ও সত্যবাদী হলেও রেওয়ায়েতের ক্ষেত্রে তাঁর প্রচুর ভুল হয়েছে। এমনকি ইমাম বুখারী রাহ. তাকে
‘মুনকাররুল হাদীস’ বলেছেন।ইমামগণের মন্তব্য নীচে উল্লেখ করা হল-
ﻗﺎﻝ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ : ﻣﻨﻜﺮ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ، ﻭﻗﺎﻝ ﺃﺑﻮ ﺣﺎﺗﻢ ﺍﻟﺮﺍﺯﻱ : ﺻﺪﻭﻕ ﺷﺪﻳﺪ ﻓﻲ ﺍﻟﺴﻨﺔ ﻛﺜﻴﺮ ﺍﻟﺨﻄﺄ، ﻳﻜﺘﺐ ﺣﺪﻳﺜﻪ، ﻭﻗﺎﻝ ﺃﺑﻮ ﺯﺭﻋﺔ ﺍﻟﺮﺍﺯﻱ : ﻓﻲ ﺣﺪﻳﺜﻪ ﺧﻄﺄ ﻛﺜﻴﺮ، ﻭﻗﺎﻝ ﺍﺑﻦ ﺳﻌﺪ : ﺛﻘﺔ ﻛﺜﻴﺮ ﺍﻟﻐﻠﻂ، ﻭﻗﺎﻝ ﺍﻟﺴﺎﺟﻲ : ﺻﺪﻭﻕ، ﻛﺜﻴﺮ ﺍﻟﺨﻄﺄ ﻭﻟﻪ ﺃﻭﻫﺎﻡ ﻳﻄﻮﻝ ﺫﻛﺮﻫﺎ . ﻭﻗﺎﻝ ﺍﻟﺪﺍﺭﻗﻄﻨﻲ : ﺛﻘﺔ ﻛﺜﻴﺮ ﺍﻟﺨﻄﺄ .
দেখুন : তাহযীবুল কামাল ১৮/৫২৬; তাযীবুত তাহযীব ১০/৩৪০; মীযানুল ইতিদাল ৮৯৪৯; আলমুগনী ফী যুআফা ৬৫৪৭
শায়খ আলবানীও সিলসিলাতুয যয়ীফার অনেক জায়গায় তাঁকে জয়ীফ বলেছেন এবং তাঁর সম্পর্কে ইমামগণের মন্তব্য উদ্ধৃত করেছেন।
 দেখুন : সিলসিলাতুয যয়ীফা ১/১৩১; ২/২৪৬, ৩/১৭৯; ৩/২২৭; ৪/৪৫৫ ইত্যাদি।
দ্বিতীয়ত : সুফিয়ান ছাওরী রাহ. ওয়াইল ইবনে হুজর রা.-এর বিবরণ বর্ণনা করেছেন আসিম ইবনে কুলাইব থেকে। আসিম ইবনে কুলাইব থেকে এই হাদীস আরো বর্ণনা করেছেন :
১. শোবা ইবনুল হাজ্জাজ,
২. বিশর ইবনুল মুফাদ্দাল
৩. কায়স ইবনুর রাবী
৪. যাইদা ইবনে কুদামা
৫. আবদুল ওয়াহিদ ইবনে যিয়াদ
৬. খালিদ ইবনু আবদিল্লাহ
৭.আবু ইসহাক
৮. আবুল আহওয়াস
৯. আবদুল্লাহ ইবনে ইদরীস,
১০. মুসা ইবনে আবী আয়েশা
১১. আবু আওয়ানা প্রমুখ হাদীসের বিখ্যাত ইমাম ও ছিকা রাবীগণ। তাঁরা সকলে আসিম ইবনে কুলাইব থেকে নামাযে হাত বাঁধার হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। কিন্তু কেউ ﻋﻠﻰ ﺻﺪﺭﻩ ‘বুকের উপর’ কথাটা বর্ণনা করেননি।
এঁদের রেওয়ায়েতগুলোর জন্য দেখুন যথাক্রমে :
১. মুসনাদে আহমদ ৪/৩১৯, হাদীস : ১৮৮৭৮
২. সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৭২৬; সুনানে নাসায়ী, কুবরা, হাদীস : ১১৮৯; মুজতাবা, হাদীস : ১২৬৫; মুসনাদে বাযযার-আলবাহরুয যাখখার, হাদীস : ৪৪৮৫; আলমু’জামুল কাবীর তবারানী ২২/৩৭
৩. আলমুজামুল কাবীর, তবারানী ২২/৩৩
৪. মুসনাদে আহমদ ৪/৩১৮; আলমুজামুল কাবীর ২২/৩৫
৫. মুসনাদে আহমদ ৪/৩১৬
৬. সুনানে কুবরা বায়হাকী ২/১৩১
৭. আলমুজামুল আওসাত তবারানী ২/৪২৩
৮. মুসনাদে আবু দাউদ ত্বয়ালিসী ২/৩৫৮, হাদীস : ১১১৩; আলমুজামুল কাবীর তাবারানী ২২/৩৪
৯. সহীহ ইবনে হিববান ৫/২৭১; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৩/৩১৭
১০. মুসনাদে বাযযার আলবাহরুয যাখখার, হাদীস : ৪৪৮৯
১১. মারিফাতুস সুনানি ওয়াল আছার বায়হাকী ৩/৫০
এ থেকে বোঝা যায়, আসিম ইবনে কুলাইব বুকের উপর হাত বাঁধার কথা বর্ণনা করেননি। তাহলে সুফিয়ান ছাওরীর সঠিক বর্ণনায় তা কীভাবে থাকতে পারে?
তো এই সকল ইমাম ও ছিকা রাবীর বর্ণনার সাথে তুলনা করলে পরিষ্কার বোঝা যায়, এ হাদীসে
ﻋﻠﻰ ﺻﺪﺭﻩ অংশটা মুনকার তথা অগ্রহণযোগ্য।
উল্লেখ্য, কুলাইব ইবনে শিহাব ছাড়া অন্যদের সূত্রেও ওয়াইল ইবনে হুজর রা.-এর এই হাদীস বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু কোনো সহীহ সনদে ﻋﻠﻰ ﺻﺪﺭﻩ ‘বুকের উপর’ কথাটা পাওয়া যায় না।
দেখুন : বুগয়াতুল আলমায়ী ফী তাখরীজিয যায়লায়ী, নসবুর রায়াহর হাশিয়ায় ১/৩১৬
২. হুলব আতত্বয়ী রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হাদীসে মুসনাদে আহমদের ‘শায’ অংশ
বুকের উপর হাত বাঁধা প্রমাণ করার জন্য হুলব রা.-এর সূত্রে বর্ণিত একটি হাদীসের উদ্ধৃতিও দেওয়া হয়ে থাকে। অথচ ঐ হাদীসের বিশুদ্ধ বর্ণনায় ‘বুকের উপর হাত বাঁধা’র কথা নেই। একটিমাত্র বর্ণনায় এই অতিরিক্ত কথাটি পাওয়া যায়, যা অন্য সকল বর্ণনার পরিপন্থী। রেওয়ায়েতটির আরবী পাঠ এই -
ﺃﺣﻤﺪ : ﺣﺪﺛﻨﺎ ﻳﺤﻲ ﺑﻦ ﺳﻌﻴﺪ ﻋﻦ ﺳﻔﻴﺎﻥ : ﺛﻨﻲ ﺳﻤﺎﻙ ﻋﻦ ﻗﺒﻴﺼﺔ ﺑﻦ ﻫﻠﺐ ﻋﻦ ﺃﺑﻴﻪ ﻗﺎﻝ : ﺭﺃﻳﺖ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﻨﺼﺮﻑ ﻋﻦ ﻳﻤﻴﻨﻪ ﻭﻋﻦ ﻳﺴﺎﺭﻩ، ﻭﺭﺃﻳﺘﻪ ـ ﻗﺎﻝ ـ ﻳﻀﻊ ﻫﺬﻩ ﻋﻠﻰ ﺻﺪﺭﻩ . ﻭﺻﻒ ﻳﺤﻲ ﺍﻟﻴﻤﻨﻰ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻴﺴﺮﻯ ﻓﻮﻕ ﺍﻟﻤﻔﺼﻞ .
-মুসনাদে আহমদ ৫/২২৬
এই রেওয়ায়েতে দেখা যাচ্ছে, ইয়াহইয়া ইবনে সায়ীদ রাহ. এই হাদীসটি সুফিয়ান ছাওরী রাহ. থেকে বর্ণনা করেছেন। সুফিয়ান ছাওরী রাহ. থেকে এই হাদীস আরো বর্ণনা করেছেন
১. ইমাম ওকী ইবনুল জাররাহ
২. ইমাম আবদুর রাযযাক ইবনে হাম্মাম
৩. ইমাম আবদুর রহমান ইবনে মাহদী
৪. মুহাম্মাদ ইবনে কাছীর
৫. আবদুস সামাদ ইবনে হাসসান
৬. হুসাইন ইবনে হাফস
প্রমুখ ইমাম ও ছিকা রাবীগণ। তাঁদের কারো বর্ণনায় ﻋﻠﻰ ﺻﺪﺭﻩ
‘বুকের উপর’ কথাটা নেই।
দেখুন যথাক্রমে : ১. মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ১/৩৯০; ২. মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ২/২৪০; ৩. সুনানে দারাকুতনী ২/৩৩, হাদীস : ১১০০;
৪. আলমুজামুল কাবীর তাবারানী ২২/১৬৫; ৫. মারিফাতুস সাহাবা, আবু নুয়াইম ১৯/১৭২
৬. সুনানে কুবরা বাইহাকী ২/২৯৫
তদ্রূপ সিমাক ইবনে হারব থেকে সুফিয়ান ছাওরী রাহ. ছাড়া আরো বর্ণনা করেছেন :
১. আবুল আহওয়াস
২. হাফস ইবনু জুমাই
৩. শরীক
৪. আসবাত ইবনে নাসর
৫. শো’বা ইবনুল হাজ্জাজ
৬. যাইদা ইবনে কুদামা আলকূফী প্রমুখ রাবীগণ।
এঁদের কারো বর্ণনায় ﻋﻠﻰ ﺻﺪﺭﻩ
‘বুকের উপর’ কথাটা নেই।
(দেখুন যথাক্রমে : ১. জামে তিরমিযী ১/৩১২, হাদীস : ২৫০; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ৮০৯; আলমুজামুল কাবীর তবারানী ২২/১৬৫;
২. আলমুজামুল কাবীর তবারানী ২২/১৬৫; ৩. মুসনাদে আহমদ ৫/২২৬, হাদীস : ২১৯৬৯; ৪. আলমুজামুল কাবীর তাবারানী ২২/১৬৫; ৫. ইবনে আবী আসিম ২৪৯৫-আনীসুস সারী ১০/৩৪৩; ৬. ইবনু কানি ৩/১৯৯-আনীসুস সারী ১০/৩৪৩)
এ থেকে প্রতীয়মান হয়, ছিমাক ইবনে হারবের বর্ণনায় এ অংশটি ছিল না। সুতরাং সুফিয়ান ছাওরী রাহ.-এর বিশুদ্ধ বর্ণনায় তা কীভাবে থাকতে পারে?
দ্বিতীয় কথা এই যে, ইয়াহইয়া ইবনে সায়ীদ আলকাত্তানের রেওয়ায়েত মুহাম্মাদ ইবনে বাশশার বসরী-এর সূত্রে
‘‘মুখতাসারুল আহকাম’’ তূসীতেও (২/৯৭, হাদীস : ২৩৪) রয়েছে। কিন্তু ঐ কিতাবে ‘আলা সাদরিহী’ নেই।
সনসদসহ রেওয়ায়েতটির আরবী পাঠ এই-
ﺃﺧﺒﺮﻧﺎ ﺑﻨﺪﺍﺭ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﺑﺸﺎﺭ، ﻗﺎﻝ : ﺛﻨﺎ ﻳﺤﻲ ﻭﻫﻮ ﺍﺑﻦ ﺳﻌﻴﺪ ﻋﻦ ﺳﻔﻴﺎﻥ، ﻋﻦ ﺳﻤﺎﻙ، ﻋﻦ ﻗﺒﻴﺼﺔ ﺑﻦ ﺍﻟﻬﻠﺐ ﻋﻦ ﺃﺑﻴﻪ ﻗﺎﻝ : ﺭﺃﻳﺖ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﻨﺼﺮﻑ ﻋﻦ ﺷﻘﻴﻪ ﻋﻦ ﻳﻤﻴﻨﻪ ﻭﻋﻦ ﻳﺴﺎﺭﻩ ﻭﻳﻀﻊ ﺍﻟﻴﻤﻨﻰ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻴﺴﺮﻯ .
তৃতীয় কথা এই যে, মুসনাদে আহমদেও বর্ণনাটি যেভাবে আছে, তা গভীরভাবে পাঠ করলে আল্লামা নীমভী রাহ. যে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন তা বেশ শক্তিশালী মনে হয়। তা এই যে, মুসনাদে আহমদের বর্ণনাতেও ﻋﻠﻰ ﺻﺪﺭﻩ বুকের উপর কথাটা ছিল না। এটা লিপিকারের ভ্রান্তিপ্রসূত। মূল রেওয়ায়েত সম্ভবত এ রকম -
ﻳﻀﻊ ﻫﺬﻩ ﻋﻠﻰ ﻫﺬﻩ
শেষোক্ত ﻫﺬﻩ লিপিকরের ভ্রান্তির কারণে ﺻﺪﺭﻩ তে পরিণত হয়ে থাকতে পারে। প্রাচীন হস্তলিখিত পান্ডুলিপিতে এ ধরনের ভ্রান্তি বিরল নয়। এসব ভ্রান্তি চিহ্নিত করার নীতি ও পদ্ধতি সম্পর্কে হাদীসশাস্ত্রে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে এবং মুহাদ্দিসগণ সফলভাবে তা প্রয়োগও করেছেন।
রেওয়ায়েতের বিশুদ্ধ পাঠ যদি সেটিই হয়, যা আল্লামা নীমাভী রাহ. বলেছেন তাহলে এর অর্থ হবে-‘তিনি এই হাত এই হাতের উপর রাখলেন।’ হাদীসটি বর্ণনা করার পর রাবী ইয়াহইয়া ইবনে সায়ীদ রাহ. ডান হাত বাম হাতের কব্জির উপর রেখে দেখালেন।’’
রেওয়ায়েতের শেষ বাক্যটিও এই সম্ভাবনাকে সমর্থন করে।
মোটকথা, এ রেওয়ায়েতেও ﻋﻠﻰ ﺻﺪﺭﻩ বুকের উপর কথাটা ‘শায’ বা মুসাহহাফ, যা পরিত্যক্ত।
এই দুটি রেওয়ায়েত প্রমাণ হিসেবে গ্রহণের আগে আরো যে বিষয়গুলো চিন্তা করা উচিত তা এই যে, ওয়াইল ইবনে হুজর রা.-এর হাদীস ও হুলব আতত্বয়ী রা.-এর হাদীস, উভয় হাদীসেরই রাবী ইমাম সুফিয়ান ছাওরী রাহ.। এই দুই হাদীসের বিশুদ্ধ বর্ণনায় ﻋﻠﻰ ﺻﺪﺭﻩ থাকলে অবশ্যই তিনি বুকের উপর হাত বাঁধাকে সুন্নাহ মনে করতেন এবং বুকের উপর হাত বাঁধতেন। কিন্তু তিনি হাত বাঁধতেন নাভীর নিচে, বুকের উপর নয়। দেখুন : আলমুগনী ইবনে কুদামা ২/১৪১; আলমাজমূ শরহুল মুহাযযাব ৪/৩৩০
দুই. মুসনাদে আহমদের সহীহ রেওয়ায়েতে ‘‘আলা সাদরিহী’’ থাকলে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহ. কেন বুকের উপর হাত বাঁধাকে সুন্নাহ বলেননি? তেমনি ইমাম ইসহাক ইবনে রাহুয়াহ, ইবনে হাযম ও দাউদ জাহেরী রাহ. থেকেও কেন বুকের উপর হাত বাঁধার নিয়ম পাওয়া যায় না?
তিন. দু’ দুটি স্পষ্ট হাদীস বিদ্যমান থাকলে মুসলিম জাহানের কোনো মুজতাহিদ ইমাম বুকের উপর হাত বাঁধাকে সুন্নাহ বলবেন না তা কীভাবে সম্ভব? তবে কি বলতে হবে আল্লাহর রাসূলের হাদীস ত্যাগ করার বিষয়ে হাদীস ও ফিকহের সকল ইমাম একমত হয়ে গেছেন? (নাউযুবিল্লাহ)
৩. সূরায়ে কাউসারের তাফসীরে হযরত আলী রা. থেকে একটি বর্ণনা
হযরত আলী রা. থেকে সূরায়ে কাওছারের দ্বিতীয় আয়াতের তাফসীরে বর্ণনা করা হয় যে, তিনি বলেছেন, ‘ডান হাত বাম হাতের মাঝে রাখা, অতপর তা রাখা বুকের উপর।’
সনদসহ রেওয়ায়েতটির আরবী পাঠ এই-
ﺣﻤﺎﺩ ﺑﻦ ﺳﻠﻤﺔ : ﺛﻨﺎ ﻋﺎﺻﻢ ﺍﻟﺠﺤﺪﺭﻱ، ﻋﻦ ﺃﺑﻴﻪ، ﻋﻦ ﻋﻘﺒﺔ ﺑﻦ ﺻﻬﺒﺎﻥ ﻗﺎﻝ : ﺇﻥ ﻋﻠﻴﺎ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻗﺎﻝ ﻓﻲ ﻫﺬﻩ ﺍﻵﻳﺔ : ﻓﺼﻞ ﻟﺮﺑﻚ ﻭﺍﻧﺤﺮ، ﻗﺎﻝ : ﻭﺿﻊ ﻳﺪﻩ ﺍﻟﻴﻤﻨﻰ ﻋﻠﻰ ﻭﺳﻂ ﻳﺪﻩ ﺍﻟﻴﺴﺮﻯ، ﺛﻢ ﻭﺿﻌﻬﻤﺎ ﻋﻠﻰ ﺻﺪﺭﻩ.
-সুনানে বায়হাকী ২/৩০; আসলু ছিফাতিস সালাহ, আলবানী পৃ. ২১৭
এই রেওয়ায়েত সহীহ নয়। আল্লামা ইবনুত তুরকুমানী রাহ. (৭৪৫ হি.) বলেছেন, ‘এই রেওয়ায়েতের সনদ ও মতনে ইযতিরাব রয়েছে।’
ﻭﻓﻲ ﺳﻨﺪﻩ ﻭﻣﺘﻨﻪ ﺍﺿﻄﺮﺍﺏ
-আলজাওহারুন নাকী, সুনানে বায়হাকীর সাথে মুদ্রিত ২/৩০
শায়খ আলবানীও এর সনদের ইযতিরাব স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘এ রেওয়ায়েতের সনদের ইযতিরাব স্বীকৃত। সুতরাং এ সম্পর্কে দীর্ঘ আলোচনার প্রয়োজন নেই। ...’
ﻭﺃﻣﺎ ﺍﻻﺿﻄﺮﺍﺏ ﻓﻲ ﺍﻟﺴﻨﺪ : ﻓﻬﻮ ﻣﺴﻠﻢ، ﻓﻼ ﺣﺎﺟﺔ ﻹﻃﺎﻟﺔ ﺍﻟﻜﻼﻡ ﺑﺒﻴﺎﻧﻪ ...
-আসলু ছিফাতিস সালাহ, পৃ. ২২১
মতনের (বক্তব্যের) ক্ষেত্রেও ইযতিরাব স্বীকার করতে হবে কিংবা বলতে হবে, এই রেওয়ায়েতেও ﻋﻠﻰ ﺻﺪﺭﻩ ‘বুকের উপর’ কথাটা শায্ ও বিচ্ছিন্ন এবং এ হাদীসের যে বর্ণনা ﻋﻠﻰ
ﺻﺪﺭﻩ ছাড়া সেটিই অগ্রগণ্য। কারণ এ হাদীসের কেন্দ্রীয় বর্ণনাকারী আসিম আলজাহদারী রাহ.। তার থেকে বর্ণনা করেন হাম্মাদ ইবনে সালামা ও ইয়াযীদ ইবনে আবী যিয়াদ। হাম্মাদ ইবনে সালামার বর্ণনায় ‘ইখতিলাফ’ ও ভিন্নতা পাওয়া যায়। হাম্মাদ ইবনে সালামা থেকে মিহরান, আবু সালেহ খুরাসানী ও শাইবানের বর্ণনা এবং মুসা ইবনে ইসমাইলের এক বর্ণনায় ﻋﻠﻰ ﺻﺪﺭﻩ আছে। মুসা ইবনে ইসমাইলের দ্বিতীয় বর্ণনায় এবং আবদুর রহমান-এর বর্ণনায় ﻋﻠﻰ ﺻﺪﺭﻩ নেই। তাদের রেওয়ায়েতের আরবী পাঠ এই-
ﻗﺎﻝ ﺍﺑﻦ ﺟﺮﻳﺮ ﺍﻟﻄﺒﺮﻱ : ﺣﺪﺛﻨﺎ ﺍﺑﻦ ﺣﻤﻴﺪ، ﻗﺎﻝ : ﺛﻨﺎ ﻣﻬﺮﺍﻥ، ﻋﻦ ﺣﻤﺎﺩ ﺑﻦ ﺳﻠﻤﺔ، ﻋﻦ ﻋﺎﺻﻢ ﺍﻟﺠﺤﺪﺭﻱ، ﻋﻦ ﻋﻘﺒﺔ ﺑﻦ ﻇﻬﻴﺮ، ﻋﻦ ﺃﺑﻴﻪ، ﻋﻦ ﻋﻠﻲ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻓﺼﻞ ﻟﺮﺑﻚ ﻭﺍﻧﺤﺮ ﻗﺎﻝ : ﻭﺿﻊ ﻳﺪﻩ ﺍﻟﻴﻤﻨﻰ ﻋﻠﻰ ﻭﺳﻂ ﺳﺎﻋﺪﻩ ﺍﻟﻴﺴﺮﻯ، ﺛﻢ ﻭﺿﻌﻬﻤﺎ ﻋﻠﻰ ﺻﺪﺭﻩ .
ﻭﻗﺎﻝ ﺍﻟﻄﺒﺮﻱ : ﺣﺪﺛﻨﺎ ﺍﺑﻦ ﺣﻤﻴﺪ، ﻗﺎﻝ : ﺛﻨﺎ ﺃﺑﻮ ﺻﺎﻟﺢ ﺍﻟﺨﺮﺍﺳﺎﻧﻲ، ﻗﺎﻝ : ﺛﻨﺎ ﺣﻤﺎﺩ، ﻋﻦ ﻋﺎﺻﻢ ﺍﻟﺠﺤﺪﺭﻱ، ﻋﻦ ﺃﺑﻴﻪ، ﻋﻦ ﻋﻘﺒﺔ ﺑﻦ ﻇﺒﻴﺎﻥ، ﺃﻥ ﻋﻠﻲ ﺑﻦ ﺃﺑﻲ ﻃﺎﻟﺐ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻗﺎﻝ ﻓﻲ ﻗﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ : ﻓﺼﻞ ﻟﺮﺑﻚ ﻭﺍﻧﺤﺮ، ﻗﺎﻝ : ﻭﺿﻊ ﻳﺪﻩ ﺍﻟﻴﻤﻨﻰ ﻋﻠﻰ ﻭﺳﻂ ﺳﺎﻋﺪﻩ ﺍﻷﻳﺴﺮ، ﺛﻢ ﻭﺿﻌﻬﻤﺎ ﻋﻠﻰ ﺻﺪﺭﻩ .
ﻭﻗﺎﻝ ﺍﻟﺒﻴﻬﻘﻲ ﻓﻲ ﺍﻟﺴﻨﻦ : ﺃﺧﺒﺮﻧﺎ ﺃﺑﻮ ﺑﻜﺮ ﺃﺣﻤﺪ ﺑﻦ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﺍﻟﺤﺎﺭﺙ ﺍﻟﻔﻘﻴﻪ ﺃﻧﺒﺄ ﺃﺑﻮ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﺣﻴﺎﻥ ﺃﺑﻮ ﺍﻟﺸﻴﺦ، ﺛﻨﺎ ﺃﺑﻮ ﺍﻟﺤﺮﻳﺶ ﺍﻟﻜﻼﺑﻲ، ﺛﻨﺎ ﺷﻴﺒﺎﻥ ﺛﻨﺎ ﺣﻤﺎﺩ ﺑﻦ ﺳﻠﻤﺔ ﺛﻨﺎ ﻋﺎﺻﻢ ﺍﻟﺠﺤﺪﺭﻱ ﻋﻦ ﺃﺑﻴﻪ ﻋﻦ ﻋﻘﺒﺔ ﺑﻦ ﺻﻬﺒﺎﻥ ﻛﺬﺍ ﻗﺎﻝ ﺃﻥ ﻋﻠﻴﺎ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻗﺎﻝ ﻓﻲ ﻫﺬﻩ ﺍﻵﻳﺔ ﻓﺼﻞ ﻟﺮﺑﻚ ﻭﺍﻧﺤﺮ ﻗﺎﻝ : ﻭﺿﻊ ﻳﺪﻩ ﺍﻟﻴﻤﻨﻰ ﻋﻠﻰ ﻭﺳﻂ ﻳﺪﻩ ﺍﻟﻴﺴﺮﻯ، ﺛﻢ ﻭﺿﻌﻬﻤﺎ ﻋﻠﻰ ﺻﺪﺭﻩ .
ﻭﻗﺎﻝ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ﻓﻲ ﺍﻟﺘﺎﺭﻳﺦ ﺍﻟﻜﺒﻴﺮ : ﻗﺎﻝ ﻣﻮﺳﻰ : ﺣﺪﺛﻨﺎ ﺣﻤﺎﺩ ﺑﻦ ﺳﻠﻤﺔ : ﺳﻤﻊ ﻋﺎﺻﻤﺎ ﺍﻟﺠﻬﺪﺭﻱ ﻋﻦ ﺃﺑﻴﻪ ﻋﻦ ﻋﻘﺒﺔ ﺑﻦ ﻇﺒﻴﺎﻥ ﻋﻦ ﻋﻠﻲ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ : ﻓﺼﻞ ﻟﺮﺑﻚ ﻭﺍﻧﺤﺮ . ﻭﺿﻊ ﻳﺪﻩ ﺍﻟﻴﻤﻨﻰ ﻋﻠﻰ ﻭﺳﻂ ﺳﺎﻋﺪﻩ ﻋﻠﻰ ﺻﺪﺭﻩ . ‏( 2911 )
ﻭﻗﺎﻝ ﺍﻟﻄﺒﺮﻱ : ﺣﺪﺛﻨﺎ ﺍﺑﻦ ﺑﺸﺎﺭ، ﻗﺎﻝ : ﺛﻨﺎ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ، ﻗﺎﻝ : ﺛﻨﺎ ﺣﻤﺎﺩ ﺑﻦ ﺳﻠﻤﺔ، ﻋﻦ ﻋﺎﺻﻢ ﺍﺑﻦ ﻇﺒﻴﺎﻥ،ﻋﻦ ﺃﺑﻴﻪ، ﻋﻦ ﻋﻠﻲ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻓﺼﻞ ﻟﺮﺑﻚ ﻭﺍﻧﺤﺮ ﻗﺎﻝ : ﻭﺿﻊ ﺍﻟﻴﺪ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻴﺪ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ .
ﻭﻗﺎﻝ ﺍﻟﺤﺎﻛﻢ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺴﺘﺪﺭﻙ ﻓﻲ ﺗﻔﺴﻴﺮ ﺳﻮﺭﺓ ﺍﻟﻜﻮﺛﺮ : ... ﻣﻨﻬﻤﺎ ﻣﺎ ﺣﺪﺛﻨﺎﻩ ﻋﻠﻲ ﺑﻦ ﺣﻤﺸﺎﺫ ﺍﻟﻌﺪﻝ، ﺛﻨﺎ ﻫﺸﺎﻡ ﺑﻦ ﻋﻠﻲ ﻭﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﺃﻳﻮﺏ ﻗﺎﻻ : ﺛﻨﺎ ﻣﻮﺳﻰ ﺑﻦ ﺇﺳﻤﺎﻋﻴﻞ، ﺛﻨﺎ ﺣﻤﺎﺩ ﺑﻦ ﺳﻠﻤﺔ، ﻋﻦ ﻋﺎﺻﻢ ﺍﻟﺠﺤﺪﺭﻱ، ﻋﻦ ﻋﻘﺒﺔ ﺑﻦ ﺻﻬﺒﺎﻥ، ﻋﻦ ﻋﻠﻲ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻓﺼﻞ ﻟﺮﺑﻚ ﻭﺍﻧﺤﺮ، ﻗﺎﻝ : ﻫﻮ ﻭﺿﻊ ﻳﻤﻴﻨﻚ ﻋﻠﻰ ﺷﻤﺎﻟﻚ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ .
-তাফসীরে তবারী (সূরাতুর কাউছার) ১২/৭২১-৭২২; আততারীখুল কাবীর, বুখারী ৬/৪৩৭; মুসতাদরাকে হাকিম ৩/৩৩৯; সুনানে বায়হাকী ২/৩০
পক্ষান্তরে ইয়াযীদ ইবনে আবী যিয়াদ থেকে ওকী ইবনুল জাররাহ, মুহাম্মাদ ইবনে রবীআ ও হুমাইদ ইবনে আবদুর রহমান প্রমুখ বর্ণনা করেছেন। তাদের কারো বর্ণনায় ﻋﻠﻰ ﺻﺪﺭﻩ ‘বুকের উপর’ নেই। তাদের রেওয়ায়েতের আরবী পাঠ এই-
ﻗﺎﻝ ﺍﻟﻄﺒﺮﻱ : ﺣﺪﺛﻨﺎ ﺃﺑﻮ ﻛﺮﻳﺐ، ﻗﺎﻝ : ﺣﺪﺛﻨﺎ ﻭﻛﻴﻊ، ﻋﻦ ﻳﺰﻳﺪ ﺑﻦ ﺃﺑﻲ ﺯﻳﺎﺩ، ﻋﻦ ﻋﺎﺻﻢ ﺍﻟﺠﺤﺪﺭﻱ، ﻋﻦ ﻋﻘﺒﺔ ﺑﻦ ﻇﻬﻴﺮ، ﻋﻦ ﻋﻠﻲ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ : ﻓﺼﻞ ﻟﺮﺑﻚ ﻭﺍﻧﺤﺮ . ﻗﺎﻝ : ﻭﺿﻊ ﺍﻟﻴﻤﻴﻦ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺸﻤﺎﻝ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ.
ﻭﻗﺎﻝ : ﺣﺪﺛﻨﻲ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺑﻦ ﺍﻷﺳﻮﺩ ﺍﻟﻄﻔﺎﻭﻱ، ﻗﺎﻝ : ﺛﻨﺎ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﺭﺑﻴﻌﺔ، ﻗﺎﻝ : ﺛﻨﻲ ﻳﺰﻳﺪ ﺑﻦ ﺃﺑﻲ ﺯﻳﺎﺩ ﺑﻦ ﺃﺑﻲ ﺍﻟﺠﻌﺪ، ﻋﻦ ﻋﺎﺻﻢ ﺍﻟﺠﺤﺪﺭﻱ، ﻋﻦ ﻋﻘﺒﺔ ﺑﻦ ﻇﻬﻴﺮ، ﻋﻦ ﻋﻠﻲ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻓﻲ ﻗﻮﻟﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻓﺼﻞ ﻟﺮﺑﻚ ﻭﺍﻧﺤﺮ . ﻗﺎﻝ : ﻭﺿﻊ ﺍﻟﻴﻤﻴﻦ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺸﻤﺎﻝ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ .
ﻗﺎﻝ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ﻓﻲ ﺍﻟﺘﺎﺭﻳﺦ ﺍﻟﻜﺒﻴﺮ : ﻭﻗﺎﻝ ﻗﺘﻴﺒﺔ، ﻋﻦ ﺣﻤﻴﺪ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﻋﻦ ﻳﺰﻳﺪ ﺑﻦ ﺃﺑﻲ ﺍﻟﺠﻌﺪ ﻋﻦ ﻋﺎﺻﻢ ﺍﻟﺠﺤﺪﺭﻱ ﻋﻦ ﻋﻘﺒﺔ ﻣﻦ ﺃﺻﺤﺎﺏ ﻋﻠﻲ ﻋﻦ ﻋﻠﻲ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ : ﻭﺿﻌﻬﺎ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻜﺮﺳﻮﻉ .
-তাফসীর তবারী (সূরাতুল কাউছার) ১২/৭২১-৭২২; আততারীখুল কাবীর, বুখারী ৬/৪৩৭; সুনানে বায়হাকী ২/২৯
শায়খ আলবানী মতনের (বক্তব্যের) ইযতিরাব অস্বীকার করেছেন এবং ﻋﻠﻰ ﺻﺪﺭﻩ রেওয়ায়েতকে অগ্রগণ্য বলেছেন। তার এই প্রয়াস যথার্থ নয়। কারণ তিনি শুধু হাম্মাদ ইবনে সালামার রেওয়ায়েতের ইখতিলাফ ও ভিন্নতা উল্লেখ করে মুসা ইবনে ইসমাইলের বর্ণনাকে ‘গরীব’ আখ্যায়িত করেছেন। পক্ষান্তরে ওকী ইবনুল জাররাহ, মুহাম্মাদ ইবনে রবীআ ও হুমাইদ ইবনে আবদুর রহমানের সূত্রে বর্ণিত ইয়াযীদ ইবনে যিয়াদের রেওয়ায়েত, যেগুলোতে ﻋﻠﻰ ﺻﺪﺭﻩ নেই, সম্পূর্ণ এড়িয়ে গেছেন। বলাবাহুল্য, এভাবে মূল মতনের ইযতিরাবহীনতা প্রমাণ হয় না। তাহকীক ও গবেষণার ক্ষেত্রে এ জাতীয় কর্ম আপত্তিমুক্ত নয়।
হাম্মাদ ইবনে সালামা রাহ.-এর রেওয়ায়েতে ﻋﻠﻰ ﺻﺪﺭﻩ ‘বুকের উপর’ কথার সমর্থনে আরেকটি রেওয়ায়েত পেশ করা হয়। কিন্তু তা সঠিক নয়। কারণ : এক. ঐ রেওয়ায়েতে ﻋﻠﻰ ﺻﺪﺭﻩ ‘বুকের উপর’ শব্দই নেই। তাতে আছে ﻓﻮﻕ ﺍﻟﺴﺮﺓ নাভীর উপর।
দুই. ঐ রেওয়ায়েতের অগ্রগণ্য বর্ণনায় ﻓﻮﻕ ﺍﻟﺴﺮﺓ শব্দটিও নেই।
বর্ণনাটি এই-
গযওয়ান ইবনে জারীর আদদাববী রাহ. তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, ‘আলী রা. যখন নামাযে দাঁড়াতেন তখন তার ডান হাত কব্জির উপর রাখতেন। কাপড় গোছানো বা শরীর চুলকানোর প্রয়োজন না হলে রুকু পর্যন্ত এভাবেই থাকতেন।’ সনদসহ রেওয়ায়েতটির আরবী পাঠ এই-
ﺣﺪﺛﻨﺎ ﻭﻛﻴﻊ ﻗﺎﻝ : ﺣﺪﺛﻨﺎ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺴﻼﻡ ﺑﻦ ﺷﺪﺍﺩ ﺍﻟﺠﺮﻳﺮﻱ ﺃﺑﻮ ﻃﺎﻟﻮﺕ، ﻋﻦ ﻏﺰﻭﺍﻥ ﺑﻦ ﺟﺮﻳﺮ ﺍﻟﻀﺒﻲ، ﻋﻦ ﺃﺑﻴﻪ ﻗﺎﻝ : ﻛﺎﻥ ﻋﻠﻲ ﺇﺫﺍ ﻗﺎﻡ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻭﺿﻊ ﻳﻤﻴﻨﻪ ﻋﻠﻰ ﺭﺳﻐﻪ، ﻓﻼ ﻳﺰﺍﻝ ﻛﺬﻟﻚ ﺣﺘﻰ ﻳﺮﻛﻊ ﻣﺘﻰ ﻣﺎ ﻳﺮﻛﻊ، ﺇﻻ ﺃﻥ ﻳﺼﻠﺢ ﺛﻮﺑﻪ ﺃﻭ ﻳﺤﻚ ﺟﺴﺪﻩ .
-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৩/৩২২, হাদীস : ৩৯৬১
ইমাম বায়হাকী রাহ.ও এই হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তার সনদে এই হাদীসের রাবী জারীর আদাদাববী রাহ. সম্পর্কে আছে যে, ‘তিনি ছিলেন হযরত আলী রা.-এর সার্বক্ষণিক সহচর।’
বায়হাকী আরো বলেন, ‘এই হাদীসের সনদ হাসান।’
বায়হাকীর বর্ণনার সনদসহ আরবী পাঠ এই-
... ﺛﻨﺎ ﻣﺴﻠﻢ ﺑﻦ ﺇﺑﺮﺍﻫﻴﻢ ﺛﻨﺎ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺴﻼﻡ ﺑﻦ ﺃﺑﻲ ﺣﺎﺯﻡ ﺛﻨﺎ ﻏﺰﻭﺍﻥ ﺑﻦ ﺟﺮﻳﺮ ﻋﻦ ﺃﺑﻴﻪ ﺃﻧﻪ ـ ﻭﻛﺎﻥ ﺷﺪﻳﺪ ﺍﻟﻠﺰﻭﻡ ﻟﻌﻠﻲ ﺑﻦ ﺃﺑﻲ ﻃﺎﻟﺐ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ـ ﻗﺎﻝ : ﻛﺎﻥ ﻋﻠﻲ ﺇﺫﺍ ﻗﺎﻡ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻓﻜﺒﺮ ﺿﺮﺏ ﺑﻴﺪﻩ ﺍﻟﻴﻤﻨﻰ ﻋﻠﻰ ﺭﺳﻐﻪ ﺍﻷﻳﺴﺮ، ﻓﻼ ﻳﺰﺍﻝ ﻛﺬﻟﻚ ﺣﺘﻰ ﻳﺮﻛﻊ، ﺇﻻ ﺃﻥ ﻳﺤﻚ ﺟﻠﺪﺍ ﺃﻭ ﻳﺼﻠﺢ ﺛﻮﺑﻪ، ... ﻫﺬﺍ ﺇﺳﻨﺎﺩ ﺣﺴﻦ .
-সুনানে কুবরা ২/২৯
ইমাম বুখারী রাহ. এই আছরটি সহীহ বুখারীতে এনেছেন। তবে সনদ উল্লেখ করেননি। তার বর্ণনার আরবী পাঠ এই-
ﻭﻭﺿﻊ ﻋﻠﻲ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻛﻔﻪ ﻋﻠﻰ ﺭﺻﻐﻪ ﺍﻷﻳﺴﺮ ﺇﻻ ﺃﻥ ﻳﺤﻚ ﺟﻠﺪﺍ ﺃﻭ ﻳﺼﻠﺢ ﺛﻮﺑﺎ . ‏( ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﻌﻤﻞ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ . ﺑﺎﺏ ﺍﺳﺘﻌﺎﻧﺔ ﺍﻟﻴﺪ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﺇﺫﺍ ﻛﺎﻥ ﻣﻦ ﺃﻣﺮ ﺍﻟﺼﻼﺓ)
হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী রাহ. সনদসহ মূল পাঠ উদ্ধৃত করেছেন। তার আলোচনার আরবী পাঠ এই-
ﻭﻛﺬﻟﻚ ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ ﺑﻦ ﺇﺑﺮﺍﻫﻴﻢ ﺃﺣﺪ ﻣﺸﺎﺋﺦ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻯ ﻋﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺴﻼﻡ ﺑﻦ ﺃﺑﻲ ﺣﺎﺯﻡ ﻋﻦ ﻏﺰﻭﺍﻥ ﺑﻦ ﺟﺮﻳﺮ ﺍﻟﻀﺒﻲ ﻋﻦ ﺃﺑﻴﻪ ـ ﻭﻛﺎﻥ ﺷﺪﻳﺪ ﺍﻟﻠﺰﻭﻡ ﻟﻌﻠﻲ ﺑﻦ ﺃﺑﻲ ﻃﺎﻟﺐ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ـ ﻗﺎﻝ : ﻛﺎﻥ ﻋﻠﻲ ﺇﺫﺍ ﻗﺎﻡ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻓﻜﺒﺮ ﺿﺮﺏ ﺑﻴﺪﻩ ﺍﻟﻴﻤﻨﻰ ﻋﻠﻰ ﺭﺻﻐﻪ ﺍﻷﻳﺴﺮ، ﻓﻼ ﻳﺰﺍﻝ ﻛﺬﻟﻚ ﺣﺘﻰ ﻳﺮﻛﻊ، ﺇﻻ ﺃﻥ ﻳﺤﻚ ﺟﻠﺪﺍ ﺃﻭ ﻳﺼﻠﺢ ﺛﻮﺑﺎ، ﻫﻜﺬﺍ ﺭﻭﻳﻨﺎﻩ ﻓﻲ ﺍﻟﺴﻔﻴﻨﺔ ﺍﻟﺠﺮﺍﺋﺪﻳﺔ ﻣﻦ ﻃﺮﻳﻖ ﺍﻟﺴﻠﻔﻲ ﺑﺴﻨﺪﻩ ﺇﻟﻰ ﻣﺴﻠﻢ ﺑﻦ ﺇﺑﺮﺍﻫﻴﻢ .
-ফাতহুল বারী ৩/৮৭
এই বর্ণনাগুলোতে হযরত আলী রা.-এর নামাযে হাত বাঁধার বিবরণ আছে। এখানে কয়েকটি বিষয় লক্ষ্যণীয় :
এক. এই বিবরণ বর্ণনা করেছেন জারীর আদদাববী রাহ., যিনি ছিলেন হযরত আলী রা.-এর সার্বক্ষণিক সহচর।
উপরের নির্ভরযোগ্য একাধিক বর্ণনায় দেখা যাচ্ছে, এই বিবরণে ডান হাত (ডান হাতের পাতা) বাম হাতের কব্জির উপর রাখার কথা আছে। কিন্তু ﻓﻮﻕ ﺍﻟﺴﺮﺓ নাভীর উপরে রাখার কথা নেই।
দুই. ইমাম বুখারী রাহ. সহীহ বুখারীতে এই বর্ণনাটিই (ﺗﻌﻠﻴﻘﺎ )
উল্লেখ করেছেন। সহীহ বুখারীতে উল্লেখিত রেওয়ায়েতে ﻓﻮﻕ ﺍﻟﺴﺮﺓ (নাভীর উপর) শব্দ নেই।
তিন. ইমাম বায়হাকী রাহ. এই রেওয়ায়েতের, অর্থাৎ ﻓﻮﻕ ﺍﻟﺴﺮﺓ বিহীন রেওয়ায়েতের সনদকেই হাসান বলেছেন।
চার. এই রেওয়ায়েতের পরবর্তী বর্ণনাকারী আবদুস সালাম ইবনে আবী হাযিম থেকে একাধিক রাবী এই বিবরণ বর্ণনা করেছেন। এদের মধ্যে ইমাম ওকী ইবনুল জাররাহ ও মুসলিম ইবনে ইবরাহীম (যিনি ইমাম বুখারীর উস্তাদ)-এর বর্ণনায় ﻓﻮﻕ ﺍﻟﺴﺮﺓ ‘নাভীর উপর’ নেই। এটা শুধু পাওয়া যায় আবু বদর শুজা ইবনুল ওয়ালীদের বর্ণনায়, যিনি হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে শক্তিশালী ছিলেন না।
শুজা ইবনুল ওয়ালীদের রেওয়ায়েত সনদসহ তুলে দেওয়া হল-
ﺣﺪﺛﻨﺎ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﻗﺪﺍﻣﺔ ﺑﻦ ﺃﻋﻴﻦ، ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﺑﺪﺭ، ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻃﺎﻟﻮﺕ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺴﻼﻡ، ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﺟﺮﻳﺮ ﺍﻟﻀﺒﻲ، ﻋﻦ ﺃﺑﻴﻪ ﻗﺎﻝ : ﺭﺃﻳﺖ ﻋﻠﻴﺎ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻳﻤﺴﻚ ﺷﻤﺎﻟﻪ ﺑﻴﻤﻴﻨﻪ ﻓﻮﻕ ﺍﻟﺴﺮﺓ،
ﻗﺎﻝ ﺍﻟﻤﺰﻱ : ﻫﺬﺍ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﻓﻲ ﺭﻭﺍﻳﺔ ﺃﺑﻲ ﺍﻟﺤﺴﻦ ﺑﻦ ﺍﻟﻌﺒﺪ، ﻭﺃﺑﻲ ﺳﻌﻴﺪ ﺑﻦ ﺍﻷﻋﺮﺍﺑﻲ ﻭﻏﻴﺮ ﻭﺍﺣﺪ، ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﺩﺍﻭﺩ، ﻭﻟﻢ ﻳﺬﻛﺮﻩ ﺃﺑﻮ ﺍﻟﻘﺎﺳﻢ .
-সুনানে আবু দাউদ ১/৪৯৫, হাদীস : ৭৫৭; তাহকীক শায়খ মুহাম্মাদ আওয়ামা, টীকা
তুহফাতুল আশরাফ ৭/৩৪৯, হাদীস : ১০০৩০
আবু বদর শুজা ইবনুল ওয়ালীদ রাহ. ছিলেন কুফার অন্যতম আবিদ ও নেককার ব্যক্তি। তবে বর্ণনার ক্ষেত্রে তিনি শক্তিশালী ছিলেন না। ইমাম আবু হাতিম রাযী রাহ. তার সম্পর্কে বলেন-
ﻭﻟﻴﻦ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ، ﺷﻴﺦ ﻟﻴﺲ ﺑﺎﻟﻤﺘﻴﻦ، ﻻ ﻳﺤﺘﺞ ﺑﻪ، ﺇﻻ ﺃﻥ ﻋﻨﺪﻩ ﻋﻦ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﻋﻤﺮﻭ ﺃﺣﺎﺩﻳﺚ ﺻﺤﺎﺡ .
অর্থাৎ তিনি শক্তিশালী রাবী নন, তাঁর দ্বারা দলীল দেওয়া যায় না। তবে মুহাম্মাদ ইবনে আমরের সূত্রে তিনি কিছু সহীহ হাদীস বর্ণনা করেন। -মীযানুল ইতিদাল ২/২৪৪
আলোচিত বর্ণনাটি ঐ সহীহ বর্ণনাগুলোর অন্তর্ভুক্ত নয়। কারণ এটা আবু তালূত আবদুস সালাম থেকে তার বর্ণনা।
হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী রাহ. বলেন-
ﺻﺪﻭﻕ ﻭﺭﻉ ﻟﻪ ﺃﻭﻫﺎﻡ
অর্থাৎ তিনি সত্যবাদী, নেককার। তবে বর্ণনায় ভুল-ভ্রান্তি আছে।-তাকরীবুত তাহযীব পৃ. ২৯৮
শায়খ নাসিরুদ্দীন আলবানী রাহ. আবু দাউদের সূত্রে এই রেওয়ায়েতটি উদ্ধৃত করেছেন। তবে সনদ উল্লেখ করেছেন আবু বদর-এর পর থেকে! এরপর বলেছেন, বায়হাকী এই সনদটিকে হাসান বলেছেন! ... এবং বুখারী আলী রা. থেকে তার (?) এই হাদীস দৃঢ়তার সাথে উল্লেখ করেছেন। তার বক্তব্যের আরবী পাঠ এই-
ﻭﻳﺸﻬﺪ ﻟﺮﻭﺍﻳﺔ ﻋﻠﻲ : ﻣﺎ ﺃﺧﺮﺟﻪ ﺃﺑﻮ ﺩﺍﻭﺩ ‏( 1/120 ‏) ﻣﻦ ﻃﺮﻳﻖ ﺃﺑﻲ ﻃﺎﻟﻮﺕ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺴﻼﻡ ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﺟﺮﻳﺮ ﺍﻟﻀﺒﻲ ﻋﻦ ﺃﺑﻴﻪ ﻗﺎﻝ : ﺭﺃﻳﺖ ﻋﻠﻴﺎ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻳﻤﺴﻚ ﺷﻤﺎﻟﻪ ﺑﻴﻤﻴﻨﻪ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺮﺳﻎ ﻓﻮﻕ ﺍﻟﺴﺮﺓ، ﻭﻫﺬﺍ ﺇﺳﻨﺎﺩ ﻗﺎﻝ ﺍﻟﺒﻴﻬﻘﻲ ‏( 2/30 ‏) : ﺣﺴﻦ ... ﻭﻗﺪ ﻋﻠﻖ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ﺣﺪﻳﺜﻪ ﻫﺬﺍ ﻣﻄﻮﻻ ﻓﻲ ﺻﺤﻴﺤﻪ 3/55 ، ﺑﺼﻴﻐﺔ ﺍﻟﺠﺰﻡ ﻋﻦ ﻋﻠﻲ .
-আসলু সিফাতিস সালাহ ১/২১৭-২১৮
অথচ ইমাম বায়হাকী আবু বদর শুজা ইবনুল ওয়ালীদের বর্ণনা সম্পর্কে উপরোক্ত মন্তব্য (হাসান) করেননি। করেছেন মুসলিম ইবনে ইবরাহীমের বর্ণনা সম্পর্কে, যে বর্ণনায় ﻓﻮﻕ ﺍﻟﺴﺮﺓ নেই।
দ্বিতীয়ত ইমাম বুখারীও সহীহ বুখারীতে শুজা ইবনুল ওয়ালীদের বর্ণনা উল্লেখ করেননি। তিনি যে বর্ণনা উল্লেখ করেছেন তাতে ﻓﻮﻕ ﺍﻟﺴﺮﺓ নেই।
গবেষণার ক্ষেত্রে এ জাতীয় কর্মকান্ড গ্রহণযোগ্য কি না তা পাঠক ভেবে দেখবেন।
৪. সুলায়মান ইবনে মুসা-এর সূত্রে একটি মুরসাল রেওয়ায়েত
তাউস রাহ. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ডান হাত বাম হাতের উপর রাখতেন এবং তা বুকের উপর রাখতেন।
সনদসহ রেওয়ায়েতটির আরবী পাঠ এই-
ﻗﺎﻝ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﺃﺑﻮ ﺩﺍﻭﺩ : ﺛﻨﺎ ﺃﺑﻮ ﺗﻮﺑﺔ، ﺛﻨﺎ ﺍﻟﻬﻴﺜﻢ ـ ﻳﻌﻨﻲ : ﺍﺑﻦ ﺣﻤﻴﺪ، ﻋﻦ ﺛﻮﺭ ﻋﻦ ﺳﻠﻴﻤﺎﻥ ﺑﻦ ﻣﻮﺳﻰ ﻋﻦ ﻃﺎﺅﻭﺲ ﻗﺎﻝ : ﻛﺎﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﻀﻊ ﺍﻟﻴﻤﻨﻰ ﻋﻠﻰ ﻳﺪﻩ ﺍﻟﻴﺴﺮﻯ، ﺛﻢ ﻳﺸﺪ ﺑﻴﻨﻬﻤﺎ ﻋﻠﻰ ﺻﺪﺭﻩ، ﻭﻫﻮ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ .
-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৭৫৯; মারাসীলে আবু দাউদ, তুহফাতুল আশরাফ, হাদীস : ১৮৮২৯
তাউস রাহ. পর্যন্ত এ হাদীসের সনদ গ্রহণযোগ্য, যদিও মাঝের তিনজন রাবী সম্পর্কে কিছু আপত্তিও আছে।
এ বর্ণনার রাবী সুলায়মান ইবনে মুসা রাহ. সম্পর্কে ইমামগণ প্রশংসা করেছেন, তবে তার কিছু রেওয়ায়েত ‘মুনকার’ ছিল। এ প্রসঙ্গে ইমাম বুখারী রাহ. তার সমালোচনা করেছেন। ইমাম আবু হাতিম রাযী তার বর্ণনায় কিছু ইযতিরাব ও ইমাম ইবনে আদী রাহ. তার ‘তাফাররুদে’র কথা উল্লেখ করেছেন। দেখুন তাহযীবুল কামাল ২৫৫৪
আরবী পাঠ এই-
ﻗﺎﻝ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ : ﻋﻨﺪﻩ ﻣﻨﺎﻛﻴﺮ، ﻗﺎﻝ ﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻲ : ﺃﺣﺪ ﺍﻟﻔﻘﻬﺎﺀ ﻭﻟﻴﺲ ﺑﺎﻟﻘﻮﻱ ﻓﻲ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ، ﻭﻗﺎﻝ ﺃﺑﻮ ﺣﺎﺗﻢ : ﻣﺤﻠﻪ ﺍﻟﺼﺪﻕ، ﻭﻓﻲ ﺣﺪﻳﺜﻪ ﺑﻌﺾ ﺍﻻﺿﻄﺮﺍﺏ، ﻭﻻ ﺃﻋﻠﻢ ﺃﺣﺪﺍ ﻣﻦ ﺃﺻﺤﺎﺏ ﻣﻜﺤﻮﻝ ﺃﻓﻘﻪ ﻣﻨﻪ ﻭﻻ ﺃﺛﺒﺖ ﻣﻨﻪ، ﻭﻗﺎﻝ ﺍﺑﻦ ﻋﺪﻱ : ﻭﺳﻠﻴﻤﺎﻥ ﺑﻦ ﻣﻮﺳﻰ ﻓﻘﻴﻪ ﺭﺍﻭٍ، ﺣﺪﺙ ﻋﻨﻪ ﺍﻟﺜﻘﺎﺕ ﻣﻦ ﺍﻟﻨﺎﺱ، ﻭﻫﻮ ﺃﺣﺪ ﻋﻠﻤﺎﺀ ﺍﻟﺸﺎﻡ، ﻭﻗﺪ ﺭﻭﻯ ﺃﺣﺎﺩﻳﺚ ﻳﻨﻔﺮﺩ ﺑﻬﺎ ﻳﺮﻭﻳﻬﺎ، ﻻ ﻳﺮﻭﻳﻬﺎ ﻏﻴﺮﻩ، ﻭﻫﻮ ﻋﻨﺪﻱ ﺛﺒﺖ ﺻﺪﻭﻕ .
এছাড়া এ রেওয়ায়েত দুটি মৌলিক কারণে মা’লুল।
এক. রেওয়ায়েতটি মুরসাল এবং এর সমর্থনে অন্য সনদে বর্ণিত কোনো মারফূ হাদীস বা আছর পাওয়া যায় না। ওয়াইল ইবনে হুজর রা.-এর হাদীসের মুয়াম্মাল ইবনে ইসমাইল এর বর্ণনা এবং হুলব রা. এর হাদীসের মুসনাদে আহমদের বর্ণনাকে এর সমর্থনে পেশ করা হয়, কিন্তু ইতিপূর্বে দেখানো হয়েছে যে, এ দুটো বর্ণনা শায ও মুনকার। আর শায, মুনকার রেওয়ায়েত শাহিদ (সমর্থক বর্ণনা) হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়।
দুই. মুসলিম জাহানের কোনো প্রসিদ্ধ ফকীহ ও মুজতাহিদ ইমাম বুকের উপর হাত বাঁধাকে সুন্নাহ বলেছেন এমনটা পাওয়া যায় না। এমনকি শাম অঞ্চলের বিখ্যাত ফকীহদের থেকেও পাওয়া যায় না। অথচ উপরোক্ত মুরসাল রেওয়ায়েতের সবকজন রাবী শাম ও শামের নিকটবর্তী অঞ্চলের এবং অধিকাংশ রাবীরই ফকীহ-পরিচিতি রয়েছে। কিন্তু না শামের ফকীহগণ বুকের উপর হাত বাঁধার ফতোয়া দিয়েছেন, না শামের সাধারণ আলিমগণ এই নিয়মের সাথে পরিচিত ছিলেন। এটি এ রেওয়ায়েতের একটি
‘ইল্লত’ (ত্রুটি), যাকে পরিভাষায় ইল্লতে মান’বিয়্যাহ বা শুযূযে মানবী বলে।
উল্লেখ্য, ইমাম শাফেয়ী রাহ. সম্পর্কে কোনো কোনো কিতাবে বলা হয়েছে যে, তাঁর মাযহাব, বুকের উপা হাত বাঁধা। এই বর্ণনা সঠিক নয়। ইমাম শাফেয়ী রাহ.-এর মাযহাব হচ্ছে বুকের নীচে (নাভীর উপর) হাত বাঁধা।
ইমাম নববী রাহ. বলেন-
ﻭﻳﺠﻌﻠﻬﻤﺎ ﺗﺤﺖ ﺻﺪﺭﻩ ﻭﻓﻮﻕ ﺳﺮﺗﻪ، ﻫﺬﺍ ﻫﻮ ﺍﻟﺼﺤﻴﺢ ﺍﻟﻤﻨﺼﻮﺹ، ﻭﻓﻴﻪ ﻭﺟﻪ ﻣﺸﻬﻮﺭ ﻷﺑﻲ ﺇﺳﺤﺎﻕ ﺍﻟﻤﺮﻭﺯﻱ ﺃﻧﻪ ﻳﺠﻌﻠﻬﻤﺎ ﺗﺤﺖ ﺳﺮﺗﻪ، ﻭﺍﻟﻤﺬﻫﺐ ﺍﻷﻭﻝ .
-আলমাজমু শরহুল মুহাযযাব ৩/২৬৮। আরো দেখুন : আলমিনহাজ
‘আননাজমুল ওয়াহহাজ-এর সাথে মুদ্রিত’ ২/১৮০; আলমাজমূ ৩/২৬৯
সারকথা
রেওয়ায়েতসমূহের পর্যালোচনা থেকে যা পাওয়া গেল তা এই-
১. ওয়াইল ইবনে হুজর রা. থেকে বর্ণিত হাদীসের বিশুদ্ধ বর্ণনায়
ﻋﻠﻰ ﺻﺪﺭﻩ নেই। কারণ সুফিয়ান ছাওরী রাহ. থেকে দু’জন শক্তিশালী রাবী আবদুল্লাহ ইবনুল ওয়ালীদ ও মুহাম্মাদ ইবনে ইউসুফ এবং সুফিয়ান ছাওরীর উস্তাদ আসিম ইবনে কুলাইব থেকে অন্তত ১১জন ইমাম ও ছিকা রাবী এই হাদীসের হাত বাঁধার বিবরণ বর্ণনা করেছেন। তাঁদের কারো বর্ণনায় ﻋﻠﻰ ﺻﺪﺭﻩ নেই। একমাত্র মুয়াম্মাল ইবনে ইসমাঈলের বর্ণনায় এটা পাওয়া যায়, যার বর্ণনার ভুল-ভ্রান্তি সম্পর্কে জারহ-তাদীলের ইমামগণ বিশেষভাবে সাবধান করেছেন। এ কারণে হাদীসশাস্ত্রের মূলনীতি অনুযায়ী তাঁর বর্ণনার অতিরিক্ত অংশটি ‘মুনকার’ ও অগ্রহণযোগ্য।
২. হুলব রা. থেকে বর্ণিত হাদীসের বিশুদ্ধ বর্ণনাতেও ﻋﻠﻰ ﺻﺪﺭﻩ নেই। শুধু মুসনাদে আহমদে ও যেসব কিতাবে মুসনাদে আহমদের সূত্রে হাদীসটি বর্ণনা করা হয়েছে সেইগুলোতেই হাদীসটি
ﻋﻠﻰ ﺻﺪﺭﻩ সহ পাওয়া যায়।
এই হাদীসের অন্যান্য বর্ণনার সাথে তুলনা করলে এমনকি মুসনাদে আহমদের বর্ণনাটিও গভীরভাবে পাঠ করলে প্রতীয়মান হয় এই হাদীসের বিশুদ্ধ বর্ণনায় ﻋﻠﻰ ﺻﺪﺭﻩ নেই।
৩. সূরা কাউসারের তাফসীরে হযরত আলী রা. থেকে যে রেওয়ায়েত বর্ণনা করা হয় তা দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। সনদ-মতন দুদিক থেকেই তা
‘মুযতারিব’। এই হাদীসের ﻋﻠﻰ ﺻﺪﺭﻩ ওয়ালা রেওয়ায়েতটিকে কোনোভাবেই অগ্রগণ্য সাব্যস্ত করা যায় না।
শায়খ আলবানী সনদের ইযতিরাব স্বীকার করেছেন, কিন্তু মতনের ইযতিবাব খন্ডন করতে গিয়ে এমন কিছু কাজ করেছেন, যা দুঃখজনক।
৪. সুলায়মান ইবনে মুসার সূত্রে বর্ণিত যে মুরসাল রেওয়ায়েতটি উদ্ধৃত করা হয়, তাউস রাহ. পর্যন্ত এর সনদ মোটামুটি গ্রহণযোগ্য হলেও তা অন্তত দুটো কারণে
‘মা’লূল’। সুতরাং তা দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়।
ঈমান-আকাইদ নামায-সালাত
তাহারাত রমযান প্রসঙ্গ
হজ্জ্ব যাকাত
মুয়ামালাত-লেনদেন
তাসাওউফ-আত্মশুদ্ধি
ইসলামী অর্থনীতি
দাওয়াত ও তাবলীগ
শেয়ার ব্যবসা শবে বরাত
শবে মিরাজ ঈদ
নারী অধিকার

1 Response to "বুকে হাত বাধার দলিল"

Search This Blog

Bd ILTC. Powered by Blogger.

Blog Archive